বিশ্বের প্রথম ‘নিউক্লিয়ার ফিউশন এনার্জি’ কেনার চুক্তি করেছে প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট। কোম্পানির দাবি, ২০২৮ সালের মধ্যে বাণিজ্যিক মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আছে পরবর্তী প্রজন্মের এই প্রযুক্তির।
আগামী পাঁচ বছরে ৫০ মেগাওয়াটের ‘নিউক্লিয়ার ফিউশন পাওয়ার প্ল্যান্ট’ স্থাপনের লক্ষ্যে মার্কিন ফিউশন গবেষণা কোম্পানি ‘হেলিয়ন এনার্জির সঙ্গে চুক্তি করেছে মাইক্রোসফট। তবে, পরিবেশবান্ধব শক্তির কার্যকর উৎস হয়ে ওঠার আগে এ প্রকল্পকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ পেরোতে হবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’।
“এই যৌথ কার্যক্রম হেলিয়ন ও সামগ্রিকভাবে ফিউশন শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।” --বলেন হেলিয়নের প্রধান নির্বাহী ডেভিড কার্টলি।
"আমাদের এখনও অনেক কাজ বাকি। তবে, বিশ্বের প্রথম ফিউশন শক্তি সরবরাহে আমরা নিজেদের সক্ষমতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।"
সূর্যে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়ার অনুকরণ করে ‘প্রায় সীমাহীন’ শক্তি তৈরির সম্ভাবনা দেখায় নিউক্লিয়ার ফিউশন। আর এটি পরিবেশবান্ধব শক্তির ‘সবচেয়ে ভালো উৎস’ হিসেবে বিবেচিত, কারণ, এটি উৎপাদনে কোনো জীবাশ্ব জালানির প্রয়োজন পড়ে না।
এতে কোনো ক্ষতিকারক বর্জ্যও জমা হয় না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তি নিয়ে বেশ কিছু বড় অগ্রগতি দেখিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে গত বছর ক্যালিফোর্নিয়ার ‘লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি (এলএলএনএল)’-এর গবেষকদের দেওয়া বিশ্বের প্রথম ‘ফিউশন ইগনিশন’ প্রযুক্তির ঘোষণা।
যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানী মন্ত্রী জেনিফার গ্রাহাম বলেন, এর মানে পারমাণবিক ফিউশন ব্যবহার করে তারা প্রথমবার কোনো শক্তি অর্জনে এগিয়ে রয়েছে, যা ‘২১ শতকের অন্যতম চমকপ্রদ বৈজ্ঞানিক কৃতিত্ব’ হিসেবে বিবেচিত।
বিজ্ঞানীরা বলেন, এই প্রক্রিয়ার পরিমাপক ব্যবস্থা তুলনামূলক জটিল ও খরচ সাপেক্ষ হওয়ায় বাণিজ্যিক নিউক্লিয়ার ফিউশন সুবিধা চালু হতে আরও এক দশক সময় লাগতে পারে।
মাইক্রোসফটের দাবি, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেক সময়ের মধ্যেই অর্জন করা যাবে। আর এটি ২০২০ সালে কোম্পানির করা ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বনমুক্ত হওয়ার অঙ্গীকারের সর্বশেষ পর্যায়কে চিহ্নিত করে।
এই লক্ষ্য অর্জিত হলে বিশ্বের প্রথম ‘নির্গমনের চেয়ে বেশি কার্বন অপসারণ করা’ শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানি হয়ে উঠবে মাইক্রোসফট। আর ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কার্বন নিঃসরণ করা কোম্পানিটি নিজেদের কাছ থেকে উৎপাদিত সকল কার্বন সরিয়ে ফেলার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
“আমরা আশাবাদী, বিশ্বকে পরিবেশবান্ধব শক্তিতে রূপান্তরে সহায়ক হিসেবে ফিউশন শক্তি গুরুত্বপূর্ণ এক প্রযুক্তি হতে পারে।” --বলেন মাইক্রোসফটের প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিথ।
“হেলিয়নের ঘোষণা আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশবান্ধব শক্তির লক্ষ্যমাত্রাকে সমর্থন করে। বিভিন্ন গ্রিডে আরও দ্রুত তুলনামূলক পরিবেশবান্ধব শক্তি আনার উদ্দেশ্যে নতুন ও দক্ষ পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করে এই খাতের বাজারকেও এগিয়ে নিয়ে যাবে এটি।”