আগের প্রজন্মের তুলনায় বর্তমান সময়ের বিভিন্ন স্টারলিংক স্যাটেলাইট থেকে ৩০ গুণ বেশি শক্তিশালী সংকেত আসছে, যা রেডিও টেলিস্কোপের কাজে বাধা দিচ্ছে।
Published : 21 Sep 2024, 06:02 PM
রাতের আকাশকে হুমকির মুখে ফেলছে ইলন মাস্কের স্টারলিংক স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক বা কৃত্রিম উপগ্রহের সম্প্রসারণ– সম্প্রতি এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব কৃত্রিম উপগ্রহ কেবল পৃথিবীর কক্ষপথকেই বিশৃঙ্খল করছে না, বরং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক পর্যবেক্ষণেও ধারাবাহিকভাবে হস্তক্ষেপ করে চলেছে।
‘নেদারল্যান্ডস ইনস্টিটিউট ফর রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি (অ্যাস্ট্রোন)’ অনুসারে, শক্তিশালী সংকেত আসছে মাস্কের মালিকানাধীন কোম্পানি স্পেসএক্স-এর তৈরি নতুন প্রজন্মের বিভিন্ন স্টারলিংক স্যাটেলাইট থেকে, যার ফলে ব্যাহত হচ্ছে বিভিন্ন রেডিও টেলিস্কোপের স্বাভাবিক কার্যকলাপ। এসব কৃত্রিম উপগ্রহ অনেক হাই-ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে, যার ফলে বাধার মুখে পড়ছে মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত সংবেদনশীল বিভিন্ন রেডিও টুল।
“এইসব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সঙ্গে সঙ্গে আমরা আকাশের আরও বেশি অংশ হারাচ্ছি,” বলেন ‘অ্যাস্ট্রোন’-এর পরিচালক জেসিকা ডেম্পসি। তিনি ও তার দলের করা এ গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’-এ।
গবেষণায় দেখা গেছে, এর আগের প্রজন্মের তুলনায় বর্তমান সময়ের বিভিন্ন স্টারলিংক স্যাটেলাইট থেকে ৩০ গুণ বেশি শক্তিশালী সংকেত আসছে, যা রেডিও টেলিস্কোপের কাজে বাধা দিচ্ছে।
গবেষণা অনুসারে, এমনকি ‘ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন’-এর সুপারিশ করা মাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে এই সীমা, যা মহাকাশ গবেষণায় দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট কিউরিওসমস।
প্রচলিত অপটিক্যাল টেলিস্কোপ ছাড়াও আমাদের নাগালের বাইরের মহাবিশ্ব গবেষণার জন্য প্রয়োজন অ্যাস্ট্রোনের ‘লো-ফ্রিকোয়েন্সি অ্যারে (এলওএফএআর)’-এর মতো বিভিন্ন রেডিও টেলিস্কোপ।
ব্ল্যাক হোল থেকে নির্গত বিভিন্ন জেটের মতো ঘটনা খুঁজে দেখতে, প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন ছায়াপথ ও এক্সোপ্ল্যানেট নিয়ে গবেষণা করতে বিজ্ঞানীদের সহায়তা করে এসব রেডিও টেলিস্কোপের বিভিন্ন যন্ত্র। তবে এসব রেডিও টেলিস্কোপের কাজকে জটিল করে তুলছে স্টারলিংক স্যাটেলাইটের বাড়তি উপস্থিতি।
এ গবেষণার প্রধান লেখক সিস বাসা বলেছেন, তাদের পর্যবেক্ষণ করা ক্ষীণ জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিভিন্ন উৎসের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল স্টারলিংক উপগ্রহ থেকে আসা বিকিরণ।
“সাধারণত আমরা যা শনাক্ত করি তার চেয়ে প্রায় ১০ মিলিয়ন গুণ বেশি উজ্জ্বল স্টারলিংক থেকে নির্গত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ। এ যেন খালি চোখে দৃশ্যমান ক্ষীণ নক্ষত্রকে পূর্ণিমার চাঁদের উজ্জ্বলতার সঙ্গে তুলনা করার মতো।”
২০২৩ সালের গোড়ার দিকে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করা শুরু করে স্টারলিংকের দ্বিতীয় প্রজন্মের স্যাটেলাইট। উৎক্ষেপণের আগেও এ নিয়ে স্পেসএক্সের কাছে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তবে এসব উদ্বেগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমাধান করা হয়নি।
এখন প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৪০টি দ্বিতীয় প্রজন্মের স্টারলিংক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করছে স্পেসএক্স, যার গতি কমার কোনো লক্ষণ নেই।
“আর এসব স্যাটেলাইটের বেশির ভাগ পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানোর ফলে সমস্যাটি কেবল আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।”