বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক সম্পৃক্ততা কমিয়ে আনা আদতে নেতিবাচক কিছু নয়। বরং, এটি বয়স্ক প্রাণীদের সংক্রমণ সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি এড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক।
Published : 31 Oct 2024, 05:34 PM
বিভিন্ন প্রাণী বুড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা অনেকটা মানুষের মতোই নিজেদের আচরণে পরিবর্তন আনে, এমনই উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়।
প্রাণীদের সামাজিক যোগাযোগে বার্ধক্য কীভাবে প্রভাব ফেলে, সেটি খতিয়ে দেখেছে ১৬টি গবেষণার এক সংকলন, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি পরিচালিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ লিডস’ থেকে।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ফিলোসফিকাল ট্রানজিশনস অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি’র বিশেষ এই প্রতিবেদনে গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেন, বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে নিজেদের সামজিক অভ্যাসগুলো মানিয়ে নেয় ও তাদের স্বাস্থ্য ও টিকে থাকার ক্ষেত্রে বার্ধক্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
এর মধ্যে লাল হরিণের ওপর পরিচালিত এক গবেষণা অনুসারে, কোনো হরিণীর বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সামাজিক সম্পৃক্ততা কমে আসে।
গবেষকদের অনুমান, এইসব বয়স্ক হরিণ নিজের প্রতিযোগিতা কমিয়ে আনার ও পরনির্ভরশীল হওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। স্কটিশ দ্বীপ ‘রাম’-এ বন্য হরিণ সংখ্যা নিয়ে পরিচালিত দীর্ঘমেয়াদী এক প্রকল্পের ডেটা ব্যবহৃত হয়েছে এ গবেষণায়।
ইউনিভার্সিটি অফ লিডস-এর গবেষক ড. জশ ফার্থ, যিনি এ বিশেষ গবেষণা সম্পাদনায় সাহায্য করেছেন, তার ব্যাখ্যানুসারে, ‘সোশাল এজিং’ (বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক সম্পৃক্ততা কমিয়ে আনা) আদতে নেতিবাচক কিছু না। বরং এটি বয়স্ক প্রাণীদের সংক্রমণ সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি এড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
তিনি একে তুলনা করেছেন কোভিড মহামারির সময় নিরাপদ থাকতে বুড়ো মানুষদের সামাজিক সম্পৃক্ততা কমিয়ে আনার সঙ্গে।
আরেক গবেষণা খতিয়ে দেখেছে চড়ুইয়ের সামাজিক আচরণের বিষয়টি।
চড়ুইয়ের বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সামাজিকতার প্রবণতা কমে আসে। অন্যদের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব কমে আসার সম্ভাব্য কারণ নিজ সঙ্গীর মৃত্যু বা বুড়ো চড়ুইদের নতুন কারও সঙ্গে সংযোগ তৈরির ক্ষেত্রে যে জটিলতা দেখা যায়, সে বিষয়টি।
গবেষণার অন্যতম গবেষক ড. জেমি ডানিং ব্যাখ্যা করেছেন, প্রজননের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে তরুণ চড়ুইরা সামাজিক সম্পৃক্ততার ওপর নির্ভর করে থাকে, তবে তা হয়ত বুড়ো পাখিদের বেলায় ততটা গুরুত্ববহ নয়।
বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর বার্ধক্য এবং সামাজিক পরিবর্তন কীভাবে ঘটে, গোটা বিশ্বের গবেষকদের নিয়ে কাজ করা এ বিশেষ প্রতিবেদনে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়েছে।
আয়ারল্যান্ডের ‘ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিন’র গবেষক ড. গ্রেগ অ্যালবারি’র মতে, নিজস্ব সমাজে বিভিন্ন প্রাণীর বয়স কীভাবে বাড়ে, তা মানুষের বার্ধক্য সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে।
এ ছাড়া, গবেষণায় বিভিন্ন পোকামাকড়ের সোশাল এজিংয়ের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হয়েছে, বিশেষ করে ‘ফুট ফ্লাই’ মাছির। ইউনিভার্সিটি অফ লিডস-এর অধ্যাপক আমান্ডা ব্রেটম্যান বলছেন, দূর্বল সামাজিক পরিবেশ প্রাণীদের স্বাস্থ্য ও আয়ুর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তার গবেষণা দলের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সামাজিক পরিবেশ সাধারণ পোকামাকড়ের ওপরও প্রভাব ফেলে।
তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, জীবনে বার্ধক্য কীভাবে আসবে তার ওপর পোকার লিঙ্গ, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর সামাজিক পরিবেশ ও এর সামাজিক সঙ্গীর বয়স সবগুলোই বড় ভূমিকা রাখে।
বিভিন্ন প্রাণী ও মানুষ কীভাবে বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিকভাবে খাপ খাইয়ে নেয়, তা কীভাবে ঝুঁকি এড়ানো ও স্বাস্থ্য সমুন্নত রাখা উভয় ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে, এইসব গবেষণার ফলাফল ওই মিলগুলো তুলে ধরে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।