দুই বছর ধরে বিভিন্ন এক্সোপ্ল্যানেট পর্যবেক্ষণ করছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ, যা এরইমধ্যে বিজ্ঞানীদের এ সংশ্লিষ্ট ধারণা খতিয়ে দেখতে সহায়তা করছে।
Published : 03 Sep 2024, 02:30 PM
ধারণার চেয়েও বেশি পানি থাকতে পারে বিভিন্ন গ্রহে। তবে এর বেশিরভাগই গ্রহপৃষ্ঠের বদলে এদের গভীরে লুকানো থাকে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
দূরবর্তী বিভিন্ন গ্রহের বাসযোগ্যতা সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন করতে পারে সাম্প্রতিক এই আবিষ্কার।
প্রচলিতভাবে বিভিন্ন এক্সোপ্ল্যানেট (সৌরজগতের বাইরের গ্রহ) নিয়ে গবেষণার জন্য একটি সাধারণ মডেল ব্যবহার করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা ধরেই নিয়েছেন যে, গ্রহের অভ্যন্তরে একটি লোহার কোরসহ পাথরের আচ্ছাদন ও পৃষ্ঠে প্রধানত পানি রয়েছে, অনেকটা পৃথিবীর মতো।
তবে ‘ইটিএইচ জুরিখ’-এর অধ্যাপক ক্যারোলিন ডর্নের মতে, এই মডেলটি বেশ পুরনো। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, বিভিন্ন গ্রহ অনেক বেশি জটিল ও বেশিরভাগ পানি এদের অভ্যন্তরে এবং যথেষ্ট গভীরে থাকতে পারে।
গ্রহের অভ্যন্তরে কীভাবে পানি বণ্টন হয় তা খতিয়ে দেখতে ‘প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি’র বিশেষজ্ঞসহ গবেষণা দলটি পদার্থবিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে এক মডেলভিত্তিক গণনা করেছেন।
গবেষকরা দেখেছেন, বিশেষ করে বড় আকারের বিভিন্ন গ্রহে পানি লোহার কোরের মধ্যে ডুবে যায়, যা ফেলে গ্রহের উপরিভাগেকম পানি থাকে।
বিভিন্ন গ্রহ তরুণ অবস্থায় প্রায়ই গলিত পাথরের মহাসাগরে আবৃত থাকে, যাকে বলা হয় ম্যাগমা। এই ম্যাগমায় পানি ভালভাবে দ্রবীভূত হয়ে যায় ও কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো বিভিন্ন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে চলে যায়।
গ্রহটি ঠাণ্ডা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রবীভূত পানির ম্যাগমা’তে থাকা লোহার বিভিন্ন ফোঁটা গ্রহের মূল গঠনে ডুবে যায়। গ্রহের কেন্দ্রে প্রচণ্ড চাপের ফলে পানি তার অণুর চেহারায় না থেকে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনে বিভক্ত হয়ে যায়।
পৃথিবীর পানির বিষয়বস্তু গবেষণা থেকে এসেছে এ নতুন ধারণাটি। দেখা যাচ্ছে, পৃথিবী পৃষ্ঠের পানি গ্রহের মোট পানির একটি ছোট ভগ্নাংশকে প্রতিনিধিত্ব করে। এর বেশিরভাগ পানিই লুকিয়ে থাকতে পারে এর অভ্যন্তরে।
আর এটি পৃথিবীর ক্ষেত্রে সত্যি হলে অন্যান্য গ্রহের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।
গবেষণার এসব অনুসন্ধান থেকে ইঙ্গিত মেলে, বিভিন্ন এক্সোপ্ল্যানেটে পানির পরিমাণ অনুমান করার বর্তমান বিভিন্ন পদ্ধতি ভুল হতে পারে এবং সত্যিকার পরিমাণ দশগুণ পর্যন্ত হতে পারে। অন্যান্য গ্রহে প্রাণের সন্ধানে এর বড় প্রভাব রয়েছে। যদি কোনো গ্রহের বায়ুমণ্ডলে পানির সন্ধান পাওয়া যায় তবে গ্রহটির ভেতরে আরও অনেক বেশি পানি থাকতে পারে।
দুই বছর ধরে বিভিন্ন এক্সোপ্ল্যানেট পর্যবেক্ষণ করছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ, যা এরইমধ্যে বিজ্ঞানীদের এ সংশ্লিষ্ট ধারণা খতিয়ে দেখতে সহায়তা করছে।
বিজ্ঞানীদের আগ্রহের গ্রহগুলোর মধ্যে একটি ‘টিওআই-২৭০ডি’, এর গলিত অভ্যন্তর ও এর বায়ুমণ্ডলের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার লক্ষণ দেখা গেছে। আরেকটি গ্রহ ‘কে২-১৮বি’। বিজ্ঞানীদের বলছেন, এতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ যুগান্তকারী গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার অ্যাস্ট্রোনমি’তে।