Published : 28 Dec 2024, 04:58 PM
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশের মানুষের আরও সতর্ক ও চিন্তাশীল হওয়া উচিত বলে ধারণা প্রকাশ করেছেন ‘এআই গডফাদার’ নামে পরিচিত ব্রিটিশ কানাডিয়ান কম্পিউটার বিজ্ঞানী জিওফ্রে হিনটন।
একে ‘সম্ভবত’ খুব বিপজ্জনক প্রযুক্তি বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।
এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জেতা অধ্যাপক হিনটন বলেছেন, এআই খাতের বিবর্তনের গতি তার প্রত্যাশার তুলনায় অনেক দ্রুত। পাশাপাশি, নিরাপত্তা বিষয়ে প্রয়োজনীয় গবেষণা শেষ করার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়নি বলেও মত প্রকাশ করেছেন তিনি।
অধ্যপক হিনটনের কাজ মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপন করেছে যা কম্পিউটারকে মানুষের বুদ্ধিমত্তা অনুকরণ করতে দেয়। তবে, তার সম্প্রতিক প্রচেষ্টা ছিল নিরাপদ এআই-এর পক্ষে।
২০২৩ সালে গুগল থেকে পদত্যাগের পর এ অধ্যাপক শিরোনাম হয়েছিলেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
এআই নিয়ে তার প্রাথমিক কাজ শুরু করার পর এ খাতের বিকাশ কতদূর যাবে সে বিষয়ে তার ভাবনা নিয়ে বিবিসি রেডিও ৪’র টুডে অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি ভাবিনি আমরা এত দ্রুত বর্তমান পরিস্থিতিতে পৌঁছে যাব। তবে, ভেবেছিলাম ভবিষ্যতের কোনো এক সময়ে এমনটা ঘটবে।”
“বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছি বলেই অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা ভবিষ্যতে, সম্ভবত আগামী ২০ বছরের মধ্যে, আমরা এমন এআই তৈরি করতে যাচ্ছি না মানুষে চেয়েও বেশি স্মার্ট।”
“বিষয়টি বেশ ভয়ংকর।”
“আমি বিষয়টি এভাবে ভাবতে পছন্দ করি, একটি শিশু ও নিজেকে কল্পনা করুন। একটা সময় আমরা শিশু হব এবং তারা প্রাপ্তবয়স্ক।”
“শিল্প বিপ্লবের পর মানুষের শক্তি অপ্রাসঙ্গকি হয়ে গিয়েছিল কারণ মেশিন ছিল বেশি শক্তিশালী। কেউ গর্ত খুঁড়তে চাইলে মেশিন দিয়েই কাজ করছিল।”
“বর্তমানে আমরা যা পেয়েছি তা মানুষের বুদ্ধিকে প্রতিস্থাপন করছে। ফলে, এক সময় মানুষের বুদ্ধিমত্তা সবার শীর্ষে থাকবে না, শীর্ষে থাকবে মেশিন।”
এখন থেকে ১০ বা ২০ বছরের মধ্যে মানুষের জীবন কেমন হতে পারে জানতে চাওয়া হলে অধ্যাপক হিন্টন বলেন, “এটি নির্ভর করছে আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা এ প্রযুক্তির বিষয়ে কেমন পদক্ষেপ নিচ্ছে তার ওপর।”
“বর্তমানে আমার সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হল সম্ভাব্য বিপজ্জনক এ প্রযুক্তি বিকাশে খুব সতর্ক ও খুব চিন্তাশীল হওয়া দরকার।”
“এটি স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিস্ময়কর সব প্রভাব ফেলতে চলেছে। এ ছাড়াও অন্যান্য শিল্পের বিভিন্ন বিষয়কে এটি আরও দক্ষ করে তুলবে। তবে, আমাদের এআই বিকাশের বিষয়ে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।”
“মানুষ যেন এ প্রযুক্তির অপব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে আমাদের প্রবিধান দরকার। আর বর্তমানে আমাদের এমন কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা আছে বলে আমার মনে হয় না।”
এআই সমাজের জন্য খারাপ হবে যদি অনেক মানুষ চাকরি হারায় এবং সব সুবিধা ধনী ব্যক্তিদের কাছে যায়, এমন ভয় কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন নোবেলজয়ী এ অধ্যাপক।
“ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে বড় ব্যবধান থাকা সমাজের জন্য খুবই খারাপ।” – বলেন তিনি।
“এ জিনিস আমাদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান। শিল্প বিপ্লবে এমন কোনো সুযোগ ছিল না যে, কেবল শক্তিশালী বলেই যন্ত্রগুলো মানুষের কাছ থেকে সব কেড়ে নেবে। আমরা তখনও নিয়ন্ত্রণে ছিলাম কারণ আমাদের বুদ্ধিমত্তা ছিল।”
“অথচ নতুন এ প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলতে পারে এমন হুমকি রয়েছে। এটিই সবচেয়ে বড় পার্থক্য।”