পৃথিবী থেকে ৬২ কোটি ৮০ লাখ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইউরোপা আকারে আমাদের চাঁদের চেয়ে কিছুটা বড়। তবে, এদের মিল বলতে এতটুকুই।
Published : 14 Oct 2024, 05:51 PM
এলিয়েন বা ভিনগ্রহে জীবনের সংকেত খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করছে নাসার এক মহাকাশযান।
সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা পাঁচ মিনিটে স্পেসএক্সর ফ্যালকন হেভি উৎক্ষেপণের মাধ্যমে এ যাত্রা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
এর গন্তব্য ‘ইউরোপা’, যা বৃহস্পতি গ্রহের এক রহস্যময় চাঁদ। আর এর বরফে ঢাকা পৃষ্ঠের নীচে এমন এক বিশাল সমুদ্র লুকিয়ে রয়েছে, যার আয়তন ভূপৃষ্ঠে থাকা পানির দ্বিগুণ।
ইউরোপা ক্লিপার মহাকাশযানটি গত বছরের অপর এক ইউরোপীয় মিশনের পর শুরু হলেও এটি ওই মহাকাশযানকে অতিক্রম করে আগেই ইউরোপায় পৌঁছাবে।
তবে ২০৩০ সালের আগে এমনটি ঘটার সম্ভাবনা কম। আর, এ মহাকাশযানটি যে বিষয়ে অনুসন্ধান চালাবে, তা হয়ত সৌরজগতে জীবনধারণ সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণায় বড় পরিবর্তন আনবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
আমাদের চাঁদের চেয়েও পাঁচ গুণ উজ্জ্বল এক চাঁদ
ইউরোপা ক্লিপার নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে পরিকল্পনা চললেও এ সপ্তাহে ফ্লোরিডায় হারিকেন মিলটন আঘাত হানার পর শেষ মুহুর্তে এর উৎক্ষেপণ পিছিয়ে যায়।
মহাকাশযানটি বেশ কয়েক দিন হ্যাঙ্গারেই ছিল। তবে, কেপ ক্যানাভেরালের লঞ্চপ্যাডে সম্ভাব্য ক্ষতির খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখার পর প্রকৌশলীরা ১৪ অক্টোবর স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ছয় মিনিটে এর উৎক্ষেপণের সবুজ সংকেত দিয়েছেন।
“আমরা যদি সূর্য থেকে এতটা দূরে জীবনের খোঁজ পাই, তবে সেটা পৃথিবীতে প্রাণের উৎস থেকে ভিন্ন কিছু একটা হবে,” বলছেন ওপেন ইউনিভার্সিটি’র প্ল্যানেটারি মাইক্রোবায়োলজিস্ট মার্ক ফক্স-পাওয়েল।
“এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, জীবনধারণের ঘটনা আমাদের দুইবার ঘটার মানে দাঁড়ায়, এখানে জীবনধারণের বিষয়টি খুবই সাধারণ।”
পৃথিবী থেকে ৬২ কোটি ৮০ লাখ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইউরোপা আকারে আমাদের চাঁদের চেয়ে কিছুটা বড়। তবে, এদের মিল এতটুকু পর্যন্তই।
এর অবস্থান পৃথিবীর আকাশে হলে, এটি পাঁচ গুন বেশি উজ্জ্বল দেখাত কারণ এর বরফে সূর্যরশ্মির প্রতিফলন বেশি হতো।
এর বরফ পৃষ্ঠ ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীর, যার নীচে থাকতে পারে বিশাল লবণাক্ত সমুদ্র। এমনকি এতে এমন রাসায়নিকও থাকতে পারে, যা হয়ত জীবনধারণে গুরুত্বপূর্ণ কোনো উপাদান।
৭০’র দশকে বিজ্ঞানীরা প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন, ইউরোপায় সম্ভবত জীবনধারণ সম্ভব। অ্যারিজোনায় অবস্থিত এক টেলিস্কোপ দিয়ে ইউরোপায় গবেষকরা বরফ গলা পানি দেখতে পেয়েছিলেন।
ভয়েজার ১ ও ২ মহাকাশযানগুলো এর কাছে থেকে প্রথমবার ছবি তুলেছিল। এর পর ১৯৯৫ সালে নাসার ‘গ্যালিলিও’ স্পেসক্রাফটও ইউরোপার এক পাশের বেশ কিছু রহস্যময় ছবি তুলেছিল। এতে এমন এক পৃষ্ঠ দেখা যায়, যার মধ্যে গাঢ়, লালচে-বাদামী ফাটল রয়েছে। আর এ ফাটলগুলোয় সম্ভবত লবণ এবং সালফারের মতো উপাদান আছে, যা জীবনধারণে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
এর পর জেমস ওয়েব টেলিস্কোপেও এর বিভিন্ন ছবি উঠে এসেছে। ওই চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে ১৬০ কিলোমিটার ওপর দিয়ে বের হওয়া বরফ গলা পানি দেখতে কেমন, তা দেখা গেছে এতে।
তবে, সেইসব মিশনের কোনোটিই ইউরোপার এত কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছাতে পারেনি, যা থেকে এর খুঁটিনাটি বোঝা সম্ভব হয়।