বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরপর রকেটের এসব টুকরা পোল্যান্ডে বিধ্বস্ত হয় ও ইউক্রেনে গিয়েও পড়তে পারে।
Published : 20 Feb 2025, 06:50 PM
চতুর্থবারের মতো স্পেসএক্স রকেটের ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার গ্রিনউইচ মান সময় প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে উত্তর ইউরোপের আকাশ আগুনের লেলিহান শিখার মতো বাতাসে ভেসে আসা এক বস্তুর আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
মালমোর একজন কর্মী সাইমন এরিকসন সুইডেনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমকে বলেছেন, “এমন ঘটনা দেখার পর আমার সঙ্গে সঙ্গে একটি সাই ফাই সিনেমার কথা মনে পড়ে গেলো, যেখানে একদল সেনা আমাকে আক্রমণ করতে চলেছে বনে মনে হচ্ছিলো আমার।”
বিবিসি লিখেছে, স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেটের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পুনরায় ফিরে আসার কারণে আকাশে এমন আতশবাজির মতো ঘটনা ঘটেছে। ডেনমার্ক, সুইডেন ও ইংল্যান্ডে এ ধরনের আতশবাজি দেখা যাওয়ার খবর মিলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরপর রকেটের এসব টুকরা পোল্যান্ডে বিধ্বস্ত হয় ও ইউক্রেনে গিয়েও পড়তে পারে।
স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে পোল্যান্ডের কোমোরনিকিতে নিজের গুদামের পেছনে দেড় মিটার প্রস্থ ও এক মিটার দৈর্ঘ্যের একটি পোড়া ট্যাংক দেখে অবাক হয়ে যান অ্যাডাম বোরুকি। ধারণা করা হচ্ছে, এ ধ্বংসাবশেষের কারণে গুদামের উঠোনে থাকা একটি লাইট নষ্ট হয়েছে।
এ ঘটনার পর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বোরাকি। পুলিশ পোলিশ মহাকাশ সংস্থা ‘পোলসা’র সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত করেছে, এই অজ্ঞাত বস্তুটি আদতে ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্সের তৈরি ফ্যালকন ৯ রকেটের ধ্বংসাবশেষ।
পুলিশের মুখপাত্র আন্দ্রেজ বোরোভিয়াক বলেছেন, “এ বস্তুটি কীভাবে ওই স্থানে গেল তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এতে কারও ক্ষতি হয়নি।”
এদিকে, পোলিশ পুলিশ জানিয়েছে, পোল্যান্ডের উইরি গ্রামের কাছে থাকা এক জঙ্গলেও একই ধরনের ধ্বংসাবশেষের টুকরা মিলেছে।
পোলসা বলেছে, “২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোর ৪:৪৬ থেকে ৪:৪৮ এর মধ্যে পোল্যান্ডের উপর দিয়ে ফ্যালকন ৯ রকেটের দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি অনিয়ন্ত্রিত অবশিষ্টাংশের আছড়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে”।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে মানুষ ও পেলোড পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হয় স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেটটি। এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে পুনরায় ব্যবহার করা যায় রকেটটিকে। ১ ফেব্রুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যান্ডেনবার্গ বিমান বাহিনী ঘাঁটি থেকে রকেটটিকে উৎক্ষেপণ করে স্পেসএক্স।
‘হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি’র জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী ড. জোনাথন ম্যাকডাওয়েল বলেছেন, “এটি নিয়ন্ত্রিতভাবেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ ও প্রশান্ত মহাসাগরে আছড়ে পড়ার কথা ছিল।
“তবে এর ইঞ্জিনটি বিকল হয়ে গেল। আমরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পৃথিবীর কক্ষপথে রকেটিকে ঘুরতে দেখছি। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে এর অনিয়ন্ত্রিতভাবে ফিরে আসার বিষয়টিই আমরা ধারণা করছিলাম। আর এটিকেই মানুষ আকাশে জ্বলতে দেখেছে।
রকেট ও স্যাটেলাইট থেকে মহাকাশযানের ধ্বংসাবশেষ মাসে বেশ কয়েকবার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। সাধারণত মহাকাশযানের ধ্বংসাবশেষের এসব টুকরা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষে পুরোপুরি পুড়ে যায়। তবে বড় আকারের টুকরা পৃথিবীতে পড়তে পারে।
ড. ম্যাকডাওয়েলের বলেছেন, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বড় রকেটের টুকরার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশের বিষয়টি বিরল ও বিপজ্জনক হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
“এখনও পর্যন্ত এমন কোনো গুরুত্বর ঘটনা ঘটেনি ও কেউ আহত হয়নি। তবে আমাদের এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে,” বলেন ম্যাকডাওয়েল।
“স্পেসএক্সের ফ্যালকন রকেটের এমন আছড়ে পড়ার ঘটনা চতুর্থবার ঘটলো, যা রীতিমতো উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেন মনে হচ্ছে, রকেটের এমন ইঞ্জিন বিকলের সমস্যা আরও সাধারণ বিষয় হয়ে উঠছে।”
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য স্পেসএক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিবিসি।