বুচ ও সুনিতার পৃথিবীতে ফেরার মাধ্যমে এমন এক অভিযানের সমাপ্তি ঘটল, যা এরইমধ্যে বিশ্বের সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
Published : 19 Mar 2025, 10:54 AM
নয় মাসের বেশি সময় ধরে মহাকাশে আটকে থাকার পর অবশেষে পৃথিবীতে ফিরলেন নাসার দুই নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন-আইএসএস থেকে যাত্রা করার ১৭ ঘণ্টা পর তাদের স্পেসএক্স ক্যাপসুলটি তীব্র গতিতে আর আগুনে হল্কার মধ্যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে।
পরে চারটি প্যারাশুট খুলে যায়, যা তাদের ফ্লোরিডা উপকূলে নামিয়ে আনে। একঝাঁক ডলফিনকে তাদের ক্যাপসুল ঘিরে ঘুরতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ সময় বুধবার প্রথম প্রহরে একটি উদ্ধারকারী জাহাজ ক্যাপসুলটি পানি থেকে তুলে নেওয়ার পর হ্যাচ খুলে বেরিয়ে আসেন বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস। তারা হাসিমুখে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।
তাদের সঙ্গী নাসার নভোচারী নিক হেগ এবং রুশ মহাকাশচারী আলেকজান্ডার গর্বুনভও তাদের সঙ্গে বেরিয়ে আসেন।
নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক স্টিভ স্টিচ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পৃথিবীতে ফেরা চার নভোচারীর সবাই ভালো আছেন।
বুচ ও সুনিতার পৃথিবীতে ফেরার মাধ্যমে এমন এক অভিযানের সমাপ্তি ঘটল, যা এরইমধ্যে বিশ্বের সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
মহাকাশ বিষয়ক গবেষণার কাজে কেবল আট দিনের জন্য গত বছরের ৫ জুন আইএসএসে গিয়েছিলেন তারা। বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানে ত্রুটি ধরা পড়ায় তাদের স্পেস স্টেশনে থাকার সময় নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়।
বুচ ও সুনিতার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের জুন মাসে। মার্কিন মহাকাশযান নির্মাতা কোম্পানি বোয়িংয়ের তৈরি স্টারলাইনার মহাকাশযানের প্রথম মনুষ্যবাহী পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ ছিল সেটি। তারা ক্রু নাইন মিশনের অংশ হিসেবে মহাকাশে গিয়েছিলেন।
মহাকাশ স্টেশনে যাত্রার সময় ক্যাপসুলটি বেশ কয়েকটি প্রযুক্তিগত সমস্যার মুখে পড়ে ও নভোচারীদের ফিরে আসা অনিশ্চিত হয়ে ওঠে। সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে স্টারলাইনার মহাকাশযানটি খালি অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়।
দীর্ঘ সময় পর নভোচারীদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে শুক্রবার নাসা-স্পেসএক্স-এর যৌথ মিশনে আইএসএসে পাঠানো হয় স্পেসএক্সের ক্রু-১০ মিশনের ফ্যালকন ৯ রকেটটিকে।
নাসার স্পেস অপারেশন মিশন ডিরেক্টরেটের ডেপুটি অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জোয়েল মন্টালবানো বলেন, “ক্রু নাইনকে বাড়ি ফিরতে দেখে দারুণ লাগছে, সুন্দরভাবে তারা অবতরণ করেছে।”
দীর্ঘ সময় স্পেস স্টেশনে আটকে থাকা দুই নভোচারীর প্রশংসা করার পাশাপাশি স্পেসএক্সকে তিনি বর্ণনা করেন ‘চমৎকার পার্টনার’ হিসেবে।
নিয়ম অনুযায়ী এখন চার নভোচারীর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে দেখবেন চিকিৎসকরা। তারপর তারা মিলিত হবেন পরিবারের সঙ্গে।
অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দীর্ঘ হয়ে পড়া এ মিশনের সময়টা ঠিকই কাজে লাগিয়েছেন বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস। মহাকাশ স্টেশনে তারা বিভিন্ন গবেষণা চালিয়েছেন। মহাশূন্যে হেঁটেছেন, যেখানে সুনি একজন নারী নভোচারী হিসেবে সবচেয়ে বেশি সময় মহাকাশ স্টেশনের বাইরে কাটানোর রেকর্ড গড়েছেন।
মিশন শেষে পৃথিবীতে ফিরে তাদের পরিবার আর বন্ধুদের সঙ্গে বড় দিন উদযাপনের কথা ছিল। কিন্তু সেই বড়দিন তাদের কেটেছে স্পেস স্টেশনে। সেখানেই সান্তা ক্যাপ আর রেইনডিয়ার শিং পরে তারা পৃথিবীর জন্য উৎসবের বার্তা পাঠিয়েছেন।
এখন পৃথিবীতে ফেরার পর তাদের টেক্সাসের জনসন স্পেস সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাদের পরীক্ষা করবেন।
বিবিসি লিখেছে, দীর্ঘ মহাকাশ অভিযানে শরীরের ওপর দারুণ প্রভাব পড়ে। হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়, পেশী দুর্বল হয়ে পড়ে, রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয় এবং দৃষ্টিশক্তিও প্রভাবিত হয়।
স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে তাদের দীর্ঘ সময় লাগতে পারে, তাই এখন তাদের যেতে হবে নিয়মিত ব্যায়াম আর নিয়মতান্ত্রিক জীবনের মধ্য দিয়ে।
মহাকাশে থাকাকালে এক সাক্ষাৎকারে বুচ ও সুনি বলেছিলেন, এ মিশন অপ্রত্যাশিতভাবে দীর্ঘ হয়ে গেলেও তারা প্রস্তুত ছিলেন। তবে কিছু বিষয় রয়েছে, যার জন্য তারা বাড়ি ফেরার অপেক্ষা করছেন।
সুনি উইলিয়ামস বলেছিলেন, “আমি আমার পরিবার, আমার কুকুরদের দেখতে মুখিয়ে আছি। আমি আবার সাগরে ডুব দিতে চাই। পৃথিবীতে ফিরে এসে পৃথিবীকে অনুভব করা— এটা সত্যিই চমৎকার হবে।"