অনেকের জন্য এ সপ্তাহের নোবেল পুরস্কার দেখিয়েছে ঐতিহ্যগত একাডেমিয়ার জন্য প্রতিযোগিতা কতটা কঠিন হয়ে উঠছে।
Published : 12 Oct 2024, 04:12 PM
পদার্থবিদ্যা ও রসায়নে এবারের নোবেল প্রাইজ যে গবেষকদের হাতে উঠেছে, বিতর্ক তৈরি হয়েছে তাদের গুগল সংশ্লিষ্টতা নিয়ে।
এআই গবেষণায় গুগলের আধিপত্য এবং কম্পিউটার সায়েন্স খাতে বিভিন্ন অগ্রগতিকে কীভাবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত সে বিষয়টিই এ তর্কের কেন্দ্রে বলে প্রতিবেদনে লিখছে রয়টার্স।
এআই গবেষণায় সামনের সারিতে রয়েছে গুগল। তবে, মাইক্রোসফট সমর্থিত ওপেনএআইয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ও মার্কিন বিচার বিভাগের বিভিন্ন যাছাই-বাছাই মোকাবেলা করে সামলে চলতে হয়েছে এ সার্চ জায়ান্টকে।
বুধবার, গুগলের এআই বিভাগের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডেমিস হাসাবিস, তার সহকর্মী জন জাম্পার ও মার্কিন বায়োকেমিস্ট ডেভিড বেকারকে রসায়নে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রোটিনের জটিল গঠনরহস্য ভেদ করায় এ পুরস্কার পান তারা।
এদিকে, মঙ্গলবার পদার্থবিদ্যায় নোবেল বিজয়ী হিসেবে গুগলের সাবেক গবেষক জেওফ্রে ই হিন্টন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী জন জে হপফিল্ডের নাম ঘোষিত হয়। ‘মেশিন লার্নিং’ বা যন্ত্রকে শেখানোর রাস্তা সহজ করে, এআই প্রযুক্তি উত্থানে সাহায্য করে তাদেরই পূর্বের আবিষ্কার।
কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও জাতিসংঘের এআই বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ডেম ওয়েন্ডি হল রয়টার্সকে বলেছেন, বিজয়ীদের কাজ এ স্বীকৃতির দাবিদার হলেও গণিত বা কম্পিউটার সায়েন্সে নোবেল পুরস্কার না থাকায় বিষয়টি লেজেগোবরে হয়ে গেছে।
“নোবেল পুরস্কারের কমিটি এই এআইয়ের বিষয়গুলো হাতছাড়া করতে চায় না, তাই জিওফ্রেকে পদার্থবিজ্ঞানের দিকে ঠেলে দিতে হয়েছ।” – বলেন তিনি।
“আমি যুক্তি দেব, উভয় ফলাফল নিয়েই প্রশ্ন ওঠে, কিন্তু তাদের গবেষণা নোবেল পুরস্কারের যোগ্য। তাহলে আপনি আর কীভাবে তাদের পুরস্কার দেবেন?”
এ ছাড়া, বেন্টলি ইউনিভার্সিটির গণিতের সহযোগী অধ্যাপক ও “হাও অ্যালগরিদম ক্রিয়েট অ্যান্ড প্রিভেন্ট ফেইক নিউজ” নামের বইয়ের লেখক নোয়া গিয়ানসিরাকুসাও বলছেন, হিন্টনের জয় প্রশ্নবিদ্ধ।
"তিনি যা করেছেন তা অসাধারণ। কিন্তু বিষয়টা কী পদার্থবিদ্যা ছিল? আমার তো মনে হয় না। পদার্থবিদ্যা থেকে অনুপ্রেরণা নিলেও, তারা পদার্থবিজ্ঞানে নতুন তত্ত্ব তৈরি করছেন না বা এ বিষয়ের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধান করছেন না।”
চিকিৎসা বা শারীরবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, সাহিত্য এবং শান্তি, নোবেল পুরস্কারের এ বিভাগগুলো সুইডিশ আবিষ্কারক আলফ্রেড নোবেলের উইলে্ নির্ধারণ করা হয়েছিল, যিনি ১৮৯৫ সালে মারা যান। পরবর্তীতে, ১৯৬৮ সালে সুইডিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুদানের ভিত্তিতে অর্থনীতি বিভাগও যোগ হয়।
আধিপত্য
বর্তমানের সম্ভাব্যভাবে গুগলের ব্যবসায়িক মডেল ভেঙ্গে দেওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করছে মার্কিন নিয়ন্ত্রকরা। এমন হলে কোম্পানির ব্যবসার কিছু অংশ, যেমন ক্রোম ব্রাউজার ও অ্যান্ড্রয়েড আলাদা করতে হতে পারে। অনেকে মত প্রকাশ করেছেন, এটিই অনলাইন সার্চ ফিচারে গুগলকে অবৈধ একচেটিয়া অধিকার ধরে রাখতে দেয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।
এমন শীর্ষ অবস্থান থেকে আসা লাভের কারণেই প্রথাগত একাডেমিয়াকে ছাড়িয়ে যুগান্তকারী এআই গবেষণা প্রকাশের সুযোগ পেয়েছে গুগল ও অন্যান্য প্রযুক্তি জায়ান্ট।
হিন্টন নিজেও তার জীবনের কাজ সম্পর্কে অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন। তিনি গত বছর গুগল ছেড়েছিলেন, যাতে এআইয়ের বিপদ সম্পর্কে নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারেন। পাশাপাশি, আগের প্রত্যাশার চেয়েও অনেক তাড়াতাড়ি মানুষের চেয়ে কম্পিউটার বেশি স্মার্ট হয়ে যেতে পারে বলেও সতর্ক করেছিলেন তিনি।
“মনে হয় আমার কাছে যদি সহজ রেসিপি থাকতো, যা করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আসলে এমন কিছু নেই। বিশেষ করে, এই জিনিসগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে দখল নেওয়ার হুমকির বিষয়ে আরও নেই।” – মঙ্গলবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন হিন্টন।
২০২৩ সালে এআই উদ্বেগের ফলে গুগল ছাড়ার সময় হিন্টন এও বলেছিলেন যে কোম্পানি খুবই দায়িত্বশীলভাবে কাজ করেছে।
অনেকের জন্য এ সপ্তাহের নোবেল পুরস্কার দেখিয়েছে সনাতন জ্ঞানচর্চাকারীদের জন্য নোবেলের প্রতিযোগিতা কতটা কঠিন হয়ে উঠছে।
গিয়ানসিরাকুসা রয়টার্সকে বলেন, গবেষণায় বৃহত্তর জনসাধারণের সংশ্লিষ্টতার প্রয়োজন রয়েছে।
“জায়ান্ট প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ‘ডিপ-লার্নিংয়ের পরবর্তী বড় অগ্রগতির দিকে নজর নেই। কেবল চ্যাটবট তৈরি করে ও ইন্টারনেট জুড়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে অর্থ আয় করতে চায় তারা।” – বলেন তিনি।