এ ধরনের বন বিভিন্ন শীতবান্ধব গাছকে প্রয়োজনীয় কাঠামো দেওয়ার পাশাপাশি এদেরকে ক্রমাগত গরম হয়ে যাওয়া পৃথিবীতে টিকে থাকতে সাহায্য করতে পারে।
Published : 23 Apr 2024, 07:09 PM
পর্বতের চূড়ার তাপমাত্রা এর নীচে থাকা পাহাড়গুলোর চেয়ে শীতল, প্রচলিত ধারণায় এমন দাবি করা হয়ে থাকলেও নতুন এক গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা।
‘ইউনিভার্সিটি অফ ভারমন্ট (ইউভিএম)’-এর নতুন এ গবেষণা বন ও জলবায়ু নিয়ে মানুষের প্রচলিত ধারণার একেবারে বিপরীত তথ্য দেখাচ্ছে।
গবেষকদের দাবি, এমন এলাকা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ইকোলজি অ্যান্ড এভোলিউশন’-এ প্রকাশিত এ গবেষণার বিভিন্ন অনুসন্ধানে ইঙ্গিত মিলেছে, কিছু পাহাড়ী বনে ‘কোল্ড-এয়ার পুলিং’ নামের এক ঘটনার জন্য সেইসব এলাকার অনেক ওপর দিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হয়, যা নিচের দিকেও ঠাণ্ডা পরিবেশ তৈরি করে, যা সাধারণ ঘটনার একেবারে বিপরীত।
এ অস্বাভাবিক তাপমাত্রার ধরন, যেখানে কেউ নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গে শীতল অনুভূতি পান, একে ‘ভেজিটেশন ইনভার্শন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন গবেষকরা।
এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ ভারমন্ট (ইউভিএম)’-এর সাবেক গবেষক মেলিসা পাস্তোর বলছেন, “তাপমাত্রা বিপরীতমূখী হয়ে গেলে আমরা এমন ভেজিটেশন ইনভার্শনের ঘটনা দেখতে পাই।”
“যেসব উদ্ভিদ প্রজাতি ঠাণ্ডা পছন্দ করে, যেমন– স্প্রুস ও দেবদারু গাছ, সাধারণত এদের উচ্চতা বেশি হয়ে থাকে। তবে, আমরা গবেষণায় বিভিন্ন এমন গাছ দেখতে পেয়েছি, যেগুলোর উচ্চতা কম। আর এটি আমাদের প্রত্যাশার একেবারে বিপরীত।”
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে, এ ধরনের ইকোসিস্টেমের প্রভাব অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
“মৌলিকভাবে বনটির গঠনপ্রক্রিয়ার পেছনে ছিল ‘কোল্ড-এয়ার পুলিং’ নামের ঘটনাটি,” বলেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ভার্মন্ট (ইউভিএম)’ এর অধ্যাপক ও এ গবেষণার সহ-লেখক ক্যারল অ্যাডেয়ার।
আর এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ‘বন ব্যবস্থাপকদের এইসব এলাকায় প্রাধান্য দিতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া, শক্তিশালী কোল্ড-এয়ার পুলিং থাকা এলাকাগুলোতে শীতবান্ধব গাছগুলোকে সুরক্ষা দেবে, যখন পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে।”
অনুসন্ধানটি বন ব্যবস্থাপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এতে এমন অঞ্চলের কথা ফুটে উঠেছে, যেখানে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের মতো বাধা থাকার পরও বিভিন্ন শীতবান্ধব উদ্ভিদ প্রজাতি বেঁচে থাকতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানবিষয়ক প্রকাশনা নোরিজ।
এ গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইংল্যান্ডের তিনটি বনভূমির ওপর নজর দেন গবেষকরা, যেখানে দুই বছর ধরে গাছের ধরনের পাশাপাশি এর তাপমাত্রাও পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ভারমন্টের ‘নর্থইস্ট কিংডম’-এ অবস্থিত গর্তের মতো দেখতে ‘নালহেগান বেসিন’, যার অবস্থান ‘গ্রিন’ পর্বতমালার চূড়া ও গভীর উপত্যকায়।
গবেষকরা এইসব এলাকার বিভিন্ন গাছের প্রজাতির তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি প্রতি ঘণ্টায় এদের তাপমাত্রাও পর্যবেক্ষণ করেছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
অ্যাডেয়ার বলছেন, এইসব বনে ‘কোল্ড-এয়ার পুলিং’ শুধু একটি বিরল বা শুধু রাতের ঘটনাই নয়, বরং দিনের বেলা ও প্রায় সারা বছর ধরেই ঘটে। আর তাদের গবেষণা চালানো সকল এলাকাতেই এ ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে।
পরিবর্তনশীল জলবায়ুতে আশ্রয় খোঁজা
পাস্তোর বলছেন, যেসব এলাকায় এ ধরনের ঘটনা দেখা যায়, সেগুলো শীতবান্ধব উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে পারে, এমনকি বেশিরভাগ জায়গার তাপমাত্রা বেড়ে গেলেও।
“বিভিন্ন এমন ছোট এলাকা, যা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গাছের আশ্রয়স্থল হতে পারে, সেগুলোর ক্ষেত্রে এমন কোল্ড-এয়ার পুলিং প্রবণ এলাকাগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে; এগুলো মূলত এমন এলাকা, যেগুলো জলবায়ু পরিবর্তন থেকে প্রভাবিত হতে পারে। আর সেইসব এলাকা এমন শীতবান্ধব উদ্ভিত প্রজাতিকে আশ্রয় দিচ্ছে, যেগুলো আমাদের জানামতে দূর্বল।”
তিনি আরও যোগ করেন, এ ধরনের এলাকা সংরক্ষণ করলে বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রজাতির জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পর্যাপ্ত সময় পেতে পারে, যেখানে এরা নিজেদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে প্রতিবেশী প্রজাতিগুলোর সঙ্গে মিশে গিয়ে ক্রমাগত গরম হয়ে যাওয়া পৃথিবীতে টিকে থাকবে।
এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ‘কোল্ড-এয়ার পুলিং’ কিছুটা সুরক্ষা প্রদানের সম্ভাবনা দেখালেও তা এর চূড়ান্ত সমাধান নয়।
“এই বনগুলোও গরম হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে,” বলে সতর্ক করেছেন পাস্তোর। “তবে তা ধীরে ধীরে ঘটার সম্ভাবনাই বেশি, অন্যথায় যেসব প্রজাতি উষ্ণ জলবায়ুতে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে, সেগুলো এমন এলাকায় বেশি সময় টিকে থাকবে।”
গবেষণাটি পরিবেশ বিজ্ঞানের জন্য একটি বিরল সুসংবাদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ, এ ধরনের বন বিভিন্ন শীতবান্ধব গাছকে প্রয়োজনীয় কাঠামো দেওয়ার পাশাপাশি এদেরকে ক্রমাগত গরম হয়ে যাওয়া পৃথিবীতে টিকে থাকতে সাহায্য করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।