গবেষকরা বিভিন্ন প্রাণীর ওপর এ মডেল সফলভাবে পরীক্ষা করেছেন। এতে দেখা যায়, প্রাণীর নিজস্ব রক্ত থেকেই এর ক্ষয়প্রাপ্ত হাড়ের নিরাময় সম্ভব।
Published : 02 Dec 2024, 06:05 PM
মেডিসিন খাতে সম্প্রতি এক রোমাঞ্চকর উদ্ভাবনের দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেখানে রক্ত থেকে এমন নতুন উপাদান তৈরি করা যাবে, যা দিয়ে মানুষের হাড় সারানোর পাশাপাশি নানা ধরনের ক্ষত ও রোগ সারিয়ে তোলা সম্ভব।
এ যুগান্তকারী উদ্ভাবন থেকে পার্সোনালাইজড ৩ডি-প্রিন্টেড ইমপ্ল্যান্ট তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তাও রোগীর নিজস্ব রক্ত থেকে। এতে করে আগের চেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর চিকিৎসার পথ তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
সম্প্রতি অ্যাডভান্সড ম্যাটিরিয়ালস জার্নালে প্রকাশিত এ গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ নটিংহ্যাম’র ‘স্কুল অফ ফার্মাসি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের একদল গবেষক।
গবেষণা দলটি এমন এক পদ্ধতি তৈরি করেছে, যা রক্তের প্রাকৃতিক নিরাময় ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি টিস্যু মেরামত করার ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়।
রক্ত কীভাবে দেহকে সারিয়ে তোলে?
মানবদেহে ছোট ছোট ক্ষত ও হাড়ের ফাটল প্রাকৃতিকভাবেই সেরে ওঠে, যার পেছনে হাত আছে একটি জটিল জৈবিক প্রক্রিয়ার। মানুষ যখন আঘাত পায়, তখন দেহে রক্ত জমাট বেঁধে শক্ত এক কাঠামো তৈরি হয়, যা ‘রিজেনারেটিভ হেমাটোমা (আরএইচ)’ নামে পরিচিত। এর মধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কোষ এবং প্রোটিন থাকে, যেগুলো সমন্বিত উপায়ে টিস্যুর মেরামত করে।
কিন্তু তুলনামূলক বড় আঘাত বা ক্ষতের বেলায় এ প্রাকৃতিক নিরাময় পদ্ধতি কাজ করে না। ফলে, অনেক সময় চিকিৎসা নিতে হয়। আর এখানেই রক্ত থেকে তৈরি এ উপাদানটি ভূমিকা রাখতে পারে, যেখানে এটি দেহের প্রাকৃতিক নিরাময় সক্ষমতা অনুকরণ করতে এমনকি তা বাড়িয়েও দিতে পারে।
রক্তকে নিরাময়যোগ্য উপাদানে রূপান্তর
গবেষকরা এতে কৃত্রিম ‘পেপটাইড’ অণু ব্যবহার করে এমন একটি উপাদান তৈরি করেছেন, যা দেহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম। আর এইসব পেপটাইড রোগীর রক্তের সঙ্গে গিয়ে মেশার পর নিজে নিজেই এমন এক উপাদানে রূপান্তরিত হয়, যা থেকে আগের চেয়েও উন্নত টিস্যু তৈরি করা সম্ভব।
এ প্রক্রিয়ায় যে উপাদানটি তৈরি হয়, তা শুধু রিজেনারেটিভ হেমাটোমা’কে অনুকরণই করে না বরং এর কাঠামো ও কার্যকারিতাও আগের চেয়ে টেকসই হয়ে ওঠে।
এ উপাদানের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এর বৈচিত্র্য। একে যে কোনো আকারে রূপ দেওয়া সম্ভব। এমনকি রক্তের স্বাভাবিক নিরাময়গত বৈশিষ্ট্যগুলো সমুন্নত রেখেও এর ৩ডি প্রিন্টেড প্রক্রিয়া চলমান থাকে।
গবেষকরা বিভিন্ন প্রাণীর ওপর এ মডেল সফলভাবে পরীক্ষা করেছেন। এতে দেখা যায়, প্রাণীর নিজস্ব রক্ত থেকেই এর ক্ষয়প্রাপ্ত হাড়ের নিরাময় করা সম্ভব। এটি মানুষের ক্ষেত্রেও কাজ করার সম্ভাবনা আছে। আর একে ক্ষত চিকিৎসার ‘পার্সোনালাইজড’ উপায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে নোরিজ।