কিছুদিন আগেই বিশ্বের প্রথম প্রাইভেট স্পেসওয়াকে অংশ নিয়ে পৃথিবীতে ফিরেছেন স্পেসএক্স পরিচালিত পোলারিস ডন মিশনের বিলিয়নেয়ার জ্যারেড আইজ্যাকম্যান।
Published : 17 Nov 2024, 07:20 PM
বিনোদনের উদ্দেশ্যে মানুষের মহাকাশ ভ্রমণকে বলা হচ্ছে মহাকাশ পর্যটন। বিভিন্ন ধরনের মহাকাশ পর্যটন রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম অরবিটাল, সাব-অরবিটাল ও চাঁদ মহাকাশ পর্যটন। এর মাধ্যমে মহাকাশ থেকে পৃথিবী দেখার সৌভাগ্য মিলবে পর্যটকদের।
সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের বাণিজ্যিক মিশনের আওতায় সাধারণ নাগরিকদের মহাকাশে যাওয়ার সুযোগ বাড়ছে। তবে, কেবল ধনীরাই এর সুযোগ নিতে পারছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, মহাকাশ ভ্রমণের বিষয়টি আসলে কেমন? ভাল না মন্দ? বা আদৌ কি মহাকাশ ভ্রমণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ?
মহাকাশ পর্যটন কি গুরুত্বপূর্ণ?
কয়েক দশক ধরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ভ্রমণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’সহ বিভিন্ন মহাকাশ সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করছেন ধনী ব্যক্তিরা। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এমন সুযোগ কিছুদিন আগেও অসম্ভব ছিল।
মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক, অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ও ব্রিটিশ ধনকুবের রিচার্ড ব্র্যানসনের মতো ধনী বিলিয়নেয়াররা তাদের নিজস্ব রকেট কোম্পানি তৈরির মাধ্যমে মহাকাশ ভ্রমণের সে ক্ষেত্রটিকে একেবারে বদলে দিয়েছেন।
ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স-এর মহাকাশ পর্যটন নিয়ে ঘোষিত কোনো লক্ষ্য না থাকলেও কেউ চাইলে অর্থের বিনিময়ে কোম্পানিটির ‘ক্রু ড্রাগন’ ক্যাপসুলে চড়ে মহাকাশ ভ্রমণে যেতে পারেন। কিছুদিন আগেই বিশ্বের প্রথম প্রাইভেট স্পেসওয়াকে অংশ নিয়ে পৃথিবীতে ফিরেছেন স্পেসএক্স পরিচালিত পোলারিস ডন মিশনের বিলিয়নেয়ার নভোচারী জ্যারেড আইজ্যাকম্যান।
মার্কিন এই ধনকুবেরের অর্থায়নে পরিচালিত এ মিশনের সমাপ্তি ঘটে এ বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর, যেখানে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১ টা ৩৭ মিনিটে মেক্সিকো উপকূলের কাছাকাছি ফ্লোরিডার ড্রাই টরুগাস দ্বীপে অবতরণ করেন নভোচারীরা।
অন্যদিকে রিচার্ড ব্র্যানসনের মহাকাশ পর্যটন কোম্পানি ‘ভার্জিন গ্যালাকটিক’ তৈরিই হয়েছে মহাকাশ পর্যটনকে ঘিরে। কয়েক লাখ ডলারের বিনিময়ে মহাকাশের সাব-অরবিটাল অংশে পযটকদের ঘুড়িয়ে আনবে কোম্পানিটি।
এর আগে ২০২১ সালের জুলাইয়ে ব্রিটিশ এই ধনকুবের নিজেই ভার্জিন গ্যালাকটিকের রকেটে চড়ে মহাকাশ ছুঁয়ে সফলভাবে অবতরণ করেন। সেই সময় তিনি’সহ ভার্জিন গ্যালাকটিকের ছয় পেশাদার ক্রুর সঙ্গে তার এই নভোপর্যটন মিশনের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ণকে রয়টার্স বর্ণনা করেছিল ‘সিম্বলিক মাইলস্টোন’ হিসেবে।
মহাকাশ পর্যটনের নিঃসন্দেহে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। কারো কারো জন্য মহাকাশ ভ্রমণের বিষয়টি অনেক আগ্রহ ও উত্তেজনার, যা সাধারণত এই মহাকাশ ভ্রমণ শিল্পের জন্য ইতিবাচক দিক বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
দ্বিতীয়ত নতুন এক বাজার ব্যবস্থা প্রসারিত হয়েছে এই মহাকাশ পর্যটনকে কেন্দ্র করে। যেখানে নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতির বিকাশ করছে বিভিন্ন মহাকাশ কোম্পানি, যা মহাকাশ পর্যটন শিল্পের উপর আরও ভাল প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া, মহাকাশ পর্যটনের ক্ষেত্রে একটি ‘ওভারভিউ ইফেক্ট’ বা জ্ঞানীয় পরিবর্তন রয়েছে, যেখানে বাসযোগ্য গ্রহটিকে পাখির চোখে দেখার সুযোগ পেয়ে থাকেন মানুষরা। আর এই দৃষ্টিভঙ্গি মানব জীবনে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে সে সম্পর্কেও নতুন ধারণা মেলে।
অনেকে চাইলেও হয়তো মহাকাশে ভ্রমণ হতে পারবেন না। কারণ, মহাকাশ ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে কম দামি টিকিটও কারো বাড়ির দামের চেয়েও বেশি। ফলে মহাকাশ ভ্রমণের বিষয়টি সবার হাতের নাগালের মধ্যে নেই। সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিরাই কেবল মহাকাশে ছুটি কাটাতে যেতে পারেন।
বেশিরভাগ মানুষ পাখির চোখে পৃথিবীকে দেখতে চান বা এই নতুন বাজারে অংশ নিচ্ছেন বিষয়টি এমন নয়। এক্ষেত্রে মহাকাশ পর্যটনে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পারে এটি। কারণ মহাকাশকে কেবল ধনী ও অভিজাতদের প্রদেশ বা রাজ্য হিসাবেই মনে করেন অনেক মানুষ।