এর আগেও নিউরালিংক নিয়ে এমন ঘোষণা এসেছে মাস্কের কাছ থেকে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলোর সময়সীমা অতিক্রম করে গেছে।
Published : 18 Jun 2023, 03:19 PM
মার্কিন ধনকুবের উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের প্রত্যাশা, এই বছর থেকেই মানুষের ওপর প্রথম পরীক্ষা চালানো শুরু করবে ব্রেইন চিপ স্টার্টআপ নিউরালিংক।
গেল শুক্রবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত ‘ভিভাটেক’ আয়োজনে এ আভাস দেন কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাস্ক। রয়টার্সের দেখা ওই ওয়েবকাস্টে কোনো ‘টেট্রাপ্লেজিক’ বা ‘প্যারাপ্লেজিক’ রোগীর ওপর এই ইমপ্ল্যান্টের পরিকল্পনাও জানান তিনি।
মাস্কের কোম্পানি কতজন রোগীর ওপর বা কতক্ষণের জন্য এটি বসাবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
কেবল মাস্ক বলেন, তার ধারণা এর প্রথম পরীক্ষা হবে “এই বছরের শেষ নাগাদ।”
গত মাসে নিউরালিংক বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)’র কাছে মানুষের ওপর নিজেদের প্রথম পরীক্ষা চালানোর অনুমতি পেয়েছে কোম্পানিটি। এর আগে প্রাণীর ওপর পরীক্ষা চালানোর ফলে মার্কিন তদন্তের মুখে পড়ার পর এই অনুমোদন প্রাপ্তি নিউরালিংকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
নিউরালিংককে ব্রেইন ইমপ্ল্যান্ট ও সার্জিকাল রোবট পরীক্ষার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি রয়টার্সকে দেওয়া আগের এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে এফডিএ। তবে, এই প্রসঙ্গে বাড়তি কোন তথ্য দিতে চায়নি সংস্থাটি।
এর আগেও নিউরালিংক নিয়ে এমন ঘোষণা এসেছে মাস্কের কাছ থেকে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলোর সময়সীমা অতিক্রম করে গেছে। ‘নিউরালিংক মানুষের ওপর শীঘ্রই পরীক্ষা চালাবে’ এমন ভবিষ্যদ্বাণী ২০১৯ সাল থেকে অন্তত চার বার দিয়েছেন মাস্ক।
২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নিউরালিংক এফডিএ’র কাছে পরীক্ষা চালানোর অনুমতি চেয়ে প্রথম আবেদন করে ২০২২ সালের শুরুতে। তবে, কয়েক ডজন শঙ্কার কথা উল্লেখ করে সে সময় ওই আবেদন নাকচ করে দেয় সংস্থাটি। এর মধ্যে রয়েছে ডিভাইসে ব্যবহৃত লিথিয়াম ব্যাটারি নিয়ে আপত্তি, ইমপ্ল্যান্টের তার মস্তিষ্কে স্থানান্তরের শঙ্কা ও ‘ব্রেইন টিস্যু’র ক্ষতি না করে নিরাপদে ডিভাইস মস্তিষ্ক থেকে বের করে আনার চ্যালেঞ্জ।
প্রাণীদের ওপর পরীক্ষা চালানোর বিষয়টি নিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই ফেডারেল তদন্তের মুখে পড়েছে নিউরালিংক।
গত বছর নিউরালিংক কর্মীরা রয়টার্সকে জানায়, কোম্পানি বানর, শূকর ও ভেড়ার ওপর অস্ত্রোপচার করার বেলায় তাড়াহুরা ও যেনতেনভাবে করার ফলে প্রয়োজনের চেয়েও বেশি প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। এর কারণ হিসাবে এফডিএ’র অনুমোদনের জন্য মাস্ক কর্মীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করার বিষয়টি উঠে আসে সে সময়।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, প্রাণীদের ওপর পরীক্ষা চালানোর উদ্দেশ্য ছিল এটি থেকে প্রাপ্ত ডেটা যেন কোম্পানির মানব পরীক্ষার আবেদনকে সমর্থন করে।
উদাহরণ হিসেবে, ২০২১ সালে চালানো পরীক্ষায় ৬০টি শূকরের ২৫টিতেই ভুল আকারের ডিভাইস বসিয়েছিল কোম্পানিটি। এর ফলে সবগুলো শূকরই মারা যায়। কোম্পানির কর্মীরা বলেন, ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে এমন ভুল সহজেই এড়ানো যেত।
নিউরালিংকের তত্ত্বাবধানকারী দল প্রাণীদের ওপর পরীক্ষা চলাকালীন কোনো তালগোল বা তাড়াহুড়ো করেছে কি না, সেটি নিয়ে মে মাসে নিয়ন্ত্রকদের তদন্ত চালানোর অনুরোধ জানান মার্কিন আইন প্রণেতারা। এর আগে প্রকল্পের আর্থিক অসঙ্গতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে রয়টার্স।
এদিকে, বানরের মস্তিষ্ক থেকে সরানো চিপগুলো বিপজ্জনক রোগজীবাণু বহন করেছে কি না, তা নিয়েও নিউরালিংকের ওপর পৃথক তদন্ত চালাচ্ছে মার্কিন পরিবহন বিভাগ। শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংস্থাটির এক মুখপাত্র।
এ ছাড়া, সম্ভাব্য প্রাণী সুরক্ষা লঙ্ঘনের অভিযোগে কোম্পানির ওপর তদন্ত চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের ‘ইন্সপেক্টর জেনারেল’-এর দপ্তর। এতে নিউরালিংকের তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা খতিয়ে দেখছে সংস্থাটি। এই প্রসঙ্গে রয়টার্স সংস্থার এক মুখপাত্রের মন্তব্য জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক সাড়া মেলেনি।
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় কোম্পানির বাজারমূল্যও ব্যপক বেড়েছে। দুই বছর আগে তহবিল সংগ্রহ চলাকালীন কোম্পানির মুল্য ছিল দুইশ কোটি ডলার। এই মাসে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উঠে আসে, এখন সেটি বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচশ কোটি ডলারে।
এই ব্যবস্থার দ্রুত বিকাশে আর্থিক অসঙ্গতির কারণে ফেডারেল তদন্তের মুখে পড়েছে কোম্পানির প্রাণী বিষয়ক পর্ষদের সদস্যরা। এর মধ্যে গত দুই বছরে কয়েকজনের শেয়ারের মূল্য প্রায় দেড়শ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।