Published : 20 Nov 2022, 04:00 PM
২০২২ কাতার ওয়াল্ডকাপ চলাকালীন বাড়তি ট্রাফিক সামাল দেওয়ার মতো সক্ষমতা কি এখন আছে টুইটারের? ‘চিফ টুইট’ ইলন মাস্ক টুইটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েই কোম্পানির অর্থেক কর্মী ছাঁটাই করায় এবং তার সাম্প্রতিক হুমকিতে কর্মীরা দলে দলে ইস্তফা দেওয়ার মারাত্মক জনশক্তি অভাবে ভুগছে প্ল্যাটফর্মটি।
ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হলে টুইটার ক্র্যাশ করে অফলাইনে চলে যাওয়ার শঙ্কা ৫০ শতাংশ বলে দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্মটি থেকে সম্প্রতি বিদায় নেওয়া এক কর্মী।
গার্ডিয়ান বলছে, টুইটারের ‘কমান্ড সেন্টারে’র কার্যপ্রণালীর সঙ্গে পরিচিতি আছে ওই সাবেক কর্মীর। ডেটা সেন্টার বন্ধ হয়ে যাওয়া বা বাড়তি ট্রাফিকের মতো বিষয়গুলো মোকাবেলা করে এ দলটির কর্মীরাই।
“একদিকে প্রস্তুতির অভাব, আরেক দিকে কর্মীর অভাবে আমার মনে হয় এবারের বিশ্বকাপ টুইটারের জন্য কঠিন হবে,” গার্ডিয়ানকে বলেছেন ওই কর্মী।
সেবার আকস্মিক ধীর গতির মত কোনো না কোনো জটিলতা ২৯ দিনের ফুটবল উৎসব চলাকালীন দেখা দেবেই বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। আর প্ল্যাটফর্মের কোনো না কোনো জটিলতা সাধারণ ব্যবহারকারীদের নজরে আসার শঙ্কা ৯০ শতাংশ বলে জানিয়েছেন তিনি।
“সম্ভবত শুরুর দিন থেকেই জটিলতার মুখে পড়বে টুইটার, ক্র্যাশও করতে পারে। ভাগ্য ভালো হলে যত্সামান্য ব্যাঘাত ঘটবে সেবায়।”
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, টুইটারের আইটি অবকাঠামোতে যে কোনো জটিলতা মোকাবেলার সক্ষমতা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাস্কের কর্মী ছাঁটাইয়ে। ২৮ অক্টোবর কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর প্রথম সপ্তাহেই এক সঙ্গে কোম্পানির প্রায় অর্ধেক কর্মী ছাঁটাই করেছেন তিনি।
দ্বিতীয় সপ্তাহে কোম্পানির সাড়ে পাঁচ হাজার চুক্তিভিত্তিক কর্মীর প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে চারজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান। গত সপ্তাহে মাস্ক ‘কঠোর পরিশ্রমের’ আল্টিমেটাম দেওয়ার পর ইস্তফা দিয়েছেন আরও ১ হাজারের বেশি কর্মী।
সম্প্রতি চাকরি খোয়ানো বা ইস্তফা দেওয়া কর্মীদের মধ্যে টুইটারের কমান্ড সেন্টারের সদস্যরাও আছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিকটি। গত কয়েক সপ্তাহে দলটির এক-তৃতীয়াংশ কর্মী কোম্পানি ছেড়েছেন বলে জানিয়েছে আরেক ব্রিটিশ দৈনিক দ্য অবজার্ভার।
বিশ্বকাপ শুরু হলে টুর্নামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো নিয়ে অনলাইনে আলোচনা বাড়বে ভক্তদের মধ্যে। এ প্রসঙ্গে ওই সাবেক টুইটার কর্মী গার্ডিয়ানকে বলেছেন, “বড় ঘটনার সময় ট্রাফিক হঠাৎ করে ওঠানামা করতে থাকে। খেলায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটলে বা বিতর্কিত কোনো সিদ্ধান্ত আসলে হঠাৎ করেই ট্রাফিক অনেক বেড়ে যাবে – আর প্ল্যাটফর্মের অবকাঠামোকে ওই বাড়তি ট্রাফিক সহ্য করার সক্ষমতা থাকতে হবে। আগে যথেষ্ট মানুষ নজর রাখতেন বিষয়গুলোর ওপর এবং যে কোনো বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবেলার বিষয়টি নিশ্চিত করতেন।”
মাস্ক টুইটারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগের সপ্তাহগুলোতে প্ল্যাটফর্মের মূল কোডিংয়ে পরিবর্তন আনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা জানিয়েছে গার্ডিয়ান। মাস্ক নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরেও ওই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকায় বিশ্বকাপের জন্য টুইটার প্রস্তুতিও নিতে পারেনি বলে দাবি ওই কর্মীর।
বিশ্বকাপ নিয়ে টুইটারের পরিকল্পনা সম্পর্কে ওই কর্মীর কাছে জানতে চেয়েছিল গার্ডিয়ান। উত্তরে তিনি বলেন, “কোনো পরিকল্পনা আছে বলে আমার জানা নেই। আমাদের আরও কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল।”
বিশ্বকাপ শুরুর আগে টুইটারের প্রস্তুতির অভাব নিয়ে শঙ্কিত প্ল্যাটফর্মটির সাবেক প্রকৌশলী জন আইওনাইডিস; ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের সময়ে মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্মটির সঙ্গেই ছিলেন তিনি। সে সময়ে নানা জটিলতা মোকাবেলায় সরাসরি কাজ করেছেন তিনি।
প্ল্যাটফর্মের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে তার মত, “বাজারের সেরা যন্ত্রাংশ আর হার্ডওয়্যার থাকলেও, হঠাৎ করে ট্রাফিক বেড়ে গেলে তার কারণে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।”
২০১৪ সালে বিশ্বকাপ চলাকালীন টুইটার আইটি অবকাঠামোর ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। “নানা ভাবে নানা জিনিস কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে এবং আপনি এর সবগুলোর জন্য প্রস্তুতিও নিতে পারবেন না।”
এর আগে, ২০১০ সালের বিশ্বকাপ চলাকালীন ব্যবহারকারীদের বাড়তি ট্রাফিকের চাপ নিতে না পেরে ক্র্যাশ করেছিল টুইটার।
বিশ্বকাপ চলাকালীন টুইটারের বাড়তি ট্রাফিক সামলানোর সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কিত ইউনিভার্সিটি অফ সারের সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাপক অ্যালান উডওয়ার্ডও। “এ মুহূর্তে টুইটার সব ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে; আমার অভিজ্ঞতায় যা মোটেই কোনো নির্ভরযোগ্য কৌশল নয়।”
বিশ্বকাপের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে মাস্কের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল গার্ডিয়ান; তাতে সাড়া দেননি চিফ টুইট।
তবে মাস্ক টুইট করেছেন, “রোববারে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। সেরা কাভারেজ আর তাৎক্ষণিক ধারাবিবরণী পেতে টুইটারে চোখ রাখুন।”