১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকাটা শুধু ভাগ্যের ব্যাপার নয়। অল্প বয়স থেকেই জীবনধারা ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে মানুষের শতবর্ষী হওয়ার বিষয়টির নিবিড় সংযোগ রয়েছে।
Published : 15 Sep 2024, 01:04 PM
বর্তমানে আগের চেয়েও বেশি দিন ধরে বেঁচে আছেন সুইডেনের মানুষরা। ৩০ বছর আগেও সেখানে কারও পক্ষে ৮৫ বা ৯০ বছরের বেশি বেঁচে থাকার বিষয়টি ছিল অস্বাভাবিক।
বেশিরভাগ সুইডিশ এখন এই বয়সে পৌঁছেছেন। এমনকি সেখানকার প্রায় দুই শতাংশ মানুষ এখন ১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন। শতবর্ষী ব্যক্তিরা অর্থাৎ যাদের বয়স ১০০ বা তারও বেশি তাদের সংখ্যা এখন দেশটিতে সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে।
‘ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট’-এর ‘ইনস্টিটিউট অফ এনভায়রনমেন্টাল মেডিসিন’ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কারিন মোদিগ বলেন, “শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা এখন সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে।”
এ গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘জেরোসায়েন্স’-এ। এ গবেষণায় মোডিগ ও তার দল দেখেছেন, স্বাস্থ্যের প্রাথমিক লক্ষণ বিচার করে অনুমান করা সম্ভব হতে পারে যে, কে কে শত বছর পর্যন্ত আয়ু পেতে পারেন।
১৯৮৫ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় ৪৪ হাজার সুইডিশ নাগরিকের বয়স ছিল ৬৪ থেকে ৯৯ বছরের মধ্যে। যাদের মধ্যে ১ হাজার ২২৪ জন মানুষ শতবর্ষী হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছেন বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
সমীক্ষা বলছে, একশ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকাটা শুধু ভাগ্যের ব্যাপার নয়। অল্প বয়স থেকেই জীবনধারা ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে মানুষের শতবর্ষী হওয়ার বিষয়টির নিবিড় সংযোগ রয়েছে।
গবেষকরা মানুষের ১২টি ভিন্ন ‘বায়োমার্কার’ পরীক্ষা করেছেন। এটি এমন একটি স্বাস্থ্য সূচক, যা মানুষের বার্ধক্য বা রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখাতে সক্ষম। গবেষকরা দেখেছেন, এরইমধ্যে বেশিরভাগ শতবর্ষী ব্যক্তি তাদের সমবয়সীদের তুলনায় ৬০ এর দশকে স্বাস্থ্যবান ছিলেন।
১২টি বায়োমার্কারের মধ্যে যাদের ১০টি রয়েছে তাদের ১০০ বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি। এর সঙ্গে কিছু মূল ফ্যাক্টরও উঠে এসেছে। যেমন– মানবদেহের রাসায়নিক উপাদান ‘ক্রিয়েটিনিন’-এর মাত্রা, যেটি কিডনির স্বাস্থ্যের প্রতিফলন ঘটায়, যারা ১০০ বছর বেঁচে ছিলেন তাদের প্রায় সকলের মধ্যেই এ উপাদানটি স্বাভাবিক ছিল।
একই কথা সত্য ছিল লিভারের কার্যকারিতা ও ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রার ক্ষেত্রেও, এগুলো দেহের প্রদাহ চিহ্নিতকারী।
ইউরিক অ্যাসিডের সর্বনিম্ন স্তরে থাকা মানুষদের শত বছর বয়সে পৌঁছানোর সম্ভাবনা ছিল চার শতাংশ। এর বিপরীতে, ইউরিক অ্যাসিডের সর্বোচ্চ স্তরে থাকা মানুষদের সম্ভাবনা ছিল কেবল দেড় শতাংশ।
এক্ষেত্রে রক্তে শর্করার পরিমাণও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বেশিরভাগ শতবর্ষী মানুষের দেহে শর্করার মাত্রা ছিল ৬.৫ মিমিওল/লিটারের নীচে।
গবেষণার এসব ফলাফল থেকে ইঙ্গিত মেলে, জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে জীবনধারা ও স্বাস্থ্যের উন্নতির মাধ্যমে মানুষের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ১০০ বছরে বাড়িয়ে তোলা সম্ভব।
এ নিয়ে মোডিগ বলছেন, আয়ুর বেলায় দেহের জিনগত বিষয় ও ভাগ্য ভূমিকা পালন করলেও আমরা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘায়ুকে প্রভাবিত করতে পারি।
“জীবন কেবল উন্নত স্বাস্থ্যের জন্য কঠোর নিয়ম অনুসরণ করা নয়। বরং প্রত্যেককে অবশ্যই ঝুঁকির কারণ ও স্বাস্থ্যের বিভিন্ন কারণের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে বের করতে হবে।”