স্ক্রিপ্ট লিখতে বা নিজস্ব আইডিয়া ঘেঁটে দেখার জন্য এই প্রযুক্তি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন কৌতুক অভিনেতারা।
Published : 16 Aug 2024, 12:44 PM
বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআইয়ের ব্যবহার হচ্ছে। কমেডিতেও জায়গা করে নিয়েছে নতুন যুগের এই প্রযুক্তি।
স্ক্রিপ্ট লিখতে বা নিজস্ব আইডিয়া ঘেঁটে দেখার জন্য এই প্রযুক্তি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন কৌতুক অভিনেতারা।
যার ব্যতিক্রম নন কানাডিয়ান কমেডিয়ান অ্যানেস্টি ড্যানেলিস। চলতি বছরের শুরুর দিকে জনপ্রিয় এআই চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি’কে একটি শো লিখতে বলেন এই কমেডিয়ান।
এআইয়ের এ ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই এই গ্রীষ্ম জুড়ে পারফর্ম করেছেন অ্যানেস্টি, যার মধ্যে ছিল এ মাসে অনুষ্ঠিত বিশ্বখ্যাত পারফর্মিং আর্ট উৎসব ‘এডিনবার্গ ফেস্টিভাল ফ্রিঞ্জ’।
জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত বার্ষিক নাট্যোৎসব ‘টরন্টো ফ্রিঞ্জ থিয়েটার ফেস্টিভাল’-এ সাত দিনের মধ্যে ষষ্ঠ দিনের পারফরম্যান্সের পর অ্যানেস্টির সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি, যেখানে উঠে এসেছে এআই ব্যবহার করে তার স্ক্রিপ্ট লেখার নানা দিক।
“আমি চ্যাটজিপিটি নিয়ে রীতিমতো খেলেছি এবং এর থেকে আমি যে ফলাফল পেয়েছে তা অসম্ভবরকম মজার ছিল।”
এআইয়ের কিছু বাজে রসিকতা আছে তবে তা সত্ত্বেও এটি বুদ্ধিমত্তার জন্য উপকারী, বলেন আনেস্টি।
“আমি ‘বাইসেক্সুয়াল ডিলেমা বা উভকামীদের সংকট বা শরণার্থী শিশুদের নিয়ে পাঁচটি গান লিখতে’ বলেছিলাম এআইকে। এক্ষেত্রে এআই আমাকে এমন ধারণা দিয়েছে, যা আমি কখনও ভাবিনি।”
অর্থাৎ শো কীভাবে তৈরি হয় সে সম্পর্কে বুঝতে পারে এআই। আর এআইয়ের এ বিষয়টিই অ্যানেস্টিকে সবচেয়ে বেশি বিস্মিত করেছে।
“আমি এআইকে একটি চলমান অনুষ্ঠানের ধারা তৈরি করতে বলি। এআই আমাকে ব্যাখ্যা করেছে, প্রতিটি গান কোথায় গাওয়া উচিত ও কেন। এআই ঠিকভাবে কাজটি করেছে। এর পেছনের যুক্তি এআই কতটা ব্যাখ্যা করতে পারে এই ভেবে আমি অবাক হয়েছি।”
এই শো’য়ের অভিজ্ঞতার বিষয়ে অ্যানেস্টি বলেন, “আমি এ প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে শিখেছি, মানুষের সৃজনশীলতার প্রতিলিপি বা প্রতিস্থাপন করা যায় না। এমনকি শেষ পর্যন্ত এ শোয়ের প্রায় ২০ শতাংশ খাঁটি এআইয়ের মাধ্যমে লিখা ছিল ও বাকি ৮০ শতাংশ ছিল পাঁচমিশালি।”
এখনও পর্যন্ত কানাডিয়ান ফুটবল খেলোয়ার অলিভিয়া স্মিথ ও অভিনেতা বেথানি র্যাডফোর্ড-এর মতো শ্রোতাদের কাছ থেকে কেবল ভাল প্রতিক্রিয়া পান বলে জানান অ্যানেস্টি, যারা উভয়েই টরন্টোতে থাকেন।
এআইয়ের ব্যবহার নিয়ে এখনও সন্দিহান অলিভিয়া। তবে এআইকে সৃজনশীলভাবে খেলতে দেখার বিষয়টি তিনি উপভোগ করেছেন।
“আমার ধারণা, যদি পুরো বিষয়টি এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে লেখা হয় তবে আমি এই অভিজ্ঞতা থেকে কিছুটা প্রতারিত বোধ করতাম। তবে মঞ্চে এআইয়ের রসিকতা দেখে মজা পেয়েছি। কারণ এটি বেশ সৃজনশীল ছিল।”
এর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন অভিনেতা বেথানি। তিনি বলেন, “রসিকতা সৃষ্টি ও লেখার মধ্যে এআইয়ের একটি স্বচ্ছ জায়গা রয়েছে। যতক্ষণ না ঠিক মতো কাজটি করতে পারছে ততক্ষণ এআই এ প্রক্রিয়াটির মধ্যেই ছিল।”
সম্প্রতি ‘ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া’র প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের তৈরি কৌতুককেও ছাড়িয়ে যেতে পারে এআই। বেথানি অবশ্য এআই নিয়ে এতটা নিশ্চিত না হলেও তার ধারণা, “এআইয়ের কাছ থেকে তথ্য বের করে আনতে মানুষ বেশ পারদর্শী।”
বর্তমানে বড় ব্যবসায় পরিণত হয়েছে কমেডি। গত দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্ট্যান্ড-আপ কমেডি’র বাজারে বিক্রি হওয়া টিকিটের সম্মিলিত মূল্যের দিক থেকে প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। লাইভ পারফরম্যান্স খাত পর্যবেক্ষণকারী বাণিজ্য প্রকাশনা ‘পোলস্টার’-এর তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কমেডি টিকিট বিক্রি ৯০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০১২ সালে ছিল ৩৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।
এআই কি কমেডির ভবিষ্যত হতে পারে? এ বিষয়ে কেউই নিশ্চিত হতে পারছেন না বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
এআই দিয়ে নিজের বর্তমান শো’র বেশিরভাগ অংশ লেখার পরেও অ্যানেস্টি ড্যানেলিস নিশ্চিত নন, তিনি কৌতুক লিখতে আবার এআইয়ের ব্যবহার করবেন কিনা। পরবর্তী প্রজন্মের কৌতুক অভিনেতাদের জন্যও তার উদ্বেগ রয়েছে, যারা এআইয়ের উপর নির্ভর হতে পারেন।