২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ১.২ কিলোমিটার উঁচু পর্বতশৃঙ্গ ধসে পড়ার ফলে সমুদ্রের পানি সামনে-পেছনে ছিটকে যায়, যার ফলে পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্যে কম্পন সৃষ্টি হয়।
Published : 14 Sep 2024, 05:34 PM
গ্রিনল্যান্ডে জলবায়ু সংকটের কারণে সৃষ্ট ভূমিধস ও বড় আকারের সুনামির কারণে ৯ দিন ধরে কেঁপেছিল পুরো পৃথিবী– এমনই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
এ ভূমিকম্পের ঘটনাটি শনাক্ত করা হয়েছে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ভূমিকম্পের বিভিন্ন সেন্সরের মাধ্যমে।
ভূমিকম্পের ঘটনাটি এতটাই নজিরবিহীন ছিল যে, প্রাথমিকভাবে গবেষকরা এর কারণ সম্পর্কে কোনও ধারণাই পাননি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা গার্ডিয়ান।
এখন এ ঘটনার রহস্যের সমাধান করার পর বিজ্ঞানীরা বলেছেন, কীভাবে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এরইমধ্যে পৃথিবীর ওপর প্রভাব ফেলছে এবং তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগে স্থিতিশীল আছে বলে ধারণা করা বিভিন্ন স্থানেও বড় ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে– এরই প্রতিফলন এ ঘটনাটি।
গবেষকরা বলছেন, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ১.২ কিলোমিটার উঁচু পর্বতশৃঙ্গ ধসে পড়ার ফলে নীচের ফিয়র্ডের (সমুদ্রের খাঁড়ি) পানি সামনে-পেছনে ছিটকে পড়ে, যার ফলে পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্যে কম্পন সৃষ্টি হয়।
“এই বিজ্ঞানভিত্তিক অভিযানে যাত্রা শুরুর পর আমরা সবাই হতবাক হয়েছি এবং আমাদের কারোরই বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না, এমন ঘটনা ঠিক কী কারণে হয়েছে,” বলেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ডেনমার্ক অ্যান্ড গ্রিনল্যান্ড’-এর ড. ক্রিস্টিয়ান সভেনেভিগ।
“এটি ছিল ভূমিকম্পের সংকেতের চেয়েও অনেক দীর্ঘ ও সহজ, যার স্থায়ীত্ব ছিল সাধারণত কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘণ্টা। পাশাপাশি এ ঘটনাটিকে সে সময় আমেরিকান দাতব্য সংস্থা ইউনাইটেড সার্ভিস অর্গানাইজেশনস (ইউএসও) এক অজানা ভূমিকম্পের বস্তু হিসাবে আখ্যা দেয়।”
‘ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল)’-এর বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে করা এই গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পর্বতের পাদদেশে হিমবাহ ক্ষয়ে যাওয়ার কারণে এমনটি ঘটেছিল।
“প্রথমবারের মতো পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্য দিয়ে কম্পন হিসেবে পানির প্রবাহকে রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়িয়েছে ও বেশ কয়েকদিন ধরে এমনটা চলেছে,” বলেন এ গবেষণার সহ-লেখক ও ইউসিএল-এর ‘আর্থ সায়েন্সেস’ বিভাগের অধ্যাপক ড. স্টিফেন হিকস।
“পৃথিবীর পৃষ্ঠে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন উৎস রেকর্ড করতে পারে নানা ধরনের সিসমোমিটার। তবে এর আগে কখনও এত দীর্ঘস্থায়ী ও গোটা বিশ্বে ঘুরে-বেড়ানো ভূমিকম্পের তরঙ্গ রেকর্ড করা হয়নি, এর মধ্যে দোলনের কেবল একটি ফ্রিকোয়েন্সিই রয়েছে।”
পানির এই বয়ে চলা কীভাবে ৯ দিন ধরে অব্যাহত ছিল তা দেখার জন্য গবেষকরা একটি গাণিতিক মডেল ব্যবহার করেছেন। পাশাপাশি ভূমিধসের কোণটিও পুনরায় তৈরি করেন গবেষকরা।
গবেষণা থেকে ইঙ্গিত মেলে, প্রতি ৯০ সেকেন্ডে পানি সামনে পিছনে ছিটকে বা ছড়িয়ে পড়ত এবং পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্য দিয়ে কম্পন পাঠাত, আর এর ফলেই সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সুনামিগুলোর মধ্যে একটি তৈরি হয়েছে।
এ গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ।