মোট লেনদেনের অর্ধেক হয়েছে বীমা ও খাদ্য খাতে। ব্যাংক, জ্বালানি, বস্ত্র খাতে শতাধিক কোম্পানির শেয়ার বিক্রির জন্য বসিয়ে রেখে হতাশ হয়েছে বিনিয়োগকারীরা।
Published : 22 Oct 2023, 05:09 PM
আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় দুই প্রধান দলের কর্মসূচির আগের সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে পুঁজিবাজারের আচরণে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়লেন।
সকালে সূচক ও শেয়ারদর বেড়ে লেনদেন শুরু হলেও বেলা গড়াতে থাকলে তা কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সূচক ১২ পয়েন্ট হারিয়ে শেষ হয় লেনদেন।
আর সকালে যারা শেয়ার কিনেছেন, বিকেলেই তাদের বহুজন ১০ শতাংশের বেশি লোকসানে আছেন।
আড়াই শতাধিক শেয়ারের দর ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকার মধ্যে এটিকে মাঝারি আকারের দরপতনই বলা যায়।
রোববার সকালে লেনদেন শুরু হয় ইতিবাচক প্রবণতা দিয়েই। বেলা সোয়া ১২টার মধ্যেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর সাধারণ সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়েই লেনদেন হচ্ছিল। সে সময় বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়ে হাতবদল হচ্ছিল। সেখান থেকে সূচক ২০ পয়েন্ট কমে যায় দুই ঘণ্টার মধ্যে।
শেষ পর্যন্ত ৩৫টি কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ১১৪টি। ১৬০টি কোম্পানি আগের দিনের দরে ফ্লোর প্রাইসে হাতবদল হয়েছে।
সব মিলিয়ে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩০৯টি কোম্পানির। তবে এর মধ্যে দেড়শটিরও বেশিতে লেনদেন ছিল নামমাত্র। ১০ লাখের বেশি শেয়ার হাতবদল হয়েছে, এমন কোম্পানির সংখ্যা কেবল ১৯টি। এক লাখের বেশি শেয়ার হাতবদল হয়েছে, এমন কোম্পানির সংখ্যা ১১২টি। তবে এসব কোম্পানিরও লাখ লাখ শেয়ার বিক্রির জন্য বসানো ছিল
এদিন ৮০টি কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি।
সব মিলিয়ে হাতবদল হয়েছে ৫৩৯ কোটি ৫৮ লাখ ২৯ হাজার টাকা, যা গত বৃহস্পতিবার ছিল ৫৫৪ কোটি ৯১ লাখ টাকার বেশি।
এই লেনদেন কোনোভাবেই ভারসাম্যপূর্ণ ছিল না। লেনদেনের প্রায় ২৪ শতাংশ হয়েছে সাধারণ বীমা খাতে, প্রায় ১১ শতাংশ হয়েছে জীবন বীমা খাতে আর খাদ্য খাতে হয়েছে ১৫ শতাংশের বেশি।
অর্থাৎ মোট লেনদেনের অর্ধেক হয়েছে বীমা ও খাদ্য খাতে। ব্যাংক, জ্বালানি, বস্ত্র খাতে শতাধিক কোম্পানির শেয়ার বিক্রির জন্য বসিয়ে রেখে হতাশ হয়েছে বিনিয়োগকারীরা।
কেনার পরেই দরপতন
প্রায় আট শতাংশ দর হারিয়ে পতনের শীর্ষে থাকা সি পার্ল বিচ রিসোর্ট ও স্পা লিমিটেডের দর দিনের প্রথম ভাগে কিছুটা বেড়ে হাতবদল হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ১৬ টাকার বেশি কমে দর স্থির হয়েছে ১৯২ টাকা ৩০ পয়সা।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির শেয়ার দিনের শুরুতে ১০ টাকা ৮০ পয়সা বেড়ে লেনদেন হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত ৩৬ টাকা ৪০ পয়সা হারিয়ে লেনদেন শেষ করে। অর্থাৎ দিনের শুরুতে যারা শেয়ার কিনেছিলেন তারা শেয়ারপ্রতি ৪৬ টাকার বেশি লোকসানে আছেন।
ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের দর আগের দিন ছিল ৭৫ টাকা ৩০ পয়সা। দিনের শুরুতে উঠে যায় ৭৮ টাকা ৫০ পয়সায়। তবে দিন শেষ করে ৭১ টাকা ৭০ পয়সায়। অর্থাৎ সর্বোচ্চ দরে যিনি কিনেছেন, তিনি শেয়ারপ্রতি ৭ টাকা ১০ পয়সা বা প্রায় ১০ শতাংশ লোকসানে আছেন।
এমনকি ৫০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে লিবরা ইনফিউশনের দর আগের দিনের তুলনায় ৭২ টাকা ৯০ পয়সা বাড়লেও বহু বিনিয়োগকারী পড়েছেন লোকসানে।
দিনের শুরুতে শেয়ারদর ১ হাজার ৬৪৬ টাকা উঠে গেলেও সেখান থেকে ২২৭ টাকা কমে স্থির হয়েছে ১৪১৯ টাকায়।
এভাবে দরপতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা প্রায় সবগুলো কোম্পানির শেয়ারদর দিনের শুরুতে বেড়ে গিয়েও পরে কমে যায়। ফলে যারা সকালে শেয়ার কিনেছিলেন, তারা সবাই বিকালেই বড় ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
এই তালিকার শীর্ষে ছিল নতুন তালিকাভুক্ত গ্রামীণ ক্যাপিটেক গ্রোথ ফান্ড। আগে থেকে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটগুলো তার সম্পদমূল্যের তুলনায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কম দরে লেনদেন হলেও এটির পালে হাওয়া লেগেছে।
টানা চার কর্মদিবস প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে ১০ টাকার ইউনিট দর এখন উঠেছে ১৪ টাকা ৬০ পয়সায়।
এর বাইরে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর ৯.৪০ শতাংশ বেড়েছে। অন্য কোম্পানির মধ্যে ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের দর প্রায় ৯ শতাংশ, অ্যামবি ফার্মার দর প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ, কোহিনুর ক্যামিকেলসের দর প্রায় ৬ শতাংশ, ডেল্টা লাইফের দর সাড়ে পাঁচ শতাংশ, লিবরা ইনফিউশনের দর প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাংশ বেড়েছে।
শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানির মধ্যে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট ও ইমাম বাটনের দর প্রায় ৫ শতাংশ এবং সোনালী আঁশের দর বেড়েছে সাড়ে চার শতাংশের মতো।
পতনের শীর্ষে যারা
সি পার্ল, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স ও ন্যাশনাল টি কোম্পানির শেয়ারদর ৭ শতাংশের বেশি, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের দর পাঁচ শতাংশের বেশি, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, ফাইন ফুডস, ন্যাশনাল ফিড মিলস, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্সের দর ৪ শতাংশের বেশি এবং বঙ্গজের দর প্রায় চার শতাংশ কমেছে।
আরও ১২টির দর ৩ শতাংশের বেশি এবং ১৮টির দর কমেছে ২ শতাংশের বেশি।