দারুণ পারফরম্যান্সে প্রিমিয়ার লিগের টেবিলে তিন নম্বরে উঠে এসেছে অ্যাস্টন ভিলা।
Published : 07 Dec 2023, 06:56 PM
উনাই এমেরি কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বদলে গেছে অ্যাস্টন ভিলা। প্রিমিয়ার লিগে ঘরের মাঠে তো রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে দলটি। যার সবশেষ নজির দেখা গেছে বুধবার রাতে। গত তিন আসরের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলে তিনে উঠে গেছে তারা। শীর্ষ চারে থেকে আগামী মৌসুমে তাদেরকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দেখার লোকের সংখ্যাও এখন কম নয়।
স্কোরলাইন বলছে, ভিলা পার্কে সিটিকে ১-০ গোলে হারিয়েছে অ্যাস্টন। কিন্তু ম্যাচে তাদের দাপটের চিত্র কী আর এতে ফুটে ওঠে! পুরোটা সময় যে সিটিকে একরকম কোণঠাসা করে রেখে আক্রমণের ঝড় তুলেছিল অ্যাস্টন। গোলের জন্য স্বাগতিকদের ২২ শটের বিপরীতে সফরকারীরা শট নিতে পারে স্রেফ ২টি!
নির্ধারিত সময়ের ১৬ মিনিট বাকি থাকতে করা লেওন বেইলির জয়সূচক গোলে ছিল ভাগ্যের ছোঁয়া। তার শট সিটির রুবেন দিয়াসের পায়ে লেগে জালে জড়ায়। তবে অ্যাস্টনের জয়টা ভাগ্যের জোরে পাওয়া নয়। তারা যে আরও ভালো স্কোরলাইনে জেতেনি, এটাই বরং অন্যায্য।
রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই গর্জে ওঠে পুরো ভিলা পার্ক। অ্যাস্টনের সমর্থকরা যেন তখন স্বপ্নের দেশে।
সিটিকে চারে নামিয়ে অ্যাস্টন এখন লিগের তিন নম্বরে। শীর্ষে থাকা আর্সেনালের চেয়ে তারা পিছিয়ে আছে কেবল ৪ পয়েন্টে। সবাই খেলেছে ১৫টি করে ম্যাচ।
পেপ গুয়ার্দিওলার কোচিংয়ের দলের বিপক্ষে ১৪ বারের সাক্ষাতে এমেরির প্রথম জয় এটি। ২০২২ সালের অক্টোবরে অ্যাস্টনের দায়িত্ব নেন তিনি। তখন লিগে ১৪ নম্বরে থাকা অ্যাস্টন অবনমন অঞ্চল থেকে স্রেফ ৩ পয়েন্ট ওপরে ছিল। সেখান থেকে লিগ শেষ করে তারা সাতে থেকে। জায়গা করে নেয় উয়েফা ইউরোপা কনফারেন্স লিগে।
এই মৌসুমে তো লিগে আরও দুর্বার অ্যাস্টন। সিটির বিপক্ষে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরের পর প্রথমবার জিতল তারা। লিগে ঘরের মাঠে টানা ১৪ ম্যাচ জিতে তারা স্পর্শ করল ক্লাব রেকর্ড।
লিগে ১৯৮০-৮১ মৌসুমের পর তাদের সবচেয়ে ভালো শুরু এটি। সেবার তারা জিতেছিল শিরোপা। সেই সাফল্যে পরের মৌসুমে প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছিল তখনকার ইউরোপিয়ান কাপে। নিজেদের একমাত্র ইউরোপিয়ান কাপও তারা জিতেছিল সেবারই।
১৯৯২ সালে ইউরোপিয়ান কাপ নাম বদলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ হওয়ার পর কখনও ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতাটিতে খেলতে পারেনি অ্যাস্টন। প্রিমিয়ার লিগের ১৯৯২-৯৩ আসরে দ্বিতীয় হয়েছিল তারা, কিন্তু তখন ইংল্যান্ড থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সুযোগ পেত কেবল একটি দল- লিগ চ্যাম্পিয়নরা। অ্যাস্টনকে তাই সেবার খেলতে হয়েছিল ইউরোপের দ্বিতীয় সেরা প্রতিযোগিতা উয়েফা কাপে, এখন যা ইউরোপা লিগ।
চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত যা পারফরম্যান্স, তাতে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার লড়াইয়ে ভালোভাবেই আছে অ্যাস্টন। অথচ এবার লিগে তাদের শুরুটা হয়েছিল নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিপক্ষে ৫-১ গোলের বড় হার দিয়ে। বিবিসি রেডিও ৫-এ আলাপচারিতায় সেটিই স্মরণ করিয়ে দিলেন স্কটল্যান্ডের সাবেক উইঙ্গার প্যাট নেভিন।
“মৌসুমের প্রথম রাউন্ডে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের কাছে ৫-১ গোলে হারতে দেখে অ্যাস্টন ভিলা সম্পর্কে আমি কতটা ভুল ছিলাম? এমেরি এই দলকে একটি ইউনিট হিসেবে এবং একটি দল হিসেবে ঐক্যবদ্ধ করে খেলাতে পেরেছে। প্রতিটি খেলোয়াড়ের বিশ্বাস এবং মনোভাব...যাদের বহু বছর ধরে সেরা দলগুলোর একটি হিসেবে দেখছি আমরা, সেই ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে তাদের মনে কোনো ভয়ডর ছিল না।”
“এটা স্পেশাল দল, যেটিকে এমেরি একত্রিত করেছে। আমি মনে করি না, এই মৌসুমে তাদের সেরা চারে থাকার বিপক্ষে কেউ বাজি ধরতে পারে।”
অ্যাস্টনের এই উত্থানের পেছনের মূল কারিগর অবশ্যই এমেরি। আর্সেন ভেঙ্গারের উত্তরসূরি হিসেবে আর্সেনালে অতটা প্রভাব হয়তো তিনি রাখতে পারেননি। যদিও এমেরির কোচিংয়ে পূর্ণ এক মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে পঞ্চম হয়েছিল আর্সেনাল। খেলেছিল ইউরোপা লিগের ফাইনালে। তবে এমেরির কোচিংয়ের মান কত উঁচুতে, সেটা প্রমাণ করে অন্য ক্লাবের হয়ে তার রেকর্ড।
এমেরির হাত ধরে তিনবার ইউরোপা লিগ জিতেছে সেভিয়া, একবার ভিয়ারিয়াল। এই মৌসুমে অ্যাস্টন ইউরোপা কনফারেন্স লিগ জিতলে এমেরির রেকর্ড সমৃদ্ধ হবে আরও।
৫২ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ কোচ অ্যাস্টনকে উজ্জীবিত করেছেন। খেলোয়াড়রা তার কৌশল গ্রহণ করেছে ভালোভাবে। সবকিছুর ফলাফল তাদের উজ্জ্বল পারফরম্যান্স।