কাতার বিশ্বকাপে কী কী নিষেধ? কেন?

মরুভূমিতে বিশ্বকাপের আয়োজন করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে কাতার; কিন্তু বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2022, 05:16 PM
Updated : 25 Nov 2022, 05:16 PM

পৃথিবীর নানা সংস্কৃতির সম্মিলন ঘটে ফুটবল বিশ্বকাপের আসরে, স্টেডিয়ামে দর্শক-সমর্থকরা উদযাপন করেন নানাভাবে; তবে এক্ষেত্রে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার যেমন কিছু নিয়ম রয়েছে, আয়োজক দেশ হিসেবে কাতারও জুড়ে দিয়েছে নতুন কিছু শর্ত।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে বসেছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসর। মাঠে, গ্যালারিতে কিংবা গ্যালারির বাইরে খেলোয়াড় ও সমর্থকরা কেমন আচরণ করবেন না, সঙ্গে কী কী রাখতে পারবেন না, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আরব দেশটির এসব শর্তারোপে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা তুলে ধরা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।

ওয়ান লাভ আর্মব্যান্ড

ইউরোপের সাতটি দেশ ইংল্যান্ড, ওয়েলস, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি ও ডেনমার্কের ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেনরা এবারের কাতার বিশ্বকাপে বাহুতে ‘ওয়ান লাভ আর্মব্যান্ড’ পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হুঁশিয়ারি করেছে, ওই ব্যান্ড পরলে মাঠে হলুদ কার্ড পাবেন টিম ক্যাপ্টেন।

কিন্তু ওয়ান লাভ আর্মব্যান্ড কী? ইউরোপের সাত জাতি ফুটবল দল কেন এটি পরতে চেয়েছে? আর ফিফাই বা কেন তাতে বাধ সেধেছে?

মূলত এই আর্মব্যান্ডের মাধ্যমে ইউরোপে সকল প্রকার জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, বয়স, বিশ্বাস, সংস্কৃতি আর যৌনতার ক্ষেত্রে বৈষম্যের বিরোধিতা করা হয়।

আর্মব্যান্ডটিতে হার্ট বা হৃদয় আকৃতির মাঝে রঙধনু পতাকা রয়েছে, তার মাঝে রয়েছে ইংরেজি সংখ্যা ওয়ান। এর একপাশে লেখা ‘ওয়ান’, অপরপাশে লেখা ‘লাভ’। এজন্য এই আর্মব্যান্ডটিকে ‘ওয়ান লাভ আর্মব্যান্ড’ বলা হয়।

নেদারল্যান্ডসের ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘রয়্যাল ডাচ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন’ (কেএনভিবি) ২০২০ সালে সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইনের অংশ হিসাবে এই প্রতীকের প্রকাশ ঘটায়।

কিন্তু ফিফার নিয়মানুযায়ী, ফুটবল মাঠে রাজনৈতিক, ধর্মীয় কিংবা ব্যক্তিগত কোনো বার্তা বা স্লোগান নিষিদ্ধ। ফলে কাতার বিশ্বকাপে ওয়ান লাভ আর্মব্যান্ডের পরিবর্তে ‘নো ডিসক্রিমিনেশন’ লেখা আর্মব্যান্ড পরার পরামর্শ দেয় ফিফা।

ওই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার জার্মান-জাপানের ম্যাচে খেলার শুরুর আগে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে প্রতিবাদ জানায় জার্মানির খেলোয়াড়রা।

মাঠের বাইরে প্রাক্তন এক ড্যানিশ প্রধানমন্ত্রী, জার্মান ফেডারেল মিনিস্টার, বিবিসির স্পোর্টস প্রেজেন্টার এবং ইংল্যান্ডের সাবেক নারী খেলোয়াড় অ্যালেক্স স্কটকে রেইনবো আর্মব্যান্ড পরতে দেখা যায়। ড্যানিশ এক টিভি রিপোর্টার ওয়ান লাভ আর্মব্যান্ড পরেছিলেন, পরে কাতারি এক কর্মকর্তা তাকে সেটি খুলে ফেলতে বলেন।

বিয়ার

বিবিসি জানিয়েছে, কাতারে অ্যালকোহল বিক্রি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে টুর্নামেন্টের মাত্র দুই দিন আগে ফিফা হঠাৎ নীতি পরিবর্তনের আগ পর্যন্ত স্টেডিয়ামের ভিতরে অ্যালকোহল পরিবেশন করা হচ্ছিল।

শেষ মুহূর্তে অ্যালকোহল নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বিশ্বকাপের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং মদ উৎপাদনকারী কোম্পানি বাডওয়াইজারের জন্য তিক্ত পরিস্থিতির জন্ম দেয়। টুইটারে এক পোস্টে ওই ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েও পরে টুইট মুছে ফেলে বাডওয়াইজার।

বিবিসি লিখেছে, স্টেডিয়ামের ভেতরে অ্যালকোহল নিষিদ্ধ করা হলেও ‘ফ্যান জোনে’ বিয়ার সরবরাহ করা হচ্ছে, যেখানে বড় পর্দায় খেলা দেখছেন দর্শকরা।

বাকেট হ্যাট

খানিকটা বালতির মত দেখতে গোলাকার টুপি ওয়েলস ফুটবল দর্শকদের প্রতীক হয়ে উঠেছে। কিন্তু ওয়েলসের দর্শকরা কাতার বিশ্বকাপে রেইনবো বা রঙধনু রঙের ওই টুপি পরায় তাদের জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। সেসব টুপি বাজেয়াপ্ত করেছে কাতার কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।

ওয়েলস ফুটবলের প্রাক্তন অধিনায়ক লরা ম্যাকঅ্যালিস্টার স্টেডিয়ামে প্রবেশের সময় এক কর্মকর্তা তাকে সেই টুপি খুলতে বলেছিলেন। তবে এ ব্যাপারে ফিফার পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য জানতে পারেনি বিবিসি।

নাঙ্গা হতে মানা

স্টেডিয়ামে উচ্ছ্বসিত দর্শকরা অনেক সময় গোল উদযাপন করতে পরনের পোশাক খুলে ফেলেন। কিন্তু কাতারের তাতে আপত্তি আছে। সরকারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের মাঠে শার্ট খুলে ফেলা স্বাভাবিক ব্যাপার হলেও কাতারে এর জন্য সমর্থকদের জরিমানা করা হতে পারে।

টয়লেট ছাড়া যেখানে সেখানে প্রস্রাব করা, ময়লা আবর্‌জনা ফেলা এবং ধূমপানও নিষিদ্ধ। বাদ্যযন্ত্র ও ভুভুজেলা বাঁশি বাজালেও হতে পারে শাস্তি।

‘নো লাভ’

কলারে ‘লাভ’ লেখা শার্ট পরতে পরতে পারবেন না বেলজিয়ামের সমর্থকেরা। বেলজিয়াম বলছে, ফিফা তাদের সেটি খুলে ফেলতে বলেছে। ওই শার্টে রঙধুন রঙ রয়েছে।

রংধনু রঙ ‘এলজিবিটিকিউ প্লাস’ বা সমকামীদের অধিকারের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে সে কারণে ফিফা আপত্তি তোলেনি। বেলজিয়ামের মিউজিক ফেস্টিভাল টুমোরোল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্যক সংযোগের কারণে ওই চিহ্ন পরিহার করতে বলেছে ফিফা। ‘হিউম্যান রাইটস ফর অল’ লেখা শার্ট পরার অনুমতি দিতে ড্যানিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের অনুরোধও রাখেনি ফিফা।

মরুভূমিতে বিশ্বকাপের আয়োজন করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে কাতার। স্রেফ ৩৪ কিলোমিটারের মধ্যে আট স্টেডিয়াম নিয়ে বিশ্বকাপের ২২তম আসর আয়োজন করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।

তবে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি কাতারের। প্রথমে আয়োজক স্বত্ব পাওয়া নিয়ে নানা কথা হয়েছে। অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুসহ আরও অনেক কিছু নিয়েই সমালোচনার মুখে দেশটি। অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি আচরণ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে; যদিও কাতার বলছে, সব তারা পর্যালোচনা করছে।

Also Read: কাতার বিশ্বকাপে স্টেডিয়ামে ‘অ্যালকোহল নিষিদ্ধ’

Also Read: পর্দা উঠল কাতার বিশ্বকাপের