মেসিদের প্রস্তুতিতে মহারণের আবহ

অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ সামনে রেখে এক মুহূর্তও যেন নষ্ট করতে রাজি নন আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়ের দোহা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2022, 05:59 AM
Updated : 3 Dec 2022, 05:59 AM

এদিন একেবারে ভিন্ন দৃশ্য। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর মাঠের দক্ষিণ দিকে চারটি গোলপোস্ট, উত্তর দিকে আরও চারটি। অন্য দিনের চেয়ে সাজানো ‘ডামিম্যানও’, কোণের সংখ্যাও বেশি। ফিনিশিং আরও নিখুঁত করতে ছোট-ছোট পোস্ট চারটি আগে থেকে সাজানো। আর্জেন্টিনার অনুশীলনের শুরু থেকে এমন আয়োজন আর দেখা যায়নি এর আগে। 

গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য মেসি-দিবালাদের প্রস্তুতি দেখার জন্য বরাবরের মতো এদিনও বরাদ্দ মাত্র ১৫ মিনিট। এই স্বল্প সময়েই বোঝা গেল নকআউট পর্বের মহারণে আটঘাঁট বেঁধেই নামবে ১৯৮৬ সালের পর তৃতীয় বিশ্বকাপ শিরোপার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকা আর্জেন্টিনা। 

গত কয়দিন সংবাদকর্মীদের জন্য বরাদ্দ থাকা সময়ে কেবল খেলোয়াড়দের জগিং, জাগলিং, পাসিং, কিছু শুটিং অনুশীলন সারতে দেখা গেছে। ওই প্রস্তুতিতে সিরিয়াস ভাব ফুটে ওঠেনি সেভাবে। হুলিয়ান-এনসোদের দেখা গেছে নির্ভার চিত্তে, হাসিখুশি আবহে প্রস্তুতি নিতে। শুরু থেকে মাঠে এতগুলো পোস্ট, কোণ কিংবা ডামিম্যানের দেখাও মেলেনি। 

এমনকি মাঠের মাঝখানে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে পাসিং অনুশীলনের ‘চোর-পুলিশ’ খেলা গত কয়েকদিন শুরুতে দেখা গেছে মাত্র একজনকে ‘চোর’ হতে। এদিন অনুশীলন হলো একজনের বদলে তিন-তিনজনকে চোর বানিয়ে! বলার অপেক্ষা রাখে না, নকআউট পর্বের পথচলায় শিষ্যদেরকে পাসিংয়ে আরও নিখুঁত, ধারাল দেখতে চাইছেন আর্জেন্টিনা কোচ। 

দুটি ঢাউস সাইজের বলও নিয়ে এলেন স্কালোনির সহকারীরা। কিছুটা গ্যাস বেলুনের মতো। একজন সেটা বুকে ধরে রেখেছেন, মেসি-মার্তিনেসদের দেখা গেল ড্রিবলিং করতে করতে, ডামিম্যানদের কাটিয়ে কিছুটা এগিয়ে সতীর্থদের পাস বাড়িয়ে সেটায় গিয়ে কখনও কাঁধ, কখনও কনুই ও কাঁধের মাঝামাঝি অংশ দিয়ে ধাক্কা দিতে। অস্ট্রেলিয়ার ডিফেন্ডারদের সম্ভাব্য কড়া চার্জের জবাবও হয়তো এভাবেই তৈরি করছেন স্কালোনি। 

টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার টগবগে আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাতারে নোঙর ফেলেছিল আর্জেন্টিনা। তবে শুরু থেকে কাতার বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের প্রস্তুতি রাখঢাকের অন্ত ছিল না কোচ স্কালোনির। অনুশীলনের টুকিটাকি সবকিছুই গণমাধ্যমের আড়ালে রাখতে চাইতেন ৪৪ বছর বয়সী এই কোচ। সৌদি আরবের বিপক্ষে হারের পর আরোপ করেন আরও কড়াকড়ি। ছবি তোলা যাবে না, লাইভ করা যাবে না, বিধি-নিষেধের যেন অন্ত নেই। এমনকি ওই সময়টুকুতে খেলোয়াড়দের সঙ্গে তাকে তেমন কোনো কাজও করতে দেখা যেত না। মেসি-পারেদেসরা মাঠে ঢুকতেন হৈ-হুল্লোড় করতে-করতে, বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা গণমাধ্যমকর্মীদের চোখের তৃষ্ণা, ফটোগ্রাফারদের ছবির দাবি মেটাতে।

অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ সামনে রেখে সে আড়াল ভাঙলেন স্কালোনি। যদিও নির্ধারিত ওই সময়ে কৌশলগত বিষয়গুলো স্বাভাবিকভাবে সামনে আনেননি আর্জেন্টিনা কোচ। সেরা একাদশে কাকে খেলাবেন, চোটে ‘ছিটকে যাওয়া’ আনহেল দি মারিয়ার শূন্যতা কাকে দিয়ে পূরণ করবেন, আক্রমণভাগে মেসির সঙ্গে লাউতারো মার্তিনেস নাকি হুলিয়ান আলভারেসকে বেছে নেবেন-এতসব প্রশ্নের কোনোটার আগল খুললেন না, কৌতুহলও মেটালেন না তিনি। কিন্তু ঠারেঠুরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, নষ্ট করার মতো এক মুহূর্ত সময়ও এখন আর হাতে নেই। তাই আগেভাগেই প্রয়োজনীয় সংখ্যায় পোস্ট, ডামিম্যান সবকিছু সাজিয়ে রেখেছিলেন স্কালোনি। 

মেসি-পারেদেস-দিবালাদেরদের তাই গা-গরমের সময় দেখা গেল প্রাণোবন্ত, প্রণোচ্ছল এবং একই সঙ্গে ভীষণ মনোযোগী। প্রতিটি পাস, শট আরও নিখুঁত করার তাড়া। কাতার বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের তিন নম্বর স্টেডিয়ামে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কারো বুঝতে বাকি থাকল না, নকআউট পর্বের মহারণের প্রস্তুতি কোমর বেঁধেই নিচ্ছে আর্জেন্টিনা। যার শুরুটা বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে।