ইউরোপা লিগে সেভিয়ার সপ্তম শিরোপা

১২০ মিনিটের লড়াইয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়লেও টাইব্রেকারের স্নায়ুচাপ সামলাতে পারল না রোমা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2023, 10:11 PM
Updated : 31 May 2023, 10:11 PM

পাওলো দিবালার দারুণ গোলে এগিয়ে গিয়ে ব্যবধান ধরে রাখতে পারল না রোমা। নিজেরাই নিজেদের জালে পাঠাল বল। এরপর আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে লড়াই জমে উঠল, অসংখ্য ফাউলের ঘটনায় ছড়াল বাড়তি উত্তাপ। কিন্তু আর কোনো গোলের দেখা মিলল না। ১২০ মিনিটের খেলা শেষে টাইব্রেকারে মিলল বিজয়ীর দেখা। আরও একবার ইউরোপা লিগ জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসল সেভিয়া।

হাঙ্গেরির পুসকাস অ্যারেনায় বুধবার রাতের ফাইনালে পেনাল্টি শুটআউটে ৪-১ গোলে জিতেছে স্প্যানিশ ক্লাবটি। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ১-১ গোলের পর অতিরিক্ত সময়ও ওই স্কোরলাইনে শেষ হয়।

টাইব্রেকারে সেভিয়ার চার জন শট নিয়ে সবাই পান সাফল্য। আর অসাধারণ সেভ করে নায়ক বনে যান তাদের গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো।

রোমার মাত্র একজন জালের দেখা পান, ব্রায়ান ক্রিস্তান্ত। তাদের দ্বিতীয় শট নেওয়া জানলুকা মানচিনির প্রচেষ্টা পা দিয়ে রুখে দেন বোনো। ইবানেসের শটেও ঠিক দিকে লাফ দেন তিনি, বলে অবশ্য হাত লাগাতে পারেননি, পোস্টে লাগে বল। সেভিয়া এগিয়ে যায় ৩-১ এ।

তাদের চতুর্থ শুটার গনসালো মনতিয়েলের শট পোস্টে লাগলে ক্ষনিকের জন্য আশা জাগে রোমার। তবে শট নেওয়ার আগেই গোলরক্ষক রুই পাত্রিসিও গোললাইন থেকে এগিয়ে যাওয়ায় আবার শট নেওয়ার সুযোগ পান মনতিয়েল। এবার কোনো ভুল নয়। বল জড়ায় জালে, শিরোপা জয়ের উৎসব শুরু হয় সেভিয়ার।

ইউরোপের দ্বিতীয় সেরা এই প্রতিযোগিতায় সেভিয়া আগে ছয়বার ফাইনালে উঠে প্রতিবারই ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছিল। ফাইনালে শতভাগ সাফল্যের সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখল তারা।

অন্যদিকে, রোমার কোচ জোসে মরিনিয়ো ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় আগে পাঁচবার ফাইনালে উঠে প্রতিবারই পেয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ। এবার তাকে ফিরতে হলো খালি হাতে, মন বেজার করে।

ম্যাচের আগে ফেভারিট প্রশ্নে প্রতিপক্ষকে এগিয়ে রাখেন ‘স্পেশাল ওয়ান’ মরিনিয়ো। তবে আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে শুনিয়েছিলেন তিনি ইতিহাস গড়ার প্রত্যয়। শুরুটাও হয় তাদের আশাব্যঞ্জক।

দুই ডিফেন্ডারের বোঝাপড়ায় দ্বাদশ মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পায় দলটি। ডি-বক্সে ডান দিক থেকে কাটব্যাক করেন মেহমেত সেলিক, ফাঁকায় পেয়ে যান লিওনার্দো স্পিনাস্সোলা; কিন্তু গোলরক্ষক সোজাসুজি শট নিয়ে হতাশ করেন তিনি।

৩৫তম মিনিটে দারুণ এক পাল্টা আক্রমণে এগিয়ে যায় রোমা। মাঝমাঠে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জের মুখে সেভিয়ার ইভান রাকিতিচ পজেশন হারান, বল ধরেই মানচিনি দারুণ পাসে খুঁজে নেন দিবালাকে। দুই ডিফেন্ডারের মধ্য দিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে দলকে উচ্ছ্বাসে ভাসান আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।

৪৪তম মিনিটে বাড়তে পারতো ব্যবধান। ডান দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে একজনকে কাটিয়ে বাইলাইন থেকে কাটব্যাক করেন দিবালা, দারুণ পজিশনে বল পান লরেন্সো পেল্লেগ্রিনি। কিন্তু শট নিতে দেরি করেন তিনি, পরে ডাইভ দিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন এই ইতালিয়ান মিডফিল্ডার।

প্রথমার্ধে সেভিয়ার আক্রমণভাগ তেমন আলো ছড়াতে পারেনি। রোমার রক্ষণও ছিল বেশ জমাট। সাত মিনিট যোগ করা সময়ের শেষ দিকে দূর থেকে চেষ্টা করেন রাকিতিচ। কিন্তু তার জোরাল শট গোলরক্ষককে ফাঁকি দিলেও পোস্ট এড়াতে পারেনি।

বিরতির পর চাপ বাড়ায় সেভিয়া। এরই মাঝে ৫৫তম মিনিটে ভুলটা করে বসেন ডিফেন্ডার মানচিনি। হেসুস নাভাসের একটি বিপজ্জনক ক্রস হেডে ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে পাঠান তিনি। স্বস্তির সমতায় ফেরে সেভিয়া।

৬৭তম মিনিটে দারুণ দুটি সুযোগ নষ্ট হয় রোমার। প্রথমে ট্যামি আব্রাহামের শট রক্ষণে প্রতিহত হওয়ার পর কাছ থেকে ইবানেসের শট হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট।

আট মিনিট পর রোমার ডি-বক্সে তাদের ডিফেন্ডার ইবানেসের ট্যাকলে লুকাস ওকাম্পোস পড়ে গেলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। প্রবল প্রতিবাদ জানায় রোমার খেলোয়াড়রা, ডাগআউটে মরিনিয়ো। ভিএআর মনিটরে দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টান রেফারি।

ছয় মিনিট যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে মুহূর্তের ব্যবধানে তিনটি ভালো সুযোগ পায় সেভিয়া। কিন্তু কেউ কাজে লাগাতে না পারলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত প্রথম ১৫ মিনিটে কোনো দলই পারেনি উল্লেখযোগ্য কিছু করতে। এই পর্বের দ্বিতীয়ার্ধও কেটে যাচ্ছিল সেভাবে। যোগ করা সময়ও পেরিয়ে যায় ১০ মিনিট। একেবারে শেষ মৃহূর্তে সুযোগ পেয়ে যায় রোমা; কিন্তু ইংলিশ ডিফেন্ডার ক্রিস স্মলিংয়ে হেড ক্রসবারে বাধা পায়।

৪০ ফাউলের (সেভিয়া ২১, রোমা ১৯) ঘটনায় বারবার ছন্দপতন এবং বাড়তি দৈর্ঘ্যের লড়াই শেষে শুরু হয় টাইব্রেকার। যেখানে স্নায়ুচাপ সামলাতে ব্যর্থ রোমা। তাতে আরও একবার বিজয়ীর বেশে রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন সেভিয়া।