তারকায় ঠাসা দল। আছে বিশ্বের সবচেয়ে বিধ্বংসী আক্রমণ ত্রয়ী। তারপরও মিলছে না প্রত্যাশিত ফল। আবারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে আগেভাগে বিদায় নিয়েছে পিএসজি। ইউরোপের মঞ্চে তাদের গত কয়েক বছরের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিলে খুব বেশি অবাক হওয়ার নয় যদিও। এমন কিছু দেখা যাচ্ছে তো কয়েক মৌসুম ধরেই। প্যারিসের দলটির ইউরোপ সেরা হওয়ার আরেকটি প্রচেষ্টা ফের ব্যর্থ হওয়ার পর তাই উঠছে প্রশ্ন, সমস্যা আসলে কোথায়?
২০২২-২৩ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ ষোলোর প্রথম লেগে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ১-০ গোলে হারের পর ফিরতি লেগে দারুণ কিছু করে দেখাতে হতো পিএসজিকে। কিন্তু উল্টো মুখ থুবড়ে পড়ে তারা প্রতিপক্ষের মাঠে, বুধবার হেরে যায় ২-০ গোলে।
বিশ্বের সবচেয়ে দামি দুই ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপে ও নেইমার আছে দলে, ব্রাজিলিয়ান তারকা চোটের কারণে ফিরতি লেগে যদিও খেলতে পারেননি। তাদের সঙ্গে আছেন সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের একজন লিওনেল মেসি। কিন্তু ১৮০ মিনিটে জালের দেখা পাননি কেউই।
সাবেক ইংলিশ মিডফিল্ডার ওয়েন হারগ্রিভসের মতে, দারুণ কয়েক জন খেলোয়াড় থাকলেও ঠিক দল হয়ে উঠতে পারেনি পিএসজি, “তাদের চমৎকার সব খেলোয়াড় আছে। তবে তারা দল হয়ে উঠতে পারেনি, যা প্রবল হতাশার। তারা অনেক দুর্দান্ত খেলোয়াড়কে একত্র করেছে, কিন্তু তাতে কিছু হয়নি, তারা কেবলই পিছিয়ে পড়ছে।”
আক্রমণভাগে এমবাপের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করেছে পিএসজি। তবে তাদের এমন কৌশলের বিপক্ষে ভালোভাবে প্রস্তুত ছিল বায়ার্ন। অন্যদিকে, মেসি ২০২১ সালে বার্সেলোনা থেকে পিএসজিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে অধারাবাহিক।
নেইমারকে ছাড়াও ফিরতি লেগে পিএসজিকে বেশ ভারসাম্যপূর্ণ দেখাচ্ছিল। কিন্তু মাঝমাঠে শক্তির অভাব ছিল প্রকট। ২০১১ সাল থেকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় মার্কো ভেরাত্তি, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা আর চোটের ছোবল এই ইতালিয়ান মিডফিল্ডারকে রাখে বাইরে।
২০১২ সালে কাতার স্পোর্ট ইনভেস্টমেন্ট পিএসজির মালিকানা নেওয়ার পর খেলোয়াড় কেনায় ১০০ কোটির বেশি পাউন্ড খরচ করেছে পিএসজি। গত এক দশকে লিগ ওয়ানে অবশ্য নিয়মিত সাফল্য পাচ্ছে তারা, আটবারই জিতেছে শিরোপা। ঘরোয়া ফুটবলের অন্যান্য শিরোপাও অনেকবার জিতেছে এই সময়ে।
কিন্তু ক্লাবের সবার যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বপ্ন, তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। নতুন মালিকানায় প্রথম চার মৌসুমে প্রতিবার তারা কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠেছিল। কিন্তু সবশেষ সাত মৌসুমের মধ্যে পাঁচবারই তারা বিদায় নিল শেষ ষোলো থেকে।
স্বপ্ন পূরণের খুব কাছে যেতে পেরেছিল তারা কেবল ২০২০ সালে। সেবার ফাইনালে হেরেছিল বায়ার্নের বিপক্ষে।
গত এক যুগে পিএসজি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তাদের ভরাডুবি থেকে খুব একটা শিক্ষা নেয়নি বলেই ধারণা। বায়ার্ন, লিভারপুল ও রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাব সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা।
কাতারি মালিকানায় পিএসজির ষষ্ঠ কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ে। কিন্তু অন্য পাঁচ জনের মতো তিনিও দলকে অধরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জেতাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আগের পাঁচ জনের মধ্যে দুজন- কার্লো আনচেলত্তি ও টমাস টুখেল প্যারিস ছাড়ার পর ইউরোপ সেরার ট্রফি এনে দিয়েছেন যথাক্রমে রিয়াল মাদ্রিদ ও চেলসিকে।
গত বছরের গ্রীষ্মে পিএসজির কোচ হিসেবে মাউরিসিও পচেত্তিনোর স্থলাভিষিক্ত হন গালতিয়ে। গত এক দশকে পিএসজিকে লিগ ওয়ান শিরোপা-বঞ্চিত করা দুই কোচের একজন তিনি। তার কোচিংয়ে ২০২১ সালে লিগ শিরোপা জিতেছিল লিল।
এবার লিগ টেবিলে এখনও শীর্ষে আছে পিএসজি। দুইয়ে থাকা মার্সেইয়ের চেয়ে তারা এগিয়ে আছে ৮ পয়েন্টে। আরেকটি লিগ শিরোপা হয়তো ঠিকই যোগ হবে দলটির শোকেসে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগ? যেন হাহাহারের প্রতিশব্দ ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের জন্য!
পুরনো সব ব্যর্থতা মুছে, স্বপ্নকে সত্যি করতে পিএসজির হয়তো সময় হয়েছে- নতুন করে ভাবার, পরিকল্পনা সাজানোর।