আচমকা ফুটবলকে বিদায় বললেন বেল

ফুটবলকে বিদায় বলার সিদ্ধান্ত আবেগঘন বার্তায় জানিয়েছেন এই তারকা ফরোয়ার্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2023, 04:17 PM
Updated : 9 Jan 2023, 04:17 PM

হুট করেই ফুটবলকে বিদায় বলে দিয়েছেন গ্যারেথ বেল। ওয়েলসের ৩৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড বুটজোড়া তুলে রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোমবার নিজের অ্যাকাউন্টে দুটি পৃথক বিবৃতিতে তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় দল ও ক্লাব ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার কথা জানান বেল।

“আমার ভালোবাসার খেলা ফুটবল খেলতে পারায় নিজেকে আমার অসীম ভাগ্যবান মনে হয়।”

স্কুলে পড়ার বয়সে বেল যোগ দেন সাউথ্যাম্পটনে। ২০০৬ সালের এপ্রিলে সিনিয়র দলে হয় অভিষেক। এর কিছু দিন পর দেশের হয়েও অভিষেক হয় তার। প্রায় ১৭ বছর পর ইতি টানলেন বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের।

১৯৫৮ সালের পর প্রথমবারের মতো ওয়েলসের বিশ্বকাপের মঞ্চে আসায় দারুণ ভূমিকা ছিল বেলের। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা এবং সর্বোচ্চ গোলদাতা বিশ্বকাপে দলকে টেনে নিতে পারেননি। কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যায় তার দল।

ওয়েলসের হয়ে ২০১৬ ও ২০২০ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেন বেল। দেশটির হয়ে সবচেয়ে বেশি ১১১ ম্যাচ খেলার কীর্তি তার।

দেশের হয়ে জেতা হয়নি কোনো শিরোপা। তবে ক্লাব ফুটবলে সাফল্য পেয়েছেন মুঠো ভরেই। খেলেছেন সাউথ্যাম্পটন, টটেনহ্যাম হটস্পার্স এবং রিয়াল মাদ্রিদে। তার সবশেষ দল ছিল লস অ্যাঞ্জেলেস। এক সময় ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে দামী ফুটবলার।

রিয়ালের হয়ে জিতেছেন পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা। অনেকের চোখে তিনিই ওয়েলসের সর্বকালের সেরা ফুটবলার। দেশের হয়ে আর না খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া তার জন্য ছিল ভীষণ কঠিন।

“ওয়েলস আমার পরিবার। আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত আমার ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত নেওয়া কঠিনতম সিদ্ধান্ত। আমি কীভাবে ব্যাখ্যা করব, এই দেশের এবং জাতীয় দলের অংশ হওয়াটা আমার কাছে কেমন? আমার জীবনের উপর এর প্রভাবই বা কেমন, সেটা কীভাবে লিখব? ওয়েলসের জার্সি পরার প্রতিটি মুহূর্ত কেমন অনুভব করেছি, সেটা কীভাবে প্রকাশ করব?”

“আমার উত্তর হচ্ছে, এগুলো সম্ভবত আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। কিন্তু ওয়েলস ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি মানুষ জাদুটা অনুভব করেন, শক্তিশালী এবং অনন্য উপায়ে প্রভাব রাখেন, এ কারণে আমি জানি, আমি যেটা অনুভব করছি, সেটা আপনারাও করছেন...এবং সেটা মুখে না বললেও।”

দেশের হয়ে যখনই নেমেছেন, নিজেকে উজার করে দিয়েছেন বেল। বিদায় বেলায় তার মনে হচ্ছে, দিয়েছেন যত, পেয়েছেন তার শতগুণ।

“আন্তর্জাতিক আঙিনার পথচলা আমার জীবনকে শুধু নয়, আমাকেও বদলে দিয়েছে। ওয়েলসের একজন হওয়া, জাতীয় দলে খেলা এবং অধিনায়ক হওয়ার সৌভাগ্য…এগুলো আমাকে অতুলনীয় অভিজ্ঞতা দিয়েছে। এই অবিশ্বাস্য দেশটির ইতিহাসের অংশ হতে পেরে, খেলতে পেরে আমি সম্মানিত এবং গর্বিত।”

স্মরণ করেছেন সতীর্থ, কোচ আর সমর্থকদের কথা। যাদের ছাড়া তিনি হয়ে উঠতে পারতেন না সময়ের সেরাদের একজন।

“আমি যাদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করেছি, তারা একসময় ভাই হয়েছে এবং যারা স্টাফ ছিলেন তারা হয়ে ওঠে পরিবার। দারুণ সব কোচের কোচিংয়ে খেলেছি এবং তাদের আকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছি। সবচেয়ে নিবেদিত সমর্থকদের ভালোবাসা পেয়েছি। এই পথচলায় পাশে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।”

“এখন আমি সরে দাঁড়াচ্ছি, কিন্তু যে দলটা আমার মধ্যে জেগে আছে, আমার শিরায় বয়ে চলেছে, সেটা থেকে দূরে যাচ্ছি না। সর্বপরি, আমার জার্সিতে ড্রাগনের লোগোটা আছে এবং এটাই আমার প্রয়োজন। ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী।”