চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
প্রত্যাবর্তনের আরেকটি রূপকথা লেখার প্রত্যাশার চাপেই কি ভেঙে পড়ল ইউরোপের সফলতম দলটি?
Published : 17 Apr 2025, 03:04 AM
তিন গোলের ঘাটতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া ভাব কেবল এমবাপে-ভিনিসিউসদের চোখে-মুখেই যা একটু ফুটে উঠল। যার প্রভাব এতটুকুও পড়ল না তাদের পারফরম্যান্সে। উজ্জীবিত মনোভাবে, চমৎকার পারফরম্যান্সে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রেকর্ড চ্যাম্পিয়নদের আবার পরাভূত করে সেমি-ফাইনালে পৌঁছে গেল আর্সেনাল।
সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে বুধবার রাতে কোয়ার্টার-ফাইনালের ফিরতি লেগে আর্সেনালের জয় ২-১ গোলে। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ গোলের অগ্রগামিতায় ২০০৯ সালের পর প্রথমবার ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতাটির শেষ চারে পা রাখল তারা। প্রথম লেগে ৩-০ গোলে জিতেছিল দলটি।
ঘুরে দাঁড়ানোর আরেকটি মহাকাব্য রচনার স্বপ্নে মাঠে নামলেও পুরো ম্যাচে ন্যূনতম সম্ভাবনাও জাগাতে পারেনি রেয়াল মাদ্রিদ। উল্টো বুকায়োর গোলে প্রথমে পিছিয়ে পড়ে তারা। মুহূর্তের মধ্যে সেটা ভিনিসিউস জুনিয়র শোধ করলেও, বিবর্ণতা ঝেড়ে ফেলতে পারেনি দলটি।
শেষ মুহূর্তে গাব্রিয়েল মার্তিনেল্লির গোলে উৎসব শুরু হয় মিকেল আর্তেতার দলের।
ম্যাচ শুরু হতেই দ্বিতীয় মিনিটে ভিনিসিউসের ক্রসে জালে বল পাঠান এমবাপে, যদিও পরিষ্কার অফসাইডে ছিলেন তিনি। পরের মিনিটে আবারও বাঁ দিক থেকে আক্রমণ শাণান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড, এবার ডি-বক্সে এমবাপেকে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টায় পারেননি।
পরের চার মিনিটে ভালো দুটি আক্রমণ করে আর্সেনাল। প্রথম লেগে দুর্দান্ত পারফর্ম করা বুকায়ো সাকা দুটি শট নেন, প্রথমটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার পরেরটি ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে আটকে দেন থিবো কোর্তোয়া।
ওই কর্নারের ফলশ্রুতিতেই সেমি-ফাইনালের পথে আরও এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পায় আর্সেনাল। কর্নারে উড়ে আসা বল কোর্তোয়া গ্লাভসে জমালেও, ছয় গজ বক্সের বাইরে মিকেল মেরিনোকে ডিফেন্ডার রাউল আসেন্সিও ফাউল করে বসেন। রেফারি অবশ্য শুরুতে দেখেননি; তবে ভিএআর মনিটরে দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান তিনি।
বায়ার্নকে বিদায় করে সেমিতে ইন্টার মিলান
সুযোগটি যদিও হেলায় হারান সাকা। ইংলিশ ফরোয়ার্ডের দুর্বল স্পট কিকে আটকে দলকে লড়াইয়ে রাখেন কোর্তোয়া।
২৩তম মিনিটে বক্সে মিডফিল্ডার ডেক্লান রাইসের ‘বাধায়’ এমবাপে পড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। তবে ‘কোনো ফাউল হয়নি’ দাবিতে তীব্র প্রতিবাদ জানায় আর্সেনাল। অনেক সময় নিয়ে ভিএআরে যাচাই করার পর, মনিটরে দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টান রেফারি।
সময় গড়ানোর সঙ্গে রেয়ালের আক্রমণভাগে বোঝাপড়ায় ঘাটতি যেন আরও স্পষ্ট হতে থাকল। তাদের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও সেই ধার চোখে পড়ল না। আর্সেনালও রক্ষণ করে তুলল জমাট। সব মিলিয়ে পুরো প্রথমার্ধে গোলের জন্য ছয় শট নিলেও একটিও লক্ষ্যে রাখতে পারল না শিরোপাধারীরা।
বিরতির আগে উল্টো আবার পরীক্ষা দিতে হয় কোর্তোয়াকে। দুরূহ কোণ থেকে গাব্রিয়েল মার্তিনেল্লির শট ঠেকিয়ে আরও ফিকে হতে থাকা আশা বাঁচিয়ে রাখেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক।
৫৬তম মিনিটে লক্ষ্যে প্রথম শট নিতে পারে রেয়াল মাদ্রিদ। তবে, পাল্টা আক্রমণে বেলিংহ্যামের পাস পেয়ে গতিতে এগিয়ে যাওয়ার বদলে আরও ধীর হয়ে পড়েন ভিনিসিউস। পরে শট নিলেও, তার দু্র্বল প্রচেষ্টা অনায়াসে ঠেকান গোলরক্ষক। পরের মিনিটে রদ্রিগোর কর্নারে কাছের পোস্ট দিয়ে বল জালে জড়াতে যাচ্ছিল, ক্রসবারের ওপর দিয়ে বল বাইরে পাঠান দাভিদ রায়া।
৬১তম মিনিটে একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন আনেন রেয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি। রদ্রিগো, ডাভিড আলাবা ও লুকাস ভাসকেসকে তুলে দানি সেবাইয়োস, ফ্রান গার্সিয়া ও এন্দ্রিককে নামান তিনি।
সতেজ পায়ে ভর করে ঘুরে দাঁড়াবে কী, উল্টো চার মিনিটের মাথায় গোল হজম করে দলটি। দেখেশুনে ছোট ছোট পাসে শাণানো আক্রমণে মেরিনো দারুণ এক থ্রু পাস বাড়ান বক্সে, আর চোখের পলকে ছুটে গিয়ে চিপ শটে কোর্তোয়ার ওপর দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন সাকা। তিনি বক্সের ঢোকার সময়ে একই লাইনে দাঁড়িয়েই ছিলেন চার ডিফেন্ডার!
বাকি অনিশ্চয়তাও যেন শেষ হয়ে যায়!
অবশ্য সেই ভাবনায় নির্ভার হয়েই কিনা মারাত্মক এক ভুল করে বসেন আর্সেনাল ডিফেন্ডার উইলিয়াম সালিবা। গোলরক্ষকের পাস পেয়ে মুভ করতে দেরি করে ফেললেন, ডান পাশ দিয়ে ছুটে আসছেন ভিনিসিউস, খেয়ালও করলেন না। সেই সুযোগে তার থেকে বল কেড়ে নিয়ে জোরাল শটে ব্যবধান আগের জায়গায় নিলেন ভিনিসিউস।
গোলটি করে সতীর্থদের জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেন ভিনিসিউস, গ্যালারির গর্জনও ফিরে আসে। তবে তা ওই পর্যন্তই। ভিনিসিউস নিজেও পারেননি আর কিছু করতে, তার সতীর্থরা পারেনি ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলতে।
বরং যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে রেয়ালের ব্যর্থতার গল্পের ষোলকলা পূর্ণ হয়। মেরিনোর থ্রু বল ধরে জয়সূচক গোলটি করেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্তিনেল্লি।
ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ফরাসি ক্লাব পিএসজির মুখোমুখি হবে আর্সেনাল।