ঢাকা, মে ১২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)----- শেষপর্যন্ত আত্মসমর্পন করতে হয়েছে শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীকে। তারা নিরস্ত্র হয়েই ঢাকা এসেছে ফুটবল খেলতে। ফুটবল খেলতে দরকার ফুটবলীয় অস্ত্র, সেটাও আনেনি সঙ্গে করে। না পায়ের কাজ, না ফুটবল মেধা--- সব জয়গাতেই তাদের ঘাটতি। এ দিয়ে তো আর পারা যায় না ফুটবলীয় অস্ত্রে সুশজ্জিত ঢাকা আবাহনীর সঙ্গে। নীল-আকাশীদের সাঁড়াশি আক্রমনের মুখে শেষপর্যন্ত ২-১ গোলের হার মেনে নিতে হয়েছে শ্রীলঙ্কা সেনাদলকে।
সাঁড়াশি আক্রমণ অথচ মাত্র এক গোলের ব্যবধান জয়! স্কোর লাইনের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যের পেছনে শ্রীলঙ্কার কৃতিত্ব যেমন আছে তেমনি আছে আবাহনীর ব্যর্থতাও। শেষপর্যন্ত নীল-আকাশীদের ব্যর্থতার দায়মুক্ত করেছেন শাহাজউদ্দিন টিপু। ৭৩ মিনিটে এমিলির বদলি হয়ে নামা এই স্ট্রাইকার মিনিট দুয়েক বাদে জোরালো এক শটে জয়সূচক গোলটি করে এএফসি প্রেসিডেন্ট কাপের 'বি' গ্র"পে আবাহনীর শুভযাত্রা নিশ্চিত করেছেন। তারপর ম্যাচ শেষে বিজয়ীর বেশে এসে বললেন, "সারা জীবনই তো 'সুপার-সাব' হয়ে রইলাম। এবারও আমি নিজের কাজটা করে দলকে জিতেয়েছি। এতেই আমার আনন্দ।"
তার এই গোল সবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে ১০ বছর পেছনে। সেই ১৯৯৯ সালে নেপালের দশরথ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ট্রফি জয়ের কারিগর তিনি। সাফ গেমস ফুটবলের ফাইনালে বদলি হয়ে নেমে টিপু দুর্দান্ত এক গোল করে সোনার হরিণকে মুঠোবন্দী করেছিলেন। ১০ বছর পরও নায়ক সেই স্ট্রাইকার! পুরো ম্যাচে খেলার সুযোগ পান না, মাঝে মাঝে বদলি হয়ে নেমে দলের দুঃসময়ে এরকম কিছু কীর্তি করে এখনো নিজেকে 'সুপার-সাবে'র বড় বিজ্ঞাপন হিসেবে তুলে ধরছেন।
অথচ মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেও দুর্ভাগ্য সঙ্গী হওয়ার কথা ছিল না। কারণ আবাহনী খেলেছে আর শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনী শুধুই ঠেকিয়েছে। আওদু ইব্রাহিম, ওয়ালী ফয়সাল, জাহেদ পারভেজরা রীতিমতো ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সেনাদলের জন্য। বারবার তারা প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে হানা দিলেও কাঙ্খিত গোলের দেখা পাচ্ছিলেন না। মাঝে মাঝে ডিফেন্স ভাঙ্গছে, কিন্তু তখন দাঁড়িয়েছে যাচ্ছেন গোলরক্ষক, কখনো-বা নিজেদের ব্যর্থতা, এভাবেই চলছিল তাদের চেষ্টা। এ দিয়ে যখন হচ্ছে না তখন ৪১ মিনিটে প্রায় ২৬/২৭ গজ দূর থেকে বাঁ-পায়ে অসাধারণ এক শট নেন ওয়ালী ফয়সাল, যা কেবল গভীর রাতে টিভির পর্দায় দেখা যায়। যেন কোনো এক ইউরোপীয়ান ফুটবলারের শট, স্বাভাবিকভাবেই তা ঠেকানোর ক্ষমতা নেই সেনাদলের গোলরক্ষক ফার্নান্দোর। কিন্তু গোল উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই আবার নেমে আসে হাতাশা ! ৪৩ মিনিটে আবাহনীর ঘানাইয়ান সামাদ ইউসিফ বল রিসভ করতে গিয়ে নিজেদের জালে জমা করে দিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেন নীল-আকাশীদের।
সেই অনিশ্চয়তা দূর করছেন বদলি খেলোয়াড় শাহাজউদ্দিন টিপু। ৭৫ মিনিটে মামুনুল ইসলাম মামুনের শট এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে ফিরে এলে তিনি বক্সের ভেতর থেকে জোরালো শটে বি. লিগ চ্যাম্পিয়নদের জয় নিশ্চিত করেন এএফসি প্রেসিডেন্ট কাপের এ গ্র"পের প্রথম ম্যাচে। তাতেই সবার মুখে হাসি ফোটে। তারপরও আবাহনীর কোচ অমলেশ সেনের মনে ভয় আছে, "আমাদের আরো বড় ব্যবধানে জেতা উচিত ছিল। অনেক সুযোগ নষ্ট করায় হিসেটা এখন কঠিন হয়ে গেছে।" ১৬ মে আবাহনী খেলবে শক্তিশালী আশগাবাদের সঙ্গে। তার আগে এ ম্যাচে বড় ব্যবধানের জয় পেলে আবাহনীর জন্য একটা সুবিধার ব্যাপার হতো।
কিন্তু সুযোগের পর সুযোগ নষ্ট করেছে আবাহনী। ২৪ মিনিটি ওয়ালী ফয়সাল গোলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। ইব্রাহিমের দুর্দান্ত থ্রুটি আয়ত্তেও নিয়েছিলেন তিনি। ধারকাছে কোনো ডিফেন্ডারও ছিল না কিন্তু শট নিতে দেরি করায় গোলরক্ষক ছোঁ মেরে বল গ্রিপে নিয়ে নেন। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে ওয়ালীর ক্রসে পা ছোঁয়ালেই যখন গোল হয় তখন ব্যর্থ হয়েছেন এমিলি। ৬১ মিনিটে ইব্রাহিমের ব্যাকহিলে সেনা ডিফেন্স যখন হা হয়ে যায় তখন আবুল অতি নিরীহ শটে বল তুলে দেন গোলরক্ষকের হাতে। মিনিট দুয়েক পরেই এমিলি পোস্টের সামনে থেকে ওপরে তুলে ওপর দিয়ে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ নষ্ট করেছেন।
এই শংকার জায়গা থেকে আবাহনী ম্যাচ জিতেছে, হাজার পাঁচেক দর্শক নিজেদের দলের জয়ের আনন্দ নিয়ে ফিরেছে এটাই আপাতত সন্তুষ্টির জায়গা। তার সঙ্গে জুটেছে সেনাদলের কোচ পদ্মনাভনের প্রশংসা, "আবাহনী ভাল খেলেছে। দুই বিদেশীই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।"
বাংলাদেশ : বিপ্লব, সুজন, মামুন, প্রাণতোষ, এমিলি (টিপু), জাহেদ পারভেজ, সিরাজী, সামাদ, আবুল (জয়), ওয়ালী, ইব্রাহিম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসবি/এমএম/২১৫০ঘ.