রেয়াল মাদ্রিদকে স্তব্ধ করে দেওয়া অসাধারণ দুটি ফ্রি-কিকের পেছনের গল্প শোনালেন ডেক্লান রাইস।
Published : 09 Apr 2025, 12:41 PM
টিভি ক্যামেরায় কয়েক ঝলক দেখা গেল রবের্তো কার্লোসকে। চেহারা দেখে অবশ্য মনোভাব বোঝা গেল না। রেয়াল মাদ্রিদ গোল হজম করার পর ক্লাবের কিংবদন্তি হিসেবে তার উচ্ছ্বাসেরও কোনো কারণ নেই। তবে গ্যালারিতে বসে যে গোলটি তিনি দেখলেন, তাতে তার হৃদয়ে অনুরণন জাগার কথা। নিজের সেরা সময়ের স্মৃতিও মনে দোলা দিতেই পারে!
বাঁকানো ফ্রি-কিক বললেই তো এই একজনের চেহারা চোখে ভেসে উঠতে বাধ্য। তিনি ব্রাজিল ও রেয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি। তবে ১৯৯৭ সালে ফ্রান্সের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য বাঁকানো যে ফ্রি-কিক নিয়েছিলেন এই লেফট ব্যাক, তাকে অমর করে রাখতে যথেষ্ট স্রেফ ওই গোলটিই। সেই কার্লোস এবার স্বাক্ষী হলেন আরেকটি স্মরণীয় বাঁকানো ফ্রি-কিকের। যে গোলের নায়ক ডেক্লান রাইস।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মঙ্গলবার গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই রেয়াল মাদ্রিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আর্সেনাল। তবে গোল হচ্ছিল না। ৫৮তম মিনিটে চোখধাঁধানো সেই মুহূর্ত। অসাধারণ এক শটে বাঁকানো ফ্রি-কিকে বল জালে পাঠান রাইস।
অতিমানবীয় পারফরম্যান্সে তখনও পর্যন্ত আর্সেনালকে আটকে রাখা রেয়ালের গোলকিপার থিবো কোর্তোয়ার কিছুই করার ছিল না।
সেই গোলের রেশ থাকতে থাকতেই আরেকটি ফ্রি-কিক। এবার ঠিক বাঁকানো নয়, রাইসের পা থেকে ছুটে গেল যেন এক গোলা। এবারও কোর্তোয়ার করার ছিল না কিছুই।
পেশাদার ক্যারিয়ারে তিনশর বেশি ম্যাচ খেলে সরাসরি ফ্রি-কিক থেকে কখনও কোনো গোল ছিল না রাইসের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে এক ম্যাচে সরাসরি ফ্রি-কিক থেকে দুটি গোল ছিল না কারও। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাজা রেয়াল মাদ্রিদের এমন কিছু হজম করার অভিজ্ঞতা তো ছিলই না। সব হয়ে গেল এক ম্যাচেই। করে দেখালেন রাইস।
রাইস ম্যাচের পর জানালেন, রেয়ালের দেয়ালের পাশ দিয়ে বাঁকানো ফ্রি-কিক নেওয়ার ভাবনা একেবারে শেষ মুহূর্তে আসে তার মাথায়।
“এই রসদ জমা ছিল। তবে আমি অনেক বেশিই দেয়ালে বল মেরেছি বা বারের ওপর দিয়ে চলে গেছে। মূলত চেয়েছিলাম ক্রস করতে। এরপর হুট করে দেয়ালটা চোখে পড়ল, গোলকিপারের পজিশন দেখে… ভাবলাম, চেষ্টা করে দেখি (পাশ দিয়ে বাঁকানো শট নিতে)…।”
ফ্রি-কিকের প্রেক্ষাপট পরে আরেকটু বিশদ ব্যাখ্যা করেন ২৬ বছর বয়সী মিডফিল্ডার। যে দূরত্ব ফ্রি-কিক ছিল, তাদের প্রথম পরিকল্পনা ছিল গোলমুখে ক্রস করা। দলের সেট-পিস কোচ নিকোলাস ইয়েভের টাচলাইন থেকে তেমন পরামর্শই দিয়েছিলেন। কিন্তু কীভাবে তা বদলে গেল, শোনালেন রাইস।
“পেছনে (পোস্টে) তিনজন রেখে রিভার্স ক্রসের ভাবনা ছিল আমাদের। তবে বুকায়ো (সাকা) বলল, ‘তোমার যদি মনে হয়…’ এবং আমারও মনে হলো, ‘তোমাকে বলি শোনো, আমি এটাই করব..।” এরপর যখন বল জালে ঢুকল, দুনিয়ার সেরা অনুভূতি সেটা।”
“ওই অ্যাঙ্গল থেকে ক্রস করা খুব ভালো পরিকল্পনা মনে হচ্ছিল না, খুব সূক্ষ্ম ও কুশলী পাস হতে হতো সেটি। এজন্য মনে হলো, সরাসরিই চেষ্টা করে দেখি। মাঠে নির্দিষ্ট মুহূর্ত কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হয়। আমি খুবই খুশি, কারণ এটা ছিল জাদুকরী মুহূর্ত।”
প্রথম গোলের সেই সুবাস নিয়েই দ্বিতীয় গোলের প্রেরণা পেয়েছিলেন রাইস।
“প্রথমটির পর আমার আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে। দ্বিতীয়টিতে হারানোর কিছু আর ছিল না আমার।”
রাইসের জোড়া গোলের পর মিকেল মেরিনোর গোলে কোয়ার্টার-ফাইনালের প্রথম লেগে রেয়ালকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করে সেমি-ফাইনালের পথে অনেকটা এগিয়ে গেল আর্সেনাল। রাইসের উচ্ছ্বাস যেন কোনো বাধ মানছে না।
“সত্যি বলতে, আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। এত খুশি যে লাগছে! দুটি গোল করেছি আমার ক্লাবের হয়ে এবং রেয়াল মাদ্রিদকে হারিয়েছি, যারা এই প্রতিযোগিতার ঐতিহ্যবাহী এক ক্লাব। আমাদের জন্য এটা অনেক বড় এক উপলক্ষ।”
আর্সেনালের কোচ মিকেল আর্তেতাও মুগ্ধ রাইসের ফ্রি-কিক কীর্তিতে।
“যে-ই খেলাটির উদ্ভাবন করুক, এটিই হলো সৌন্দর্য! ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে সরাসরি ফ্রি-কিকে গোল ছিল না আামাদের। আজকে রেয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আমাদের ঘরের মাঠে দুটি করলাম ১৩ মিনিটের মধ্যে।”
“কেউ যদি এটা করতে পারত, সেটা ডেক্লানই… কী পরিষ্কারভাবেই না সে শট নেয়!”