তরুণ এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের দৃষ্টিতে ইতিহাসের সেরা দুই জন-লিওনেল মেসি ও পেলে।
Published : 14 Nov 2023, 10:55 PM
বাড়িতে মায়ের সঙ্গে বসে ব্রাজিল কোচ ফের্নান্দো জিনিসের দল ঘোষণা দেখছিলেন। নিশ্চিত না হলেও, পাওলিনিয়োর আশা ছিল তার নামটি শোনা যাবে কোচের কণ্ঠে। শুনলেনও। তারপরও শুরুতে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না আতলেতিকো মিনেইরোর এই ফরোয়ার্ড।
বিশেষ ওই মুহূর্ত, বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আসছে কলম্বিয়া ও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচ, ২০২৬ বিশ্বকাপ স্বপ্ন থেকে শুরু করে আরও অনেক বিষয় নিয়ে ফিফা ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন পাওলিনিয়ো। ফুটবলের চিরন্তন বিতর্ক ‘কে সেরা’ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে একজনকে বেছে নিতে পারেননি তিনি; বলেছেন দুজনের নাম- আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসি ও কিংবদন্তি পেলে।
বাছাইয়ে আগামী ১৭ নভেম্বর কলম্বিয়া ও ২২ নভেম্বর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলবে ব্রাজিল। লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের এবারের বাছাইয়ে টানা দুই জয়ে শুরু করলেও পরের দুই ম্যাচে হোঁচট খায় দলটি; ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ১-১ ড্রয়ের পর উরুগুয়ের মাঠে হেরে বসে ২-০ গোলে।
চার ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে তৃতীয় স্থানে থাকা দলকে চেনা পথে ফেরাতে কোচ পাঁচ নতুন মুখকে ডেকেছেন; তাদের মধ্যে একজন পাওলিনিয়ো। জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার আশা পূরণ হওয়ার উচ্ছ্বাসের কথা শোনালেন তিনি।
“যে ফর্মে ছিলাম, তাতে একটা সম্ভাবনা তো ছিলই। তবে আমি খুব বেশি প্রত্যাশা করিনি। কারণ, সেলেসাওদের অনেক খেলোয়াড় আছে। আমার পজিশনে ডাক পাওয়ার মতো অনেক অনেক খেলোয়াড় আছে। কিন্তু, ২০২৩ সালে আমি যে সব কাজগুলো করেছি, তার স্বীকৃতি পাওয়ায় খুব খুশি।”
“দল ঘোষণার লাইভ দেখছিলাম। ব্রাজিলের দল ঘোষণার লাইভ সবসময় দেখি, সেলেসাওদের অনুসরণ করি। বাড়িতে মায়ের সঙ্গে বসে দেখছিলাম। জানতাম, আমার সুযোগ আছে, নিজের নামটা শুনতে পারি, কিন্তু যখন শুনলাম, তখন বিস্মিত হয়েছিলাম।“
তখন যেন অবিশ্বাসের ঘোরে ছিলেন তিনি।
“এই মুহূর্তটির জন্য সারা জীবন স্বপ্ন দেখেছি এবং যখন নিজের নাম শুনলাম, বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। নিজেকে গুছিয়ে নিতে একটু সময় লেগেছিল; এরপর নিজেকে বললাম, ‘ওকে, এখন আমাকে যেতে হবে এবং সবসময় ডাক পেতে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে’।”
পাওলিনিয়োকে দলে ডাকার পেছনে কারণ হিসেবে জিনিস বলেন, তিনি খেলতে পারেন আক্রমণভাগের অনেক পজিশনে। পাওলিনিয়ো অবশ্য জানালেন, আক্রমণের সুর বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি গোল করার পজিশনে খেলতেই সাচ্ছ্বন্দ্যবোধ করেন তিনি।
“আতলেতিকোতে আমি স্বাধীনতা নিয়ে দ্বিতীয় ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলি। আমার মনে হয়, এই পজিশনেই খেলতে সাচ্ছ্বন্দ্যবোধ করি। আমি মনে করি, এই পজিশনেই আমার সেরাটা বেরিয়ে আসে; ইচ্ছা অনুযায়ী যেখানে খুশি ছোটার স্বাধীনতা থাকে, আক্রমণ তৈরি করতে পারি এবং গোল করতে পারি।”
সুযোগ পেলে যদি কলম্বিয়া ম্যাচে আলো ছড়াতে পারেন, তাহলে পাওলিনিয়োর সামনে খুলে যাবে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলার দরজা। ২৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড উন্মুখ হয়ে আছেন বৈশ্বিক ফুটবলের রোমাঞ্চকর ম্যাচটি খেলতে। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলতে আলাদা কোনো অনুপ্রেরণা লাগে না বলেও মনে করেন তিনি।
“আমি আসলেই রোমাঞ্চিত। এমন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ডাক পেয়ে ভীষণ খুশি। অনেকে প্রথমবারের মতো ডাক পায় প্রীতি ম্যাচগুলোর জন্য, কিন্তু এ মুহূর্তে ব্রাজিলের সামনে রয়েছে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কলম্বিয়া ও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচটি আমার জন্য হবে বিশেষভাবে আলাদা; কেননা, ম্যাচটা হবে মারাকানায়, আমার নিজের শহরে, রিও দে জেনেইরোতে। আমার পরিবারের সবাই ম্যাচটি দেখতে মাঠে আসবে বলে এটা আমার জন্য আরও দারুণ বিষয়।”
“আমি মনে করি না, এই মানের একটা ডার্বির জন্য অতিরিক্ত কোনো অনুপ্রেরণার প্রয়োজন পড়ে। আমার মনে হয়, এটা অর্থহীন কোনো প্রীতি ম্যাচের জন্য দরকার হতে পারে। আমরা এখনও আর্জেন্টিনাকে যত বেশি সম্ভব হারাতে চাই। দুর্দান্ত ফুটবল ইতিহাস আছে আর্জেন্টিনার। তারা সবসময় বিশ্বকাপ ও কোপা আমেরিকার মতো বড় শিরোপার জন্য লড়ে। তাদের দুর্দান্ত সব খেলোয়াড় আছে; সম্প্রতি দারুণ সাফল্য পেয়েছে। ব্রাজিলও সাফল্য চায়। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলা সবসময়ই রোমাঞ্চকর।”
শ্রেষ্ঠত্বের বিতর্কে পেলে ও দিয়াগো মারাদোনার মধ্যে ঢুকে পড়েছেন মেসি। পাওলিনিয়ো তার সেরার তালিকায় রেখেছেন পেলে ও মেসিকে। স্বদেশি কিংবদন্তিকে অবশ্য পরিয়ে দিয়েছেন রাজার মুকুট।
“আমি মনে করি, মেসি ও পেলে ফুটবল ইতিহাসে সবার সেরা। বল পায়ে তারা যা করেছেন, তার জন্যই তারা সেরা। যদিও আমি মনে করি, পেলে বাড়তি কিছু করেছেন; তিনি ফুটবলকে, খেলাটিকে বদলে দিয়েছেন, তিনি ‘ফুটবলের রাজা’। মেসি যখন তরুণ ছিলেন, তখন থেকেই একজন ভক্ত হিসেবে তাকে অনুসরণ করি। তিনি ম্যাচের পর ম্যাচ বল পায়ে যা করেছেন, অবিশ্বাস্য।”
এখন পাওলিনিয়োর স্বপ্ন পেলে ও মেসির মতোই বড় মঞ্চে আলো ছড়ানো, ব্রাজিলের বিখ্যাত হলুদ জার্সি গায়ে জড়িয়ে ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা।
“সারা জীবন ধরে বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখেছি। আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। এটা পূরণের জন্য সবকিছু করব। বিশ্বকাপে ব্রাজিলের জার্সি পরার অনুভূতিটা কেমন হবে, স্রেফ ভাবলেই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়।”
“বিশ্বকাপে খেলার জন্য আমি এখন আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ; কেননা, ব্রাজিল রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, আমরা দীর্ঘদিন বিশ্বকাপ জিতিনি এবং সারা দেশের জন্য ষষ্ঠ শিরোপা জয় অনেক বড় একটা স্বপ্ন। এটা ব্রাজিলের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এবং আমি আসলেই আশা করি, এটা জিততে পারি আমরা।”