ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
এভারটনের এই মাঠে মার্সিসাইড ডার্বিতে যে জয়-পরাজয়ের সমতা ছিল, তা রয়ে গেল আগের মতোই।
Published : 13 Feb 2025, 03:43 AM
এমন ঐতিহাসিক ম্যাচের শেষটা বুঝি এর চেয়ে দুর্দান্ত হতে পারতো না। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিল লিভারপুল। ম্যাচের তখন আর কয়েক সেকেন্ড মাত্র বাকি। তাতেই পাল্টে গেল চিত্রপট। দারুণ এক গোলে ফেভারিটদের রুখে দিয়ে, বিশেষ মুহূর্তটাকে স্মরণীয় করে তুলল এভারটন।
চলতি মৌসুম শেষে দীর্ঘদিনের আঙিনা গুডিসন পার্ক ছেড়ে যাচ্ছে এভারটন। ইংলিশ ফুটবলের অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই মাঠের সবশেষ মার্সিসাইড ডার্বিটি বুধবার ২-২ গোলে ড্র হয়েছে।
প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে বেতোর গোলে এভারটন এগিয়ে যাওয়ার খানিক পরই সমতা টানেন আলেক্সিস মাক আলিস্তের। দ্বিতীয়ার্ধে মোহামেদ সালাহর গোলে জয়ের সুবাস পাচ্ছিল লিভারপুল, কিন্তু অন্তিম সময়ে গোল করে তাদের মুঠো থেকে পয়েন্ট ছিনিয়ে নেন জেমস তার্কোভস্কি।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই নিয়ে টানা দুই ম্যাচ জয়শূন্য রইল লিভারপুল। গত সপ্তাহে দ্বিতীয় স্তরের দল প্লাইমাউথের বিপক্ষে হেরে এফএ কাপ থেকে বিদায় নেয় তারা। এবার প্রিমিয়ার লিগে জয়ের আশা জাগিয়েও পারল না দলটি।
অবশ্য এই এক পয়েন্টেই লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধারের পথে আরেকটু এগিয়ে গেল লিভারপুল। ২৪ ম্যাচে ১৭ জয় ও ৬ ড্রয়ে ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে তারা। ৭ পয়েন্ট পিছিয়ে দুইয়ে আর্সেনাল।
গত মৌসুমে এই মাঠের ডার্বিতে জ্যারড ব্র্যাথওয়েইটের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ২-০ ব্যবধানে জিতেছিল এভারটন। এবারও শুরুতে দলকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই ইংলিশ ডিফেন্ডার।
একাদশ মিনিটে মাঝমাঠে ফ্রি কিক পেয়ে দারুণ থ্রু বল বাড়ান ব্র্যাথওয়েইট, আর সবাইকে ফাঁকি দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে আগুয়ান গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন গিনি-বিসাউয়ের ফরোয়ার্ড বেতো।
এগিয়ে যাওয়ার হাসি এবার অবশ্য বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি এভারটন। পাঁচ মিনিট পরই ডান দিক থেকে সালাহর বক্সের মাঝে বাড়ানো ক্রসে লাফিয়ে হেডে সমতা টানেন আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার মাক আলিস্তের।
বিরতির মুহূর্ত আগে এগিয়ে যাওয়ার দারুণ একটি সুযোগ পেয়েও হারায় লিভারপুল। দমিনিক সোবোসলাইয়ের কোনাকুনি শটটি ঝাঁপিয়ে রুখে দেন গোলরক্ষক। আলগা বল পেয়ে তারপরও অবশ্য সুযোগ ছিল লুইস দিয়াসের সামনে; কিন্তু তিনি শটই নিতে পারেননি।
বিরতির পর আবার আত্মবিশ্বাসী শুরু করে এভারটন। ৫৩তম মিনিটে পরিষ্কার সুযোগও পায় তারা; কিন্তু বক্সে ফাঁকায় বল পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট হেডে হতাশ করেন আব্দুলাই দুকুরে।
প্রতিপক্ষের একের পর এক আক্রমণ সামলে ৭৩তম মিনিটে গোলের জন্য এই অর্ধে প্রথম শট নিতে পারে লিভারপুল এবং তা থেকেই এগিয়ে যায় তারা। কার্টিস জোন্সের শট রক্ষণে প্রতিহত হওয়ার পর, ডান দিকের পোস্টে ফাঁকায় পেয়ে জোরাল শটে বল জালে পাঠান সালাহ।
মার্সিসাইড ডার্বিতে এই নিয়ে অষ্টম গোল করলেন মিশরের ফরোয়ার্ড, এর চারটি গুডিসন পার্কে। এবারের প্রিমিয়ার লিগে তার মোট গোল হলো ২২টি, তিনটি কম নিয়ে তালিকার দুইয়ে আছেন ম্যানচেস্টার সিটির আর্লিং হলান্ড।
নির্ধারিত সময়ের দুই মিনিট বাকি থাকতে ব্যবধান বাড়িয়ে নেওয়ার দারুণ সুযোগ পেয়েও পারেননি সালাহ। তার বুলেট গতির শট দারুণ সেভে কর্নারর বিনিময়ে ঠেকান গোলরক্ষক।
এরপর দৃশ্যপট পাল্টে দেওয়া ওই মুহূর্ত। পাঁচ মিনিট যোগ করা সময়ও শেষেও চলছিল খেলা। শেষবারের মতো আক্রমণে ওঠে এভারটন এবং সতীর্থের হেড পাস পেয়ে তার্কোভস্কির ডান পায়ের জোরাল শট ঠিকানা খুঁজে পেতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো এভারটন।
অতি উচ্ছ্বাসে মাঠে ঢুকে পড়েন কয়েকজন দর্শক। শেষের বাঁশি বাজতেই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন দুই দলের কয়েকজন। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন এভারটনের দুকুরে। লিভারপুল কোচ স্লটকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান রেফারি। পরে গিয়ে লিভারপুলের কার্টিস জোন্স বহিষ্কার হন।
উত্তেজনায় ঠাসা লড়াইয়ের শেষটা এমন নাটকীয়ভাবেই হয়।
১৮৯২ সালে যাত্রা শুরু করা এই স্টেডিয়ামে ১২০ বার মুখোমুখি হলো দল দুটি। যেখানে দুই দলই সমান ৪১ বার করে জয়ের স্বাদ পেয়েছে।
গোল করার হিসাবেও খুব বেশি পার্থক্য নেই। এভারটন গোল করেছে ১৪৩টি, লিভারপুল ১৪৯টি।
এবারের লিগে অবশ্য খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই এভারটন। ২৪ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে ১৫ নম্বরে আছে ডেভিড ময়েসের দল।