Published : 15 Nov 2022, 12:18 PM
বরাবরই তিনি স্পষ্টভাষী, ইনিয়ে-বিনিয়ে বলায় অভ্যস্ত নন। তাই বলে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর সামর্থ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন মারিও লেমোস! বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক কোচের মনে হচ্ছে পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার এবার ‘কিছু একটা করবেন’, কিন্তু দলের জন্য পার্থক্য গড়ে দিতে পারবেন না!
বাংলাদেশ জাতীয় দলের দায়িত্বে থাকা বিদেশি কোচদের কয়েকজন কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে কথা বলেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে। নিজেদের দেশ, দলের তারকা, সম্ভাবনাময় উদীয়মানদের নিয়ে ভাবনাগুলো জানিয়েছেন বিশ্লেষণী চোখে। আজ থাকছে পর্তুগাল ও লেমোসকে নিয়ে।
২০ নভেম্বরে পর্দা উঠবে এবারের আসরের। দুইবারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে, ঘানা ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ‘এইচ’ গ্রুপে আছে পর্তুগাল। বিশ্বকাপের ইতিহাস উরুগুয়ের পক্ষে, তবে শক্তির বিচারে এগিয়ে পর্তুগাল। সে হিসেবে গ্রুপ পর্ব পার হওয়া পর্তুগিজদের জন্য অসম্ভব কিছু নয়। ২৪ নভেম্বর ঘানার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে পথচলা শুরু হবে ফের্নান্দো সান্তোসের দলের। রোনালদোরও।
ইংল্যান্ড, স্পেন, ইতালির লিগে আলো ছড়ানো রোনালদোর সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নেই। পর্তুগালের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার (১৯১টি) অভিজ্ঞতা, সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক গোলের রেকর্ডটাকে ১১৭-গোলের উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া, পাঁচবার বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জয়ের মতো কীর্তি জ্বলজ্বল করছে তার নামের পাশে। কিন্তু ইদানিং যেন পেয়ে বসেছে ৩৭ বছর বয়সের ভার।
গোল ও সাফল্য ক্ষুধা আছে ঠিকই, সেরা হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষাও আছে, কিন্তু আগের সেই গতি, ক্ষিপ্রতা গেছে হারিয়ে গেছে সময়ের চোরাস্রোতে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সেরা একাদশে নিয়মিত নন, কোচ এরিক টেন হাগের সঙ্গে বিরোধের খবর আসছে প্রতিনিয়ত। চলতি লিগে ইউনাইটেডের হয়ে খেলেছেন ১০ ম্যাচ, এর মধ্যে মাত্র চারটিতে ছিলেন শুরুর একাদশে। গোল পেয়েছেন ১টি!
২০১৬ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ, ২০১৯ সালে নেশন্স লিগের শিরোপা জয়- পর্তুগাল তাদের সেরা সাফল্যের সব স্বাদ পেয়েছে রোনালদোর হাত ধরেই, কিন্তু জাতীয় দলের জার্সিতেও এই মহাতারকা ইদানিং বড়ই বিবর্ণ। সবশেষ ৯ ম্যাচের আটটিতে পাননি জালের দেখা! গোলমেশিন রোনালদোর পায়ে গোলের এমন আকাল শেষ কবে দেখা গেছে!
পর্তুগালও এবার বিশ্বকাপ বাছাই পেরিয়েছে অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে। বাছাইয়ে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে সার্বিয়ার কাছে শেষ মুহূর্তের গোলে হেরে যাওয়াটা তাদেরকে ঠেলে দিয়েছিল প্লে-অফে। সেখানে তুরস্ককে ৩-১ গোলে হারিয়ে এবং নর্থ মেসিডোনিয়ার বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জিতে অর্জন করে কাতারে খেলার টিকেট। তারপরও রোনালদো-পেপেদের উপর আস্থা রাখার লোক কম নয়, কিন্তু যুক্তিবাদী লেমোস যে আবেগের ধার ধারার লোক নন।
“এটা রোনালদোর শেষ বিশ্বকাপ। আশা করি, সে কিছু একটা করবে, কিন্তু আমি মনে করি না, সে পার্থক্য গড়ে দিবে।”
পর্তুগালকে নিয়েও খুব আশাবাদী নন লেমোস। অতীত সাফল্য টপকাতে এবার সান্তোস দল গুছিয়েছেন জোয়াও কানসেলো, পেপে, রুবেন দিয়াস, বের্নার্দো সিলভা, ব্রুনো ফের্নান্দেস, জোয়াও ফেলিক্স ও রাফায়েল লেয়াওদের মতো অভিজ্ঞ ও তরুণের সমন্বয়ে। সব পজিশনে নির্ভর করার মতো খেলোয়াড় আছে বেশ।
পেপে ও দিয়াস ঠিকঠাক রক্ষণ সামলালে, বের্নার্দো সিলভা ও ব্রুনো ফের্নান্দেস মাঝমাঠের সুর বেঁধে দিলে রোনালদো-ফেলিক্সরা সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে অনেক হিসেব মিলে যেতে পারে পর্তুগালের। হয়ত বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা সাফল্য ছাপিয়ে যেতে পারবে তারা।
সেই ১৯৬৬ বিশ্বকাপে কিংবদন্তি ইউসেবিওর আলো ঝলমলে পারফরম্যান্সে পর্তুগিজরা তৃতীয় হয়েছিল। ৯ গোল নিয়ে ইউসেবিও হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। ২০০৬ সালে লুইস ফিগো-পাউলেতারা পারেনি অতীত সাফল্য টপকাতে; চতুর্থ হয়েছিল পর্তুগাল। গত বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব পেরুলেও শেষ ষোলোয় উরুগুয়ের কাছে হেরে বেজেছিল বিদায় ঘণ্টা।
পর্তুগালের পাঁড় সমর্থকরা এবারের বিশ্বকাপেও দল নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনবেন। কিন্তু বর্তমানে আবাহনী লিমিটেডের দায়িত্বে থাকা লেমোস সে দলে নেই। তিনি ফেভারিটের তালিকায় নিজের দেশকে রাখলেন না!
“যে দলগুলোকে দেখতে আমি তাকিয়ে আছে, সেগুলো হচ্ছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স।”
এই তিন দলের তিনটি আবার লেমোসের চোখে সমান ফেভারিট নয়। দুই বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স নয়, রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ৩৬ বছর বয়সী এই কোচের দৃষ্টিতে সেরা ফেভারিট।
“আমার ফেভারিট ব্রাজিল। আমি বিশ্বাস করি, এবারের বিশ্বকাপ জয়ের বড় সুযোগ আছে তাদের সামনে; কেননা, ব্রাজিল দল মেধাবী খেলোয়াড়ে ভরপুর।”