লা লিগা
দারুণ সব প্রত্যাবর্তনের গল্প লেখে অভ্যস্ত রেয়াল মাদ্রিদের উল্টো অভিজ্ঞতা হলো ভিয়ারেয়ালের বিপক্ষে।
Published : 20 May 2024, 01:04 AM
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের দুই সপ্তাহের কম সময়ের আগে বড় এক ধাক্কা খেল রেয়াল মাদ্রিদ। ভিয়ারেয়ালের বিপক্ষে এক পর্যায়ে তিন গোলে এগিয়ে গিয়েও জিততে ব্যর্থ হলো কার্লো আনচেলত্তির দল। দারুণ সব প্রত্যাবর্তনের গল্প লেখে অভ্যস্ত স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের উল্টো অভিজ্ঞতার তেতো স্বাদ দিলেন আলেকসান্দার সরলথ।
প্রতিপক্ষের মাঠে রোববার লা লিগার ম্যাচটি ৪-৪ গোলে ড্র করেছে চার ম্যাচ হাতে রেখে শিরোপা নিশ্চিত করা রেয়াল।
আগেভাগে শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় দলকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলাচ্ছেন রেয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি। এদিনও নিয়মিত একাদশের অনেককেই বাইরে রাখেন তিনি। শুরুর একাদশে আক্রমণভাগে ভিনিসিউস-রদ্রিগো-বেলিংহ্যামরা ছিলেন না। যদিও তার কোনো প্রভাবই পড়তে দেননি অন্যরা।
আগের দুই ম্যাচে জালের দেখা পাওয়া আর্দা গিলের এবার করেন জোড়া গোল। সঙ্গে হোসেলু ও লুকাস ভাসকেসের লক্ষ্যভেদে প্রথমার্ধেই ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় রেয়াল। কিন্তু, বিরতির পর প্রথম ১১ মিনিটেই সবকিছু পাল্টে দেন সরলথ। দলের চারটি গোলই করেন তিনি।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে শুরু থেকেই জমে ওঠে লড়াই। বল দখলে রেয়াল আধিপত্য করলেও, প্রথমার্ধে গোলের জন্য শট বেশি নেয় ভিয়ারিয়াল। তবে প্রথম আধা ঘণ্টাতেই দুবার বল জালে পাঠায় রেয়াল।
চতুর্দশ মিনিটে ব্রাহিম দিয়াসের পাস বক্সে পেয়ে বাঁ পায়ের শটে দলকে এগিয়ে নেন গিলের। আর ৩০তম মিনিটে লুকাস ভাসকেসের ক্রসে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন হোসেলু।
৩৯তম মিনিটে একটি গোল শোধ করে লড়াই জমিয়ে তোলার আভাস দেয় ভিয়ারেয়াল। সতীর্থের ক্রসে হেডে গোলটি করেন নরওয়ের ফরোয়ার্ড সরলথ।
বিরতির আগেই অবশ্য তাদের সেই স্বস্তি উবে যায়। সাত মিনিটের মধ্যে আরও দুটি গোল করে সহজ জয়ের সম্ভাবনা জোরাল করে রেয়াল।
৪০তম মিনিটে দিয়াসের দারুণ থ্রু বল বক্সে পেয়ে প্রথম ছোঁয়ায় নেওয়া শটে ব্যবধান বাড়ান ভাসকেস। আর ডান দিক থেকে তার পাস বক্সে ধরে জায়গা বানিয়ে কোনাকুনি শটে স্কোরলাইন ৪-১ করেন তুরস্কের ১৯ বছর বয়সী উইঙ্গার গিলের।
কিন্তু, তখন কে জানতো আট মিনিটের ঝড়ে সব হিসেব এভাবে পাল্টে দেবেন সরলথ।
৪৮তম মিনিটে ডান দিক থেকে সতীর্থের ক্রসে দারুণ হেডে আরেক দফা ব্যবধান কমান সরলথ। এতে ঝিমিয়ে পড়া লড়াইয়ে নতুন করে প্রাণ ফেরে। চার মিনিট পর দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে সতীর্থের থ্রু পাস ধরে ফের বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি, ডিফেন্ডার এদের মিলিতাও স্লাইডে ঠেকানোর চেষ্টা করেও পারেননি। বাঁ পায়ের নিচু শটে আন্দ্রি লুনিনকে পরাস্ত করে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ২৮ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
পরপর দুই গোল খেয়ে যেন রেয়ালের রক্ষণ এলোমেলো হয়ে পড়ে। তারই খেসারত দেয় তারা চতুর্থ গোল হজম করে। ৫৬তম মিনিটে পাসিং ফুটবলে দ্রুতগতিতে শাণানো আক্রমণে বেরার্দ মোরেনোর পাস বক্সে পেয়ে কোনাকুনি শটে সমতা টানেন সরলথ।
এই চার গোলে এবারের লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পথে বড় এক লাফ দিলেন সরলথ। ৩৩ ম্যাচে তার মোট গোল হলো ২৩টি, দ্বিতীয় স্থানে থাকা জিরোনার আর্তেম দোভিকের চেয়ে দুটি বেশি।
এরপর দুই দলেরই আক্রমণের ধার কমে আসে। বেশ কিছুক্ষণ কোনো পক্ষই পারছিল না ভীতি ছড়াতে।
৬৮তম মিনিটে দিয়াসকে তুলে রদ্রিগোকে নামান কোচ আনচেলত্তি। ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ডই দারুণ নৈপুণ্যে ৭৯তম মিনিটে ভালো একটি সুযোগ তৈরি করেন। একাধিক খেলোয়াড়কে ফাঁকি দিয়ে এগিয়ে যান বাইলাইনের কাছে, দুরূহ কোণ থেকে তার নেওয়া শট কর্নারের বিনিময়ে ফেরান গোলরক্ষক।
চার মিনিট পর দলের ও নিজের পাঁচ নম্বর গোল পেতে পারতেন সরলথ। তবে, সতীর্থের ক্রসে হেডটা করতে পারেননি তিনি। এতে স্মরণীয় এক জয়ের আশা জাগিয়েও পারেনি ভিয়ারিয়াল। তবে, রেকর্ড চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে তিন গোলে পিছিয়ে পড়ে একটি পয়েন্ট তুলে নেওয়াও বা কম কী!
লিগে টানা ৯ জয়ের পর হোঁচট খেল রেয়াল। ৩৭ ম্যাচে ২৯ জয় ও সাত ড্রয়ে তাদের পয়েন্ট ৯৪।
আগামী ২৫ মে লিগের শেষ রাউন্ডে রেয়াল বেতিসের বিপক্ষে খেলবে রেয়াল। এরপর, আগামী ১ জুন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের মুখোমুখি হবে ইউরোপের সফলতম ক্লাবটি।
আরেক ম্যাচে রায়ো ভাইয়েকানোকে ৩-০ গোলে হারিয়ে রানার্সআপ হওয়া নিশ্চিত করেছে বার্সেলোনা। তাদের পয়েন্ট ৮২।