“বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পাবে কি না নির্ভর করছে আইএমএফের বার্তার উপর। এখানেই ঋণ ছাড়ের গুরুত্ব।”
Published : 09 Apr 2025, 01:40 AM
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএমএফ) ঋণের পরবর্তী কিস্তি পেতে বাংলাদেশের জন্য হিসাব-নিকাশটা জটিল হয়ে উঠেছে। একদিকে রয়েছে আর্থিক নীতি ও পরিচালন ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার শর্ত, অন্যদিকে রয়েছে শর্ত পরিপালনের সক্ষমতা তৈরি না হওয়ার বাস্তবতা।
আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে বাংলাদেশ এখন যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়ার আশা করছে, তা বড় অঙ্কের না হলেও গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
তারা বলছেন, ঋণের অঙ্কের চেয়ে বাংলাদেশের সামনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে আইএমএফ যে ঋণের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে- বিশ্বকে সেই বার্তা দেওয়া। তা না হলে আটকে যেতে পারে অন্য ঋণদাতাদের বাজেট সহায়তার অর্থ।
বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামী বাজেট বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রয়োজন নগদ অর্থ। বাজেট সহায়তা লাগবে বাংলাদেশের। এটি আসবে বিশ্ব ব্যাংক ও এডিবির মাধ্যমে। তা আসবে কি না নির্ভর করছে আইএমএফের বার্তার উপর। এখানেই ঋণ ছাড়ের গুরুত্ব।”
আর্থিক সংকট সামাল দিতে ২০২২ সাল থেকে কয়েক দফা আলোচনা শেষে পরের ব্ছরের প্রথম দিকে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি করে বাংলাদেশ।
ঋণ চুক্তিতে আসার পর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার এবং ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করে আইএমএফ। গত বছর জুনে তৃতীয় কিস্তিতে ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
তবে মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, বিদেশি মুদ্রার নিট সঞ্চিতি বা রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ও রাজস্ব ব্যবস্থায় সংস্থার ঠিক করে দেওয়া শর্ত পরিপালন না করায় ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড় করেনি আইএমএফ।
ক্ষমতার পালাবদলের পর গত ডিসেম্বরে ঢাকা সফর করে আইএমএফ মিশন। সে সময় ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ চলতি বছরের ‘ফেব্রুয়ারি-মার্চের’ মধ্যে হাতে পাওয়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার।
সে সময় অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাটির পর্ষদের অনুমোদন পেলে বাড়তি অর্থ মিলিয়ে চতুর্থ কিস্তিতে মোট ১১০ কোটি ডলার পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।
কথা ছিল, তৃতীয় কিস্তির অর্থের ব্যবহার পর্যালোচনা শেষ করে ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটির পর্ষদ সভার পর ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ৬৪ দশমিক ৫ কোটি ডলার ছাড় করবে সংস্থাটি।
চতুর্থ কিস্তিতে অর্থ পেতে শর্ত ছিল চারটি। সেগুলো হল অর্থনীতির বহির্চাপ সামাল দিতে রাজস্ব আদায় জোরদার করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশ্নে সবুজ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে নীতিমালার বাস্তবায়ন।
এর মধ্যে বিনিময় হার ও রাজস্ব আহরণ নিয়ে শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে আইএমএফ সন্তুষ্ট হতে পারেনি।
ফেব্রুয়ারিতে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, দুটি শর্ত পূরণ না হওয়ায় আইএমএফের বিলম্বিত ঋণ প্যাকেজের চতুর্থ কিস্তির সঙ্গে পঞ্চম কিস্তির অর্থ জুন মাসে একসঙ্গে ছাড় হতে পারে।
এ অবস্থায় তৃতীয় কিস্তির অর্থের ব্যবহার ও চতুর্থ কিস্তির শর্ত পরিপালন পর্যালোচনার জন্য ঢাকা সফরে রয়েছে আইএমএফ মিশন।
কিন্তু যে কারণে আইএমএফ চতুর্থ কিস্তি নির্দিষ্ট সময়ে ছাড় করেনি তাতে খুব একটা উন্নতির খবর দিতে পারছে না সরকার।
এর ফলে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড় হবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কেন শর্ত পরিপালন করা যাচ্ছে না তার প্রকৃত কারণ তুলে ধরে আইএমএফ এর সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে।
সরকারের সামনে যত ‘চ্যালেঞ্জ’
ঋণের প্রতিটি কিস্তি ছাড় করতে আইএমএফ তার আগের কিস্তির অর্থের ব্যবহার পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। প্রয়োজনে শর্ত সংযোজন-বিয়োজন করে সংস্থাটি। তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের সময়ে রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রার শর্ত শিথিল করেছিল আইএমএফ।
এবার চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করতে বাংলাদেশকে মোটা দাগে কয়েকটি শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট শর্ত হচ্ছে, মুদ্রানীতির আরও সংকোচন, মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা, নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ।
অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর সংশ্লিষ্ট শর্ত হচ্ছে- মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়তি রাজস্ব আদায়, এনবিআরের রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করা এবং কর ছাড় বন্ধ করা ও কর আদায় প্রক্রিয়া পুরোটা অনলাইনভিত্তিক করা।
সরকারের আর্থিক বিভাগ সংশ্লিষ্ট শর্ত হচ্ছে, জাতীয় সঞ্চয়পত্রের উপর সুদ ভর্তুকি যৌক্তিক হারে নামিয়ে আনা। জ্বালানি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট শর্ত হচ্ছে, জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানো।
এসব শর্ত বাস্তবায়ন পরিস্থিতি গত ডিসেম্বরে যা ছিল তা থেকে খুব একটা উন্নতি হয়নি।
এমন প্রেক্ষাপটেই রোববার থেকে বাংলাদেশে সফর শুরু করেছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। তারা ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে।
এবারের মিশনেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। ১১ সদস্যের এই উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সরকারের অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবি, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে।
রোববার প্রথম দিনের বৈঠকে আইএমএফের কাছে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে আগামী জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
তার পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয়, আগামী জুন মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ঘরে নামলে মুদ্রার বিনিময় হার পুরোটা বাজারভিত্তিক করা যাবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছিল ৯ দশমিক ৩২ শতাংশে; যা ছিল ২২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
কিন্তু মঙ্গলবার প্রকাশিত বিবিএস এর তথ্যে দেখা যাচ্ছে, মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ হয়েছে।
বাকি শর্তগুলো বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গত ৩১ ডিসেম্বর ডলার কেনাবেচার পদ্ধতিতে আবার বদল এনে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন বিদেশি মুদ্রার লেনদেনে হস্তক্ষেপবিষয়ক নীতিমালা ঘোষণা করে, যাতে বিদ্যমান বিনিময় হার কার্যকরিতা সহজ হয়।
মুদ্রাবাজার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার আগে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়।
সে মাসে আইএমএফ প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে ঋণের কিস্তি ছাড়ের শর্ত হিসেবে মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে বলেছিল।
মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার প্রক্রিয়া হিসেবে বিদেশি মুদ্রার বেচাকেনায় ‘রেফারেন্স বেঞ্চমার্ক এক্সচেঞ্জ রেট’ বা ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
সার্কুলারে বলা হয়, এই ভিত্তিমূল্যের মধ্যে থেকে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনের অনুমোদিত কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহক ও ডিলারদের সঙ্গে নিজেরা আলোচনা করে নির্ধারণ করা দরে ডলারসহ বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচা করতে পারবে।
এর পর গত জানুয়ারি মাসের শুরুতে ডলারের বিনিময় হার ১২২ টাকা হয়। গত তিন মাসের বেশি সময় ধরেই তা একই জায়গায় আছে।
বাজারভিত্তিক হলে দর এক জায়গায় স্থির থাকত না মন্তব্য করে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “গত ডিসেম্বরে তো সার্কুলার দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, বিনিময় হার বাজারমুখী হবে, বাস্তবে তো হল না। এখনো অদৃশ্যভাবে তারা ডলারের দর নিয়ন্ত্রণ করছে।
“বিনিময় হার নিয়ে মনে হয় না আইএমএফ নমনীয় হবে। বাংলাদেশের এক সময়ে বাজারভিত্তিক হতেই হবে। এটি এখনই না হলে একবারে চাপ আসবে। যে যুক্তি দেখিয়ে বাজারভিত্তিক করা হচ্ছে না, তা তো একটি ধারণা মাত্র যে ডলারের দর অনেক বেড়ে যাবে। কতটা বাড়বে তা বাজারই ঠিক করুক।”
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিনিময় হার বাজারভিত্তিক হওয়াটা নির্ভর করছে আমাদের বৈদেশিক দায় কতটা বকেয়া আছে, তার উপর। এটি আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানি না। ব্যালেন্স অব পেমেন্টের যে তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করছে, তাতে তা প্রকাশ পায় না।”
তিনি বলেন, “যদি বকেয়া অনেক বেশি হয়, তাহলে হয়ত আরও দেরি হবে। আমাদের সক্ষমতা আরও বাড়ানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”
রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ায় গত সাত থেকে আট মাসে রিজার্ভ বিপিএম৬ পদ্ধতি (আইএমএফ) অনুযায়ী ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরেই রয়েছে। যদি সক্ষমতা না বাড়ত, তাহলে রিজার্ভ আরও কমে যেত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা ধীরে ধীরে সক্ষমতার দিকে যাচ্ছি। এখন আইএমএফ এর সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসতে হবে।”
সমঝোতায় না আসতে পারলে বিশ্বের আর্থিক সংস্থা ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে নেতিবাচক বার্তা যবে বলে মনে করেন জাহিদ হোসেন।
সরকারের বিনিময় হার ধরে রাখার ‘সময় আর নেই’ মন্তব্য করে তিন বলেন, “এখন তো ডলারের যোগান আগের চেয়ে ভালো। এখনই সময় বাজারমুখী করার। আইএমএফ মনে হয় না, এ বিষয়ে নমনীয়তা দেখাবে। তারা হয়ত বলবে, যেহেতু সার্কুলার হয়েছে তাই বাস্তবায়ন হচ্ছে না কেন লোক দেখানো কার্যক্রমে তো আইএমএফ রাজি হবে না।”
দীর্ঘদিন এক জায়গায় ধরে রাখলে হঠাৎ করেই ‘বড় চাপ’ তৈরি হতে পারে, আর তা হলে খুব দ্রুত টাকার মান কমে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, “সেটা মূল্যস্ফীতির জন্য ভালো হবে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যতটা এগিয়েছে বাংলাদেশ, তাতে নতুন চাপ আসবে। এই চাপ সাধারণ জনগণের ওপরই যাবে। সেখানে সরকার চেষ্টা করতে পারে, অন্যান্য নীতি সহায়তা দিয়ে চাপ কতটা কমানো যায়।”
ধীরে ধীরে বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিনিময় হার উন্মুক্ত করলে অর্থনীতি সেই চাপ সয়ে নিতে পারবে বলে মনে করেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।
নিট রিজার্ভের লক্ষ্যামাত্রা পূরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইএমএফ যে হিসাব করে নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে, তা পূরণ না হলেও বাংলাদেশ তার প্রায় কাছাকাছি অবস্থানে আছে।
“আগের চেয়ে গ্যাপ কমে প্রায় ছুঁই ছুঁই করছে। আশা করছি জুনের মধ্যেই আমরা নিট রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারব।”
ঈদুল ফিতরের আগে ২৭ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি মুদ্রার সঞ্চিতি (রিজার্ভ) ‘কিছুটা’ বেড়ে দুই হাজার কোটি (২০ বিলিয়ন) ডলারের ঘরে উঠেছে।
বিপিএম৬ পদ্ধতি অনুসারে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলার। আর ‘গ্রস’ রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক নিট বিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করে না, আইএমএফকে জানিয়ে দেয়।
রাজস্বে শক্ত পদক্ষেপ চায় আইএমএফ
ঋণের পরবর্তী দুই কিস্তি পেতে বাংলাদেশকে দেওয়া শর্তের মধ্যে রয়েছে চলতি অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায় জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়ানো। এজন্য ঋণ দাতা সংস্থাটির পরামর্শ ছিল এনবিআরকে দুই ভাগ করে রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করা।
সরকার রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করার ঘোষণা দিয়েছে ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগে। কর প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা দিলেও তাতে খুব একটা অগ্রগতি নেই। সোমবার আইএমএফ এর প্রতিনিধি দলটি বৈঠক করেছে এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
সেই বৈঠকে এনবিআরের পক্ষ থেকে আগামী অর্থবছরে অতিরিক্ত ৫৭ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার শর্ত শিথিল করতে বলা হয়েছে। অন্যান্য পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সময় লাগবে বলেও জানিয়েছে এনবিআর।
রাজস্ব খাতে আইএমএফের শর্ত মানতে এনবিআরের সক্ষমতা দ্রুত বাড়ানো ‘সম্ভব নয়’ মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরশেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইএমএফ সব সময়েই চাইবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সবকিছু চলুক। আমরাও চাই আন্তর্জাতিক মানে যেতে। কিন্তু দেখতে হবে এই চাওয়ার সঙ্গে বাস্তবের ফারাকটা কত?
“বাস্তবায়ন সক্ষমতা যতটুকু বাড়ানো যায় ততটুকু বাড়ছে কি না, তা পর্যালোচনায় নেওয়া উচিত।”
কর ছাড় ধীরে ধীরে তুলে দেওয়ার পাশাপাশি করহার আরও কমানোর পরামর্শ দিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, “সরাসরি কর আদায় বাড়াতে হবে। এটি কীভাবে করা হবে তার পরিকল্পনা করেছে এনবিআর। যে পরিকল্পনা করেছে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছে কি না, সেটি বড় বিষয়। এখন বাস্তবায়ন কতটা করেছে, তা স্বচ্ছতার সঙ্গে তুলে ধরা উচিত। এতে সমঝোতাটা সহজ হবে।”
ঋণ চুক্তিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে সরকারের ভর্তুকি কমিয়ে আনার শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। ভর্তুকি কমিয়ে আনতে এসবের দাম নিয়মিত আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে আসছে সরকার।
সরকার ভর্তুকি কমাতে দাম না বাড়িয়ে পরিচালন ব্যয় ও অবচয় কমিয়ে আনার কৌশল নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, জ্বালানির দর নির্ধারণ পদ্ধতিটা স্বচ্ছ করার শর্ত দিয়েছে আইএমএফ।
পুরনো খবর:
জুনে একসঙ্গে আসতে পারে আইএমএফ ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি: উপদেষ্টা
রাজস্ব বৃদ্ধি: সম্ভব বলছে আইএমএফ, আরও সময় চায় এনবিআর
আইএমএফের সঙ্গে বাজেটের আকার নিয়েও কথা হচ্ছে: অর্থ উপদেষ্টা
ঋণের শর্ত পর্যালোচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে রোববার বসছে আইএমএফ
রাজস্ব পরিস্থিতি জানতে এনবিআরের সঙ্গে বসছে আইএমএফ
বিনিময়হার বাজারমুখী করতে জুন পর্যন্ত সময় চায় বাংলাদেশ ব্যাংক