২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশে উন্নীত করতে হলে ৫ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে হবে।
Published : 08 Apr 2025, 12:17 AM
চলমান ঋণের শর্ত অনুযায়ী আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশে উন্নীত করার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জোর দিলেও তা কীভাবে আদায় হবে সেটির সুনির্দিষ্ট পন্থা বাতলাতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
ঢাকা সফররত আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থাটির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সোমবার এনবিআরের পর্যালোচনা ব্ঠৈকে বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
আলোচনাকালে দেশের বর্তমান বাস্তবতায় বাড়তি এ অর্থ আদায় ‘অসম্ভব’ তুলে ধরে এ শর্ত কমাতে এনবিআরের তরফে প্রস্তাব করা হয়। তবে প্রতিনিধিদল রাজস্ব বাড়াতে বাংলাদেশের সক্ষমতার কথা তুলে ধরে তা নাকচ করে দিয়েছে।
এদিন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানসহ আলাদাভাবে কাস্টমস, আয়কর ও ভ্যাট অনুবিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিনিধি দলটির সদস্যরা।
ঋণ সমঝোতা অনুযায়ী রাজস্ব খাতে সংস্কারের অংশ হিসেবে আগামী অর্থবছরে আইএমএফরের শর্ত পূরণ করতে হলে বর্তমানে যে রাজস্ব আহরণ করা হচ্ছে সেটির চেয়ে বাড়তি ৫৭ হাজার কোটি টাকা বাড়াতে হবে।
অপরদিকে বর্তমান কর-জিডিপি অনুপাত চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানোর তাগাদা দিয়ে আসছে এনবিআরকে।
দেশের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটির সবশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম নয়মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। শর্ত পূরণ করতে হলে বাকি তিন মাসে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা।
অপরদিকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশে উন্নীত করতে হলে মোট ৫ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে হবে।
বৈঠকের পর এনবিআরের সদস্য (আয়কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম বলেন, “আমরা গত অর্থবছরে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ কর-জিডিপি করেছি। আইএমএফ আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা জানে। তারাই তুলেছে। কিন্তু তাদের কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের সক্ষমতা রয়েছে বাড়তি আদায় করার।
“তাই তারা তাদের লক্ষ্যমাত্রার যে শর্ত তা থেকে সরে আসেনি। চলতি অর্থবছরে দশমিক ৫ শতাংশ কর-জিডিপি বাড়াতে হবে; তাতে সাকূল্যে অর্থবছরে রাজস্ব আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা।”
তবে আইএমএফের পরবর্তী পর্ষদ সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান থাকবেন তুলে ধরে তিনি বলেন, “আশা করছি, সেখানে তাদেরকে কনভিন্স করতে পারব।”
আর্থিক সঙ্কটে পড়ে দীর্ঘ আলোচনা ও সমঝোতা শেষে ২০২৩ সালে আইএমএফের থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ পায় বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ঋণের তিনটি কিস্তিতে প্রায় ২২১ কোটি ডলার মিলেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে জুনে ছাড় হওয়ার আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
ঋণের সঙ্গে আর্থিক খাতের সংস্কার, অভ্যন্তরীণ আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণের পাশাপাশি রাজস্ব সংস্কারের বেশ কিছু পরামর্শ মানার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ।
ওই সব শর্ত প্রতিপালনের বিষয়টি পর্যালোচনা সাপেক্ষে ধাপে ধাপে আসছে ঋণের কিস্তিগুলো। প্রতি কিস্তি ছাড়ের আগে সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল সংস্কারের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে ঢাকা সফর করে।
আগের মত এবারও ঢাকায় এসেছে সংস্থাটির ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল, যারা আগামী ১৭ এপ্রিল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করবে।
সফরের প্রথম দিন রোববার ব্যস্ত সময় পার করার পর দ্বিতীয় দিন সোমবার এনবিআরে আসে প্রতিনিধি দল।
এ বৈঠকের বিষয়ে ভ্যাট নীতি শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমাদেরকে আগামী অর্থবছরের বাড়তি ৫৭ হাজার কোটি টাকা কীভাবে আদায় হবে তা জানতে চেয়েছে। আমরা বলেছি, এটি অসম্ভব। আমরা তাদেরকে এটি কমাতে বলেছি তা তারা রাজি হয়নি।”
এ বিষয়ে আবার বুধবার এনবিআরের তিন অনুবিভাগের সঙ্গে আইএমএফ বসবে তুলে ধরেন এ কর্মকর্তা।
এ শর্তপূরণ ছাড়া এবং তাদের সঠিকভাবে বিষয়গুলো বোঝানো না গেলে তা আইএমএফের প্রতিনিধি দলের এ পর্যালোচনা সফরে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন ওই কর্মকর্তা।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা বলেন, তবে এবার আইএমএফের সঙ্গে এনবিআর ‘নেগোসিয়েশন’ করেছে বলে শর্ত শিথিল হতে পারে।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে আইএমএফের তরফে কিছু প্রস্তাবনাও আসে। এর মধ্যে রয়েছে- বিলাসবহুল পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো, বিভিন্ন খাতে যেসব কর অব্যাহতি রয়েছে তা চলতি জুনের পর বাদ দেওয়া এবং সব পণ্য ও সেবায় ১৫ শতাংশ স্ট্যান্ডার্ড ভ্যাট আরোপ করা।
এনবিআরকে নীতি প্রণয়নের বাইরে প্রশাসনিক সংস্কারের পথেও হাঁটতে হচ্ছে; এর মধ্যে রয়েছে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনার পৃথক করা, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়ণের অগ্রগতি, আয়কর বিভাগের ডিজিটালাইজেশন প্রকল্পের খসড়া প্রণয়নের অগ্রগতি, করপোরেট কর ও রিটার্ন অনলাইনে জমার সময়সীমা নির্ধারণ।
এছাড়াও চলমান আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির শর্তের আওতায় এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে তিনমাসে ১ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে এনবিআরকে।
বর্তমানে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত রয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এটি দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ করার শর্ত রয়েছে আইএমএফের; তাতে এ অর্থবছরে এনবিআরকে আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
আইএমএফের সঙ্গে বাজেটের আকার নিয়েও কথা হচ্ছে: অর্থ উপদেষ্টা
আট মাসে রাজস্ব আদায় পিছিয়ে ৫৮ হাজার কোটি টাকা
কর বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি কেন: এনবিআরকে আইএমএফ
ভাগ হচ্ছে এনবিআর: লাভ কী? জটিলতা কোথায়?
শুল্ক-কর না বাড়িয়ে কী করতে পারত সরকার?
কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বেরুতে ফের তাগিদ আইএমএফের
কর-জিডিপি অনুপাত: আইএমএফের শর্ত কঠিন হল
উন্নয়ন সহযোগীদের চাপ, ব্যাপক হারে কমবে কর অব্যাহতি: এনবিআর চেয়ারম্যান
ঋণের শর্ত পর্যালোচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে রোববার বসছে আইএমএফ
চার মাস পরও নেতিবাচক ধারায় রাজস্ব আদায়
জুনে একসঙ্গে আসতে পারে আইএমএফ ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি: উপদেষ্টা
চতুর্থ কিস্তি: আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নের হাল জানতে বসছে কমিটি