পরের কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনায় ঋণদাতা সংস্থাটির তরফে এ বিষয়ে জোর দেওয়া হয়।
Published : 04 Sep 2024, 12:35 AM
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে চলমান ঋণ চুক্তির আওতায় পরের কিস্তি ছাড়ের আগের আলোচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে আবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার এনবিআরের সঙ্গে আলোচনায় আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটির তরফে এ বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানসহ আয়কর, মূসক ও শুল্ক নীতি শাখার কর্মকর্তারা এবং আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দে অংশ নেন।
এনবিআরের সদস্য (মূসক নীতি) হোসেন আহমদ বলেন, “আইএমএফ বলেছে, আমাদেরকে কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”
কর অব্যাহতিসহ আইএমএফের শর্ত মেনে চলমান সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বৈঠকে এনবিআরের পক্ষ থেকে ভ্যাটের মেশিন (ইএফডি) বসানোর প্রকল্পটি ব্যর্থ (ফেইল) হয়ে গেছে বলে তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সংস্থাটির কাছে কারিগরি সহায়তার প্রস্তাবও দেওয়া হয়।
আইএমএফের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার সমঝোতা চুক্তিতে অন্যান্য শর্তের সঙ্গে করছাড় তুলে দেওয়া এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তা কমানোর বিষয়েও সম্মতি দেয় বাংলাদেশ।
গত জুনের মাঝে এনবিআরের কর, মূসক ও শুল্কের কর ব্যয় কত, এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি ও সবার জন্য তা প্রকাশের শর্ত জুড়ে দেয়।
সংস্থাটির শর্ত মেনে সংস্কারে নেমে কর ছাড়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আয়কর ও মূসকের প্রতিবেদন জুনের আগেই প্রকাশ করে এনবিআর। শুল্কের প্রতিবেদন তৈরি হলেও সকলের জন্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
মূলত এ শর্ত এনবিআরের জন্য দেওয়া আইএমএফের মূল শর্তের অংশ।
ঋণ চুক্তির আওতায় বলা হয়েছে, এনবিআরকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে একইভাবে আরও দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাড়তি দশমিক ৭ শতাংশ কর বাড়াতে হবে।
এ কর বাড়ানোর অন্য অনেক উপায়ের মাঝে একটি হচ্ছে কর অব্যাহতি কমানো, যাকে আইএমএফের ভাষায় বলা হয় কর ব্যয়।
আন্তর্জাতিক এ সংস্থার তরফে এমন চাপ থাকার পরও এনবিআর যে খুব বেশি কর অব্যাহতি কমিয়েছে তা না। যেটি হয়েছে তা হল, নতুন করে অব্যাহতি দেওয়ার মাত্রা কমেছে।
এর ফলও দেখা গেছে এনবিআরের রাজস্ব আহরণে। রাজস্ব আদায় বেড়েছে গত অর্থবছরে বেড়েছে তবে তা সরকারের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা লক্ষ্যমাত্রা, পরবর্তীতে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা, এমনকি আইএমএফের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রাও ছোঁয়নি।
সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে থেকে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ করে এনবিআর। এ সময় তিন লাখ ৮২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে অথচ সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। প্রথমে যা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
আইএমএফ অবশ্য কমিয়ে এ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল ৪ লাখ ৫০০ কোটি টাকা; এর তুলনায়ও ১৭ হাজার কোটি টাকা কম আদায় করে রাজস্ব আহরণের প্রধান এ সংস্থা।
তবে রাজস্ব আহরণে পিছিয়ে থাকলেও আইএমএফের সঙ্গে ঋণ চুক্তির অধীন অন্যান্য বিষয় খুব গুরুত্ব দিয়ে পরিপালন করছে এনবিআর। জুন অবধি সবগুলো মেনেই কাজ চলাল কথা বলেছেন কর্মকর্তারা।
আইএমএফের পরের বা চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার কথা ডিসেম্বরে। এর জন্য সেপ্টেম্বরের মধ্যে এনবিআরের মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল প্রণয়নের কথা ছিল।
জুন থেকে শুরু হওয়া গণ আন্দোলন, পরে সরকারের পদত্যাগ, নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা নেওয়াসহ নানান কারণেই প্রশাসনে অস্থিরতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোও বারবার বন্ধের কবলে পড়ায় এ কৌশলপত্র নির্দিষ্ট সময়ে প্রণয়ন সম্ভব না আইএমএফকে মঙ্গলবারের সভায় জানানো হয়েছে বলেন বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা।
অপরদিকে আয়কর অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমাদেরকে বলা হয়েছিল তিন-চারটি খাত ধরে কর বিশ্লেষণ করতে। আমরা ভূমিতে যেহেতু কর ফাঁকির বিষয়টি বরাবরই উচ্চারিত হয়। আমরা সে কাজটি করেছি এবং তাদের জানিয়েছি।
“ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসেবে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া থেকে শুরু করে অ্যাসেসমেন্ট এবং অডিটের সময়ে হিউম্যান ইন্টারেকশন কীভাবে কমাব তারা (আইএমএফ) তা জানতে চায়।”
এ সভায় আইএমএফ মূলত বাস্তবায়ন বা এনফোর্সমেন্ট কীভাবে হবে তা জানতে চেয়েছেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
আইএমএফের তরফে কমপ্লায়েন্স ইম্প্রুভমেন্ট প্লান বা এনবিআর আইএমএফের বিভিন্ন শর্ত কীভাবে কমপ্লাই করবে ও সেটি ইম্প্রুভ করবে সেই পরিকল্পনাও জানতে চাওয়া হয়।
ডিজিটালাইজেশন বিষয়ে একই রকম তথ্য জানা যায় মূসক অনুবিভাগ থেকে। তাদের বলা হয়, ভ্যাট অডিটের জন্য একটি সিলেকশন পদ্ধতি তৈরি করা যাতে অটোমেটিক্যালি অডিটের জন্য রিটার্ন নির্ধারণ হবে। মানুষের যোগযূত্র থাকবে না।
এ বিভাগ থেকে জানানো হয়, অব্যাহতি বাজেটের বাইরেও দেওয়া যায়, কিন্তু তুলে দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আদালতে যেতে পারে। ফলে আবার বাজেট ছাড়া সম্ভব না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এনবিআরের সদস্য হোসেন আহমদ বলেন, “কর অব্যাহতি তুলে দিতে বললেই যে অব্যাহতি বন্ধ করে দিব তা না।
“আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, দেশের স্বার্থ, দেশীয় প্রতিষ্ঠানের প্রটেকশনের মাধ্যমে যদি আরও বেশি ভাল হয় সেটিও আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। এটাকে আমরা কর অব্যাহতি না বলে কর ইনসেনটিভ (প্রণোদনা) বলবো।”
এ সময় তিনি কর অব্যাহতি কমছে ও রাজস্ব আদায় বাড়ার তথ্য তুলে ধরে বলেন, “উই আর অন রাইট ট্রাক।”
আইএমএফের চাপে বিশ্লেষণ, জানা গেল আমদানিতে করছাড় কত
অর্থবছর ২০২৩-২৪: রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ১৫%
আইএমএফের তৃতীয় কিস্তি ছাড়, রিজার্ভ বেড়ে সাড়ে ২৬ বিলিয়ন ডলার