তৃতীয় কিস্তির এ অর্থের সঙ্গে আরও কিছু ঋণ ছাড় হয়েছে এসময়ে।
Published : 27 Jun 2024, 10:35 PM
পৌনে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির আওতায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার ছাড় হওয়া এ ঋণের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া, আইবিআরডি (ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) ও আইডিবি (ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) থেকে মোট ৯০ কোটি ডলারও ছাড় হয়েছে।
সব মিলিয়ে এদিন ২ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার যোগ হয়েছে রিজার্ভে। এতে বাংলাদেশের রিজার্ভ গ্রস হিসাবে সাড়ে ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এদিন সন্ধ্যার কিছু পরে তৃতীয় কিস্তির অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে যোগ হয়েছে।
‘‘এ ছাড়া ঋণ হিসেবে আসা কোরিয়া, আইবিআরডি ও আইডিবি থেকে মোট ৯০ কোটি ডলার যোগ হয়েছে রিজার্ভে। তাতে প্রাথমিক হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।’’
এর আগে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত প্রধান কার্যালয়ে নির্বাহী বোর্ড সভায় তা অনুমোদন করা হয়েছিল।
তৃতীয় কিস্তি হিসেবে পাওয়া এ অর্থ আগে থেকে নির্ধারিত কিস্তির পরিমাণ এবং আগের দুই কিস্তির চেয়ে বেশি।
সময়ের পার্থক্যর কারণে বিশ্বের অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন এখনও চলছে। শুক্রবার রিজার্ভের চূড়ান্ত স্থিতি জানা যাবে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র।
তৃতীয় কিস্তিতে মোট ইসিএফ (এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি) ও ইইএফ (এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি) এর অধীনে ৯৩ কোটি ২০ লাখ ডলার (আইএমএফ মুদ্রা এসডিআর ৭০ কোটি ৪৭ লাখ) এবং আরএসএফ (রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি) এর অধীনে ২২ কোটি ডলার (এসডিআর ১৬ কোটি ৬৮ লাখ) পাবে বাংলাদেশ।
এ তিন খাত মিলিয়ে মোট ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে আইএমএফ। তবে চুক্তির শুরুতে যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তাতে এবার বাংলাদেশের পাওয়ার কথা ছিল ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
সে জায়গায় ইসিএফ ও ইইএফ এর বরাদ্দ দ্বিগুণ করে ৯৩ কোটি ২০ লাখ ডলার করেছে আইএমএফ। এভাবে মোট মঞ্জুর করা ঋণের মধ্যে তৃতীয় কিস্তিতে ছাড়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। কয়েক দফা আলোচনা শেষে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক সংস্থাটি।
ঋণ চুক্তি অনুমোদনের পর গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার হাতে পায় বাংলাদেশ। আর গত ১২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তিতে বাংলাদেশ পায় ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ জুন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতি ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস হিসাবে ২৪ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতির গ্রস হিসাবে তা ছিল ১৯ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করে না। শুধু আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়ে দেয়।
তৃতীয় কিস্তি ছাড় পেতে জুন শেষে নিট রিজার্ভ ১৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার রাখতে শর্ত দিয়েছে আইএমএফ, যা আগের শর্তে ছিল ২০ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। অন্যান্য শর্তে অগ্রগতি হওয়ায় বাংলাদেশের আবেদনে নিট রিজার্ভ সংরক্ষণে এ ছাড় দেয় আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি।
নতুন শর্ত অনুযায়ী, আগামী সেপ্টম্বর শেষে নিট রিজার্ভ ১৪ দশমিক ৮৮ ও ডিসেম্বর শেষে তা ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে।
এর আগে গত ৮ মে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করার বিষয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল ঢাকায় সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থের ব্যবহার এবং শর্ত পূরণে অগ্রগতি দেখতে রিভিউ মিশন গত ২৪ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত সরকারি বিভিন্ন দপ্তর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে।
ঋণের শর্ত হিসেবে বেশ কিছু আর্থিক ও নীতি সংস্কারে মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
এগুলোর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারমুখী করা, ব্যাংক ঋণে সুদ হারের ৯ শতাংশের সীমা তুলে দেওয়া, ব্যাংক ঋণের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্য প্রকাশ, রিজার্ভের নিট হিসাব আইএমএফ স্বীকৃত পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী প্রকাশ, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের মত বিষয় রয়েছে।
আরও পড়ুন:
তৃতীয় কিস্তিতে ১.১৫ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন আইএমএফের
আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি নিয়ে ঐকমত্য, মিলবে ১.১৫ বিলিয়ন ডলার