আইএমএফ এর ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের বাকি অর্থ আরও চার কিস্তিতে পাবে বাংলাদেশ।
Published : 15 Dec 2023, 10:02 PM
আইএমএফ এর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার বাংলাদেশের রিজার্ভে যোগ হয়েছে; একই দিনে বাংলাদেশ হতে পেয়েছে এডিবির দেওয়া ঋণের ৪০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দুই ঋণের অর্থ শুক্রবার বুঝে পেয়েছে বাংলাদেশ।
গত বুধবার আইএমএফ এর নির্বাহী পর্ষদের সভায় এক্সটেনডেট ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) ও এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইইএফ) ব্যবস্থার অধীনে প্রথম পর্যালোচনা শেষ করে ৪৬ দশমিক ৮৩ কোটি ডলার ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়।
এই ঋণের বাইরে আরএসএফ (রেসিলেন্স অ্যান্ড সাসনেইনিবিলিটি ফ্যাসিলিটি) তহবিলের অধীনে প্রথম পর্যালোচনা শেষ করে ২২ কোটি ১৫ লাখ ডলার ছাড় করার কথাও জানায় সংস্থাটি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত তহবিলের অধীনে এই অর্থ পাচ্ছে বাংলাদেশ ঋণ হিসেবে।
সব মিলিয়ে আইএমএফ এর কাছ থেকে ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার শুক্রবার বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছে। তার সঙ্গে এডিবির দেওয়া ৪০ কোটি ডলার মিলিয়ে এক দিনে রিজার্ভে যোগ হয়েছে ১০৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার ।
আইএমএফ এর ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের (৪৭০ কোটি ডলার) ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার বাংলাদেশ পেয়েছিল এ বছর ফেব্রুয়ারিতে। সেবারও অনুমোদনের তিন দিনের মধ্যে ছাড় হয় ওই অর্থ।
দ্বিতীয় কিস্তির এ ঋণ অনুমোদন করার আগে সমঝোতা অনুযায়ী বাংলাদেশে সংস্কারের পদক্ষেপগুলো পরিদর্শন করে যায় আইএমএফের প্রতিনিধি দল। এরপর তাদের মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে আইএমএফের পর্ষদ কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দেয়।
আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (সাবপ্রোগ্রাম-১) শীর্ষক প্রকল্পে বাংলাদেশকে ওই ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও এডিবির মধ্যে চুক্তি সই হয়।
বাজেট সহায়তার আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য এ ঋণ নেওয়া হয়েছে। বাজেট সহায়তার অর্থ প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা যায়। যে কারণে এখন তা রিজার্ভে যুক্ত করা হয়েছে। এরপর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থের যোগান দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
দ্বিতীয় কিস্তির এ অর্থ অনুমোদনের আগে প্রথম কিস্তিতে দেওয়া ঋণের শর্তের কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা দেখতে অক্টোবরে এসেছিল সংস্থাটির রিভিউ মিশন। কিছু শর্ত অপূর্ণ থাকার কথা তখন তাদের জানিয়েছিল বাংলাদেশ। কারণও তুলে ধরে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পূরণের।
ওই সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে করা আর্থিক খাতের রিফর্ম অ্যাগ্রিমেন্ট (সংস্কার) বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখেছিল সংস্থাটি। ছয়টি শতের্র মধ্যে দুটিতে পিছিয়ে থাকার কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। জুন পর্যন্ত রিজার্ভের স্থিতি কাঙিক্ষত মাত্রায় ধরে রাখতে না পারা এবং জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আদায় করতে না পারার ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছিল।
জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী স্থিতিশীল সরকার এলে সংস্কারের বাকি পদক্ষেপও বাস্তবায়ন করা হবে-এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুরোধ করা হয়েছিল বাংলাদেশের তরফ থেকে।
চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে আরও চার কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। প্রতিবারই কিস্তি ছাড়ের আগে ঋণ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আগের কিস্তির অর্থের ব্যবহার ও শর্ত বাস্তবায়ন দেখে সিদ্ধান্ত নেবে আইএমএফ।
এ অর্থ রিজার্ভের ওপর চাপ কমিয়ে বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি দূর করতে ভূমিকা রাখবে যা অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে কাজে দেবে বলে আশা নীতি নির্ধারকসহ অর্থনীতিবিদদের।
আইএমএফ এর সঙ্গে করা সমঝোতায় আর্থিক ও রাজস্ব খাতে সংস্কারের পাশাপাশি ভর্তুকি কমিয়ে জ্বালানির দাম সমন্বয়ের পথে হাঁটার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। রয়েছে বিনিময় হার বাজারমুখী করা, ৯ শতাংশ সুদহার তুলে দেওয়া, ব্যাংক ঋণের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্য প্রকাশ, রিজার্ভের হিসাব আইএমএফ স্বীকৃত পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী করা, মুদ্রানীতি আধুনিকায়ন করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ; যেগুলোর অনেকখানি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ।
তবে শর্তের মধ্যে থাকা সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিজার্ভের পরিমাণ ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারের সক্ষমতা অর্জন করা যায়নি। গত বুধবার দিন শেষে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯.১৬ বিলিয়ন ডলার।
গত বুধবারের বোর্ড সভায় বাংলাদেশের বিষয়ে একগুচ্ছ সুপারিশ রেখেছে আইএমএফ। পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে বলেছেন, আর্থিক খাতের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী সংস্কার পদক্ষেপ অব্যাহত থাকলে, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতীশীলতা পুনরুদ্ধার, বৈদেশিক চাপে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং রিজার্ভ চলতি বছর শেষে ২৪ বিলিয়ন ডলারের উপরে থাকবে।
এজন্য আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ কাঠামো জোরদার, আঁটোসাট মুদ্রানীতি, বিনিময়হার বাজারমুখী করা, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা ও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির মত পরামর্শ আবারও দিয়েছে আইএমএফ।
পুরনো খবর:
সংস্কারের প্রতিশ্রুতি: বাংলাদেশ নিয়ে আইএমএফ মিশন প্রধানের ‘উচ্ছ্বাস’