পরের কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে আইএমএফের পরবর্তী মিশন আসার কথা রয়েছে ৩ ডিসেম্বরে।
Published : 19 Nov 2024, 01:37 AM
অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান পদক্ষেপগুলো এগিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চতুর্থ কিস্তির অর্থ কোনো ধরনের বেগ ছাড়া পেতে ঋণের শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে বসতে যাচ্ছে বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সমন্বয় কমিটি।
ক্ষমতার পালাবদল, আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে বাণিজ্যে স্থবিরতা ও বিগত সরকারের সময়ে নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি কাটানো বিষয়গুলো যেমন স্থান পাবে আলোচনায় তেমনি রাজস্ব ঘাটতি কমিয়ে আনা, কর-জিডিপির অবস্থা, রিজার্ভ সংকুলান, মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফনসহ অর্থনীতির নানান বিষয় উঠে আসবে এসে।
আইএমএফের ঋণ বিষয়ক কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বুধবার হতে যাওয়া এ সভায় এসব বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি করণীয় নিয়ে শলা পরামর্শ করবেন তারা। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, পরিকল্পনা কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধিদের এতে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের এই ঋণের পরের কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে আইএমএফের পরবর্তী মিশন আসার কথা রয়েছে ৩ ডিসেম্বরে। এর পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে এ বৈঠক, বলে তথ্য দিয়েছেন সভার সভাপতি অর্থ বিভাগের সামষ্টিক অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিয়াউল আবেদীন।
”আমরা আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি সারতে সভা ডেকেছি। আশা করছি, শর্ত বাস্তবায়নে আমাদের তরফে সমস্যা হবে না।”
চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে ‘সকল শর্ত পূরণ হয়েছে কি না’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। আমরা সকল শর্ত পূরণ করেছি।”
সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার ঋণের আওতায় নীতি কার্যক্রম সম্পাদনের নির্ধারিত সময়সীমার মাঝে কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে এবং চলতি অর্থবছরের নির্ধারিত সময়ের মাঝে অন্যগুলো বাস্তবায়নে কী কী করতে হবে সেসব রয়েছে সভার আলোচ্যসূচিতে।
আইএমএফের সবশেষ আসা মিশন তখন এনবিআরকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ কর বাড়ানোর শর্ত কেন পূরণ করতে পারেনি সে বিষয়ে জানতে চায়।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূসক আদায়ে আইএমএফের শর্ত পূরণ করা গেলেও আয়কর ও শুল্কে সেটি পারা যায়নি।
তবে আইএমএফের চাপে এনবিআর কর ব্যয় বিশ্লেষণ করেছে। কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার চাপে পড়ে কিছু খাতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে অব্যাহতি তুলে দিয়েছে। সব ধরনের আয় ও ব্যয়ের ট্রাঞ্জেকশন ডিজিটালি না করা গেলে আইটি খাতের করপোরেট কর হবে সাধারণ কোম্পানির মত।
এক্ষেত্রে আগের শুন্য করপোরেট করের পরিবর্তে দিতে হবে সাড়ে ২৭ শতাংশ।
এর আগে গত ২৭ জুন পৌনে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির আওতায় আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। কয়েক দফা আলোচনা শেষে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক সংস্থাটি।
ঋণ চুক্তি অনুমোদনের পর গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার হাতে পায় বাংলাদেশ। আর গত ১২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তিতে বাংলাদেশ পায় ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।
তৃতীয় কিস্তি ছাড় পেতে জুন শেষে নিট রিজার্ভ ১৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার রাখতে শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ, যা আগের শর্তে ছিল ২০ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার।
অন্যান্য শর্তে অগ্রগতি হওয়ায় বাংলাদেশের আবেদনে নিট রিজার্ভ সংরক্ষণে এ ছাড় দেয় আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি।
নতুন শর্ত অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বর শেষে নিট রিজার্ভ ১৪ দশমিক ৮৮ ও ডিসেম্বর শেষে তা ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফকে নিট রিজার্ভের তথ্য দিলেও এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে না।
আইএমএফের চাপে করা যে বিপিএম৬ পদ্ধতিতে তথ্য দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক, তার সবশেষ তথ্যে রিজার্ভ ফের কমে ২০ বিলিয়নের নিচে দাঁড়িয়েছে।
আর ১২ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চিতি (রিজার্ভ) দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলারে।