গত অর্থবছর লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় নতুন শর্ত জুড়ে দিয়েছে ঋণ দাতা আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
Published : 04 Dec 2024, 11:47 PM
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার আগে চলতি অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ০.৬ শতাংশ বাড়ানোর কঠিন শর্তের মুখে পড়ল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।
বুধবার ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে এনবিআর চলতি অর্থবছরের জন্য আগের দেওয়া শর্ত শিথিল করে কর-জিডিপি অনুপাত ০.৪ শতাংশ বাড়ানোর সুযোগ চেয়েছিল।
আইএমএফ সেই প্রস্তাবে রাজি হলেও গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও এনবিআর শর্ত পূরণ করতে না পারায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাড়তি আরও ০.২ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ানোর শর্ত জুড়ে দেয়।
বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে বিভিন্ন শর্ত পরিপালনের অগ্রগতি দেখতে ঢাকা এসেছে আইএমএফের ১০ সদস্যের এই প্রতিনিধিদল।
বুধবার সফরের দ্বিতীয় দিন এনবিআরের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আইএমএফের প্রতিনিধিরা। সেখানেই কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।
আইএমএফের ঋণ চুক্তিতে বলা হয়েছে, এনবিআরকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে কর আহরণ ০.৫ শতাংশ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরও ০.৫ শতাংশ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ০.৭ শতাংশ বাড়াতে হবে।
জুলাই মাসজুড়ে আন্দোলন ও অগাস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল রাজস্ব আদায়ে এখনো তার প্রভাব রয়ে গেছে।
ফলে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা চলতি অর্থবছরের চার মাস পার হলেও কাটেনি; এ অবস্থায় বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতি নিয়ে অর্থবছর শেষ করার শঙ্কায় শর্ত শিথিলের প্রস্তাব করেছিল এনবিআর।
সেখানে শর্ত আরও কঠিন হওয়ায় অর্থনীতির চলমান অস্থিরতার মধ্যে এনবিআর আরো 'চাপের মুখে' পড়ল বলে মন্তব্য করেছেন বোর্ডের নীতি শাখার একজন কর্মকর্তা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এটা সিরিয়াস। তারা আমাদের এই শর্ত দিয়েছে এবং বলেছে, এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে।"
আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যানসহ আয়কর, মূল্য সংযোজন কর ও শুল্ক নীতি শাখার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে আগামী তিন মাসের জন্য মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা তৈরির কথা বলেছে আইএমএফ। এনবিআর তাতে সম্মতি দিয়েছে।
বৈঠকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই করপোরেট খাতের জন্য ই-রিটার্ন পদ্ধতি কার্যকর করার কথা বলেছে আইএমএফ।
করপোরেটের ক্ষেত্রে ওই সময় থেকে ১০০ শতাংশ ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক করার শর্ত দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে নীতি শাখার ওই কর্মকর্তা বলেন, “না। ১০০ শতাংশের কথা তারা বলেনি। তবে তারা চায় এ সময়ের মধ্যে যেন এনবিআর ডিজিটালাইজেশন পদ্ধতি পুরোপুরি প্রস্তুত করতে পারে।’
সোমবার প্রকাশ হওয়া হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে এনবিআর গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ০৩ শতাংশ কম রাজস্ব আহরণ করতে পেরেছে, যেখানে আগের বছর একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
চলতি অর্থবছর জুড়ে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা কর আদায়ের চাপ রয়েছে এনবিআরের ওপর। অথচ চার মাসেই এ সময়ের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে রাজস্ব আদায়ের এ সংস্থা।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ আগামী ‘ফেব্রুয়ারি-মার্চের’ মধ্যে হাতে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী অন্তর্বর্তী সরকার। মঙ্গলবার আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকের পর এ সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
আন্তর্জাতিক সংস্থাটির পর্ষদে অনুমোদন পেলে বাড়তি অর্থ মিলিয়ে চতুর্থ কিস্তিতে মোট ১১০ কোটি ডলার পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।