এমপি ফারুকের অফিসে কোরআন ছুঁয়ে ‘আনুগত্যের শপথ’ স্থানীয় নেতাদের

সংসদ সদস্য বলেছেন, “আমি কাউকে শপথ করাইনি, তারা স্বেচ্ছায় করেছেন।”

রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2023, 11:59 AM
Updated : 12 Feb 2023, 11:59 AM

‘আনুগত্যের’ বহিঃপ্রকাশ হিসেবে জনপ্রতিনিধিদের কোরআন শরিফে হাত রেখে শপথ ‘করালেন’ রাজশাহী-১ আসনের আলোচিত সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী।

শনিবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনে ওমর ফারুক চৌধুরীর কার্যালয়ে তার নির্বাচনী এলাকার ১২ জন দলীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধি এই শপথ বাক্য পাঠ করেন।

শপথ নেওয়া গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র ও গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আয়েজ উদ্দিন রোববার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সংসদ সদস্যের প্রতি এবং নৌকার প্রতি অনুগত থাকার শপথ নিয়েছি। এ সময় অনেকেই ছিলেন; সবাই কোরআন শরিফ ছুঁয়ে শপথ গ্রহণ করেছেন।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গোদাগাড়ী-তানোরের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি কাউকে শপথ করাইনি। তারা সবাই আলোচনা করে একসঙ্গে ঢাকায় এসেছেন। তারা আমার কাছে বলেছেন, আমরা সবাই একসঙ্গে থাকতে চাই। প্রয়োজনে কোরআন ছুঁয়ে শপথ করব।”

“এর পর নিজের ইচ্ছায় মন থেকে তারা শপথ করেছেন। দুই-একজন যারা ভুল বলেছিলেন, তাদের আমি বলে দিয়েছি। এর বেশি কিছু না। এটি তারাও ভিডিও করেছেন; আমিও ভিডিও করেছি।”

জনপ্রতিনিধিদের শপথ পাঠের ভিডিও বিভিন্ন গণমাধ্যম কার্যালয়েও পাঠানো হয়। তাতে দেখা যায়, সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী নিজের চেয়ারে বসে থেকে মোবাইলে ভিডিও করছেন। আর এক এক করে জনপ্রতিনিধিরা এসে তার সামনে টেবিলে রাখা কোরআন শরিফে হাত রেখে শপথ করছেন।

তাদের বলতে শোনা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ, নৌকা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরোধিতা বা তার সঙ্গে বেঈমানি করবো না।

শপথ গ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস, মাটিকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল রানা, দেওপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল, গোদাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা, মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল ইসলামসহ তানোর ও গোদাগাড়ীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র। শপথ গ্রহণের ভিডিও করেন তানোর উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না।

Also Read: রাজশাহীতে অধ্যক্ষকে পেটানোর অভিযোগ এমপি ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে

Also Read: রাজশাহীতে অধ্যক্ষকে ‘প্রহার’: তদন্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি

Also Read: অধ্যক্ষকে ‘প্রহার’: অসহায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘প্রমাণ পেলে’ যাবে স্পিকারের কাছে

গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “নৌকার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সংসদ সদস্য তাদের শপথ করিয়েছেন। সেখানে গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলার আমরা ১২ জন জনপ্রতিনিধি ছিলাম। সবাই শপথ নিয়েছি। কারণ এখন এমপির পক্ষে থাকলেও ভোটের আগে অনেকেই সরে দাঁড়ায়।”

কোরআন শরিফ ছুঁয়ে কাউকে শপথ নিতে বাধ্য করা হয়নি বলেও দাবি করেন এই জনপ্রতিনিধি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, দুদিন আগে গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলার পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের ডেকে পাঠান সংসদ সদস্য।

“শনিবার সন্ধ্যায় সংসদ ভবনের নিজের চেম্বারে সবাইকে নিয়ে যান তিনি। সেখানে কোরআন শরিফে হাত রেখে এক এক করে সবাইকে শপথ করানো হয়। প্রথমে সংসদ সদস্যের অনুগতরা শপথ করেন। ফলে বাধ্য হয়ে অন্যদেরও শপথ করতে হয়েছে।”

শপথ গ্রহণের ভিডিও প্রকাশ হলে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা- সমালোচনা শুরু হয়। 

তবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার।

এর আগে গত বছর জুলাই মাসে গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগে আলোচনায় এসেছিলেন তিনবারের এই সংসদ সদস্য। 

৭ জুলাই রাতে রাজশাহী নগরীর নিউ মার্কেট সংলগ্ন ‘ওমর থিম প্লাজা’য় নিজের কার্যালয়ে গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন কলেজের আটজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের সামনেই অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে কিল-ঘুষি ও হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠে ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

যদিও সংসদ সদস্য এ ধরনের অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছিলেন।