অধ্যক্ষকে ‘প্রহার’: অসহায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘প্রমাণ পেলে’ যাবে স্পিকারের কাছে

রাজশাহীতে সংসদ সদস্যের হাতে কলেজ অধ্যক্ষের মারধরের শিকার হওয়ার ঘটনার প্রমাণ পেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর প্রতিকারের জন্য স্পিকারের কাছে যাবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2022, 02:48 PM
Updated : 17 July 2022, 03:40 PM

রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে মন্ত্রণালয়ের কিছু করার থাকে না, আমরা স্পিকারের শরণাপন্ন হতে পারি। আর সেটা তদন্তের পর যাব।”

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী গত ৭ জুলাই নিজের কার্যালয়ে গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে ‘পিটিয়ে’ আহত করেন বলে ১২ জুলাই সংবাদমাধ্যমে খবর আসে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাও এর সমালোচনা করেন। 

পরদিনই অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করেন এমপি ওমর ফারুক। অধ্যক্ষ সেখানে বলেন, সংসদ সদস্য তাকে ‘পেটাননি’। তার পাশে বসে এমপি ফারুকও পেটানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটি বলেছে, অধ্যক্ষ তাদের কাছে যা বলবেন, সেটাই তারা বিবেচনা করবেন, সংবাদ সম্মেলনে কী বলেছেন- সেটা নয়।

লাঞ্ছিত করার পর উল্টো ওই অধ্যক্ষকে দিয়ে ঘটনাটিকে ‘মিথ্যা’ বলতে (সংবাদ সম্মেলনে) ওই জনপ্রতিনিধি বাধ্য করেছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন সাংবাদিকরা।

উত্তরে তিনি বলেন, “দেখুন এখানে আমরা দুজন জনপ্রতিনিধি (শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী) আছি, আমাদের জন্য নিশ্চয়ই খুব বিব্রতকর। এই অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে নিঃসন্দেহে সেগুলো আরও বেশি বিব্রতকর হবে।

“তবে যদি কোনো সংসদ সদস্য এ ধরনের কোনো কাজে যুক্ত থাকেন, তবে সেই সংসদ সদস্যের ব্যাপারে আমরা মন্ত্রণালয় হিসেবে সরাসরি কোনো কিছু করতে পারি না। আমরা মাননীয় স্পিকারের শরণাপন্ন হতে পারি। এবং উনার কাছে অভিযোগ উত্থাপন করতে পারি, তার কাছ থেকে এর একটি সমাধান চাইতে পারি। এবং আমরা তদন্ত রিপোর্টগুলো পাওয়ার পর ঠিক সেই পথ অনুসরণ করব।”

দেশে শিক্ষকদের ওপর নানা ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও প্রকাশ্যে আসছে না জানিয়ে এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অবস্থান জানতে চান এক সাংবাদিক।

এ বিষয়ে দীপু মনি বলেন, “আমাদের কোনো জিনিসই বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। … করোনাভাইরাসের পরিস্থিতির পরে বিশ্বব্যাপী কিন্তু সব জায়গায় লক্ষ্য করা যায় অসহিষ্ণুতা একটু বেড়েছে।

“মানুষের মধ্যে অনেক ধরনের টেনশন, অনেক ধরনের ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এবং সে কারণে মনোবিজ্ঞানীরাও বলছে যে, মানুষ এখন করোনা পরবর্তী সময়ে অনেক বেশি অসহিষ্ণু আচরণ করছে। … আমরা এই বিষয়গুলো দেখছি, আমরা চেষ্টা করছি যেন এই ঘটনাগুলো না ঘটে। কিন্তু কিছু কিছু ঘটনা দুঃখজনক, ঘটনাগুলো হয়ত সবার চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও ঘটে যাচ্ছে।“

কোনো জায়গায় কোনোভাবে শিক্ষকের মর্যাদা লুণ্ঠিত হোক, তা চান না মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই না- তিনি (শিক্ষক) কোথাও নিগ্রহের শিকার হোন, তিনি অপমানিত বা শারীরিক বা মানসিক কোনোভাবে অপমানের শিকার হোক। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।

“যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানেই আমরা তদন্ত করছি এবং ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। কিছু ব্যবস্থা আমাদের হাতে আছে আর কিছু যেমন একেবারেই ফৌজদারি আইনের মধ্যে ঘটে গেলে সেখানে কিন্তু আইন অনুযায়ী কাজগুলো হবে। সেখানে মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। অতি সম্প্রতি যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেই ঘটনাগুলো নিয়ে সাথে সাথেই তদন্ত হয়েছে।”

নতুন কারিকুলাম চালু হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক ‘দৃঢ় হবে’ দাবি করে তিনি বলেন, “আমাদের নতুন যে কারিকুলাম, সেখানে অনেক বেশি সহযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সম্পর্ক হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী বন্ধু হবে, গাইডেন্স হবে। আনন্দঘন পরিবেশে হবে; আমাদের নতুন কারিকুলাম যখন শুরু হবে- তখন এর একটা প্রভাব পড়বে।”

অন্যদের মধ্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

পুরনো খবর