রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন: ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাশকতা’ বলছে তদন্ত কমিটি

তদন্তকালে কমিটি অনন্ত ৫০ জন রোহিঙ্গাসহ সংশ্লিষ্ট ৭৫ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2023, 01:06 PM
Updated : 12 March 2023, 01:06 PM

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজারের বেশি ঘর ভস্মীভূত হওয়ার ঘটনায় ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাশকতা’ বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

রোববার বিকাল ৪টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান এ তথ্য জানিয়েছেন।

তদন্ত কমিটি ১১ নম্বর ক্যাম্পের ১৭ নম্বর ব্লক থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে জানতে পারলেও সুনির্দিষ্টভাবে কারা এই আগুন লাগিয়েছে তা জানতে পারেনি।

অগ্নিকাণ্ডে প্রায় দুই হাজার ২০০ ঘর পুড়ে গেছে; এতে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়েছে। এ ছাড়া পানির পাইপলাইন, কালভার্ড, লার্নিং সেন্টারের মত প্রায় দুই হাজারের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান জানান, চার পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে নানা প্রমাণপত্র হিসেবে ৭৪টি পৃষ্ঠা সংযুক্ত করা হয়েছে। তদন্তকালে তদন্ত কমিটি অনন্ত ৫০ জন রোহিঙ্গাসহ সংশ্লিষ্ট ৭৫ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

“রোহিঙ্গারা বলছেন, এটা পরিকল্পিত নাশকতা। নাশকতার নেপথ্যের কুশীলব হিসেবে তারা ভিন্ন ভিন্ন নাম বলেছেন। কিন্তু এদের শনাক্ত করা কঠিন। তাই মামলার পর তদন্ত করে তাদের শনাক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছে তদন্ত কমিটি।”

তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, “দুপুর আড়াইটায় আগুনের সূত্রপাত হয়, যা নিয়ন্ত্রণে আনতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় লাগে। অল্প সময়ের ব্যবধানে চার থেকে পাঁচটি স্থানে আগুন লেগেছে। এটা নাশকতার প্রমাণ করে। একইসঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের আগের দিন ওই ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এটাও নাশকতা প্রমাণ করেছে।

“রোহিঙ্গারা আগুন নেভাতে গেলে অনেকেই তাদের নিষেধ করেছে, এটা সত্য। তবে এটা কৌশলে হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বলা হয়েছে, আগুন নেভানো চেয়ে জীবন বাঁচানো জরুরি।”

তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে মামলা দায়েরসহ নিয়মিতভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চিরুনী অভিযান এবং গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোসহ ১০টি সুপারিশ করেছে।

সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকের রাস্তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচলের মত প্রশস্ত করা, প্রতিটি ব্লকের রাস্তার পাশে পানির চৌবাচ্চা তৈরি করা, শেল্টারে ত্রিপলের পরিবর্তে কম দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা, ক্যাম্পের জন্য পৃথক ফায়ার সার্ভিস ইউনিট গঠন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যতত্রত মার্কেট করা এবং বড় রাস্তার ধার ব্যতীত অন্যস্থানে দাহ্য পদার্থের আউটলেট করা থেকে বিরত থাকা, ঘনবসতিপূর্ণ ও অনেক স্থানে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে অগম্য বিবেচনায় ক্যাম্পের প্রবেশ মুখে লে-আউট স্থাপন, আগুন লাগলে নেভানোর কাজে রোহিঙ্গাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা তৈরি করা, ওয়ারলেস টাওয়ার স্থাপন ও ৩৬০ ডিগ্রি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পের পালানো রোধে নিরাপত্তা বেষ্টনি স্থাপন করা।

৫ মার্চ দুপুরে উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর ক্যাম্পে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে আগুন আরও কয়েকটি ব্লকে ছড়িয়ে পড়ে। তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস।

ঘটনার পরদিন অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ানকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। তিন কার্য দিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে ২০২১ সালের ২২ মার্চ একই ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। ওই সময় ১১ জনের মৃত্যু, ৫ শতাধিক আহত হয়। পুড়ে গিয়েছিল নয় হাজারের বেশি ঘর।

আরও পড়ুন:

Also Read: উখিয়ার ক্যাম্পে আগুনের ঘটনায় ‘আরসা’, সন্দেহ রোহিঙ্গাদের

Also Read: কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুন ছড়িয়ে পড়ছে, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট

Also Read: ৩ ঘণ্টা পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুন নিয়ন্ত্রণে

Also Read: রোহিঙ্গা শিবিরে আগুনের কারণ খুঁজতে তদন্ত কমিটি

Also Read: ‘আরসা-আরএসও’র সংঘাত: শূন্যরেখা থেকে পালিয়ে এসেছে ৩ হাজার রোহিঙ্গা

Also Read: উখিয়ার ক্যাম্পে আরেক রোহিঙ্গা নেতাকে গুলি করে হত্যা