দুই থানায় এরই মধ্যে সাতটি মামলা হয়েছে; নৌকার সমর্থক কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
Published : 13 Jan 2024, 08:05 PM
নির্বাচন পরবর্তী সময়ে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা, নির্যাতন-অত্যাচার হলেও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেছেন সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, “বিজয়ী নৌকার সমর্থকদের সহিংতার কারণে বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলার আমার সমর্থক প্রায় ২ হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। শতাধিক নেতাকর্মীকে মারধর করা হয়েছে। অন্তত অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাংচুর করা হয়েছে।
“হিন্দু পরিবারগুলোতে নির্যাতনের পাশাপাশি চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। অথচ অবাক করার বিষয় হল, ওই সব সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও স্থানীয় পুলিশ নীরব ভূমিকায় রয়েছেন”, বলেন।
বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে দ্বিতীয়বারের মত সংসদ সদস্য হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী শিল্পপতি আব্দুল মোমেন মণ্ডল।
মমিন মণ্ডল ৭৭ হাজার ৪২২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল লতিফ বিশ্বাস পেয়েছেন ৭৩ হাজার ১৮৩ ভোট।
এসব ঘটনায় দুই থানায় এরই মধ্যে সাতটি মামলা হয়েছে, নৌকার সমর্থক সাবেক এক শ্রমিক দল নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় বেলকুচি ও এনায়েতপুরে ৭ মামলা, গ্রেপ্তার ১
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা: বেলকুচিতে বাড়ি-দোকানপাটে হামলা, মামলা
শনিবার সকালে বেলকুচি উপজেলার কামারপাড়ার বাড়িতে সমর্থকদের ওপর হামলা-নির্যাতন নিয়ে সংবাদ সন্মেলন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাস।
লিখিত বক্তব্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেন, “বেলকুচিতে বিএনপির নেতাকর্মীরাও কোনোদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারধর করার সাহস পায়নি। অথচ এমপি মমিন মণ্ডলের ছত্রছায়ায় দলে যোগ দিয়ে নব্য আওয়ামী লীগের ক্যাডার ও সন্ত্রাসীরা নির্বাচন পরবর্তীতে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে।
অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি করে তিনি বলেন, অন্যস্থায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে আগামীতে বৃহৎ কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বেলকুচি পৌরসভার মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা অভিযোগ করে বলেন, “২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবের চেয়ে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপরে বেশি তাণ্ডব চালিয়েছে নৌকার কর্মী-সমর্থকরা।”
বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগ করি, অথচ দলে নতুন যোগ দেওয়া বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছি।”
সংবাদ সম্মেলনে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশানূর বিশ্বাস, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকন্দ ও নুরুল ইসলাম সাজেদুল, ইউপি চেয়ারম্যান সনিয়া সবুর আকন্দ ও মির্জা সোলায়মান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শরিফুল মির্জা, সাংগঠনিক সম্পাদক আয়নাল হক, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গোপাল চন্দ্র, সাধারণ সম্পাদক কামাল আহম্মেদ।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে বিজয়ী সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মণ্ডলের মোবাইলে একাধিকবার কলা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে তার ব্যক্তিগত সহকারী সেলিম সরকার বলেন, “আমাদের লোকজন কোনো সহিংসতা করছে না। বরং তারাই আমাদের লোকজনের ওপর বার বার আক্রমণ করায় অন্তত ২৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তারপরও এমপি সাহেব নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।”
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, সহিংতার ঘটনায় সাতটি মামলা হয়েছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছেন। যে সব ঘটনা মামলা হওয়ার মত নয়, ওই সব বিষয়ে জিডি গ্রহণ করে তদন্ত করা হচ্ছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, বেলকুচি থানার ওসি আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগের বিষয়েও তদন্ত চলছে।
“আমরা তার সব কার্যক্রমের ওপর সর্তক দৃষ্টি রাখছি। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে”, বলেন পুলিশ সুপার।