“আমার ছেলে-মেয়ে আছে। আমি আসামি ১৬ জনের ভেতরেই থাকি। আমি নিরাপত্তা চাই।”
Published : 05 Feb 2024, 05:44 PM
রায় নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা বলেছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনার ভুক্তভোগী নারী এবং মামলার বাদী তার স্বামী।
রায় দ্রুত কার্যকর করতে সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের রাতে চল্লিশোর্ধ এক নারীকে দলবেঁধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের দায়ে সোমবার আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনসহ ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক ফাতেমা ফেরদৌস সোমবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
পাঁচ বছর এক মাস প্রতীক্ষার পর রায় শুনতে স্বামী সন্তানদের নিয়ে আদালতে হাজির হন ভুক্তভোগী নারী; কাঠগড়ার পাশে অপেক্ষায় ছিলেন তারা।
বেলা পৌনে ১টার দিকে রায় ঘোষণা শেষ হলে আইনজীবীদের সঙ্গে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এই দম্পতি।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, “আজকের রায়ে আমি খুশি, এলাকাবাসীও খুশি হয়েছে। যে রায় দিয়েছে সরকার যেন তা দ্রুত কার্যকর করে।
“আমার ছেলে-মেয়ে আছে। আমি আসামি ১৬ জনের ভেতরেই থাকি। চারপাশে আসামি, আমি নিরাপত্তা চাই।”
তার স্বামী বলেন, “ন্যায় বিচার হইবো এটা বিশ্বাস ছিলো। আমি খুবই আনন্দিত। কিন্তু আমার কোনো নিরাপত্তা নাই, আমি এটাই চাই।”
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন রাতে উপজেলার মধ্যবাগ্যা গ্রামে চল্লিশোর্ধ ওই নারীর ঘরে ঢুকে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে দলবেঁধে ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হয়।
চার সন্তানের ওই জননীর অভিযোগ ছিল, ভোটকেন্দ্রে কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে বাকবিতণ্ডার জেরে ওই ঘটনা ঘটানো হয়। সে সময় ওই ঘটনা নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হয়। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাস্তায় নামে বিভিন্ন সংগঠন।
পরদিন ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে চরজব্বার থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
আসামিদের মধ্যে মো. রুহুল আমিন, মো. হাসান আলী বুলু, মো. সোহেল, স্বপন, ইব্রাহিম খলিল, আবুল হোসেন আবু, মো. সালাউদ্দিন, মো. জসিম উদ্দিন, মো. মুরাদ ও মো. জামাল ওরফে হেঞ্জু মাঝির সর্বোচ্চ সাজার রায় হয়েছে।
আর মো. হানিফ, মো. চৌধুরী, মো. বাদশা আলম বসু, মোশারফ এবং মো. মিন্টু ওরফে হেলালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
রায়ে বিচারক বলেন, সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য রুহুল আমিন এবং মো. হাসান আলী বুলুর প্রত্যক্ষ ইন্ধনে এবং অংশগ্রহণে ধর্ষণের ওই ঘটনা ঘটে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোল্লা হাবিবুর রাছুল মামুন জানান, মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন ঘটনাটি কেবল কোনো ব্যক্তির ক্ষতি নয়, এটা রাষ্ট্র এবং মানবিকতার ক্ষতি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের যদি বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেওয়া হয়, তাহলে একই ধরনের অপরাধ সংগঠিত হবে। সেক্ষেত্রে এ রায়টি একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসামিপক্ষের আইনজীবী হারুনুর রশিদ হাওলাদার বলেন, মামলার বিচারকালে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক উপস্থাপিত ২৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮ জন ছিলেন সরকারি সাক্ষী। বাকি ১৫ জনের মধ্যে ছয়জন বাদী, ভিকটিম, তাদের ছেলেমেয়ে, মা এবং ভাই। তাদের সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে এ সাজা দেওয়া হয়েছে।
“রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পরে আমরা উচ্চ আদালতে যাবে। আমরা আশাবাদী, উচ্চ আদালতে এ সাজা ঠিকবে না।”
আরও পড়ুন...
সুবর্ণচরে ভোটের রাতে ধর্ষণ: রুহুল আমিনসহ ১০ জনের প্রাণদণ্ড
ভোটের রাতে নোয়াখালীতে নারীকে ‘দলবেঁধে ধর্ষণ’: মামলার রায় পিছিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি
ভোটের রাতে নোয়াখালীতে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, মঙ্গলবার রায়
নোয়াখালীতে নারীকে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের অভিযোগে একজন গ্রেপ্তার