সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা খুন: পরিবার বলছে, নির্বাচনী দ্বন্দ্ব

হত্যাকাণ্ডের পর থেকে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা কারও সঙ্গে কথা বলতে রাজি হচ্ছে না।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2023, 07:07 AM
Updated : 26 Feb 2023, 07:07 AM

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে দোকানে ঢুকে গুলি করে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুসকে হত্যার সাতদিন পেরিয়ে গেলেও রহস্যের জট খোলেনি। তবে পরিবার বলছে, ইউপি নির্বাচনের পরই তাকে ‘হত্যার হুমকি’ দেওয়া হয়েছিল।

তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে পুলিশের ভাষ্য, তদন্ত চলছে। পুলিশের পাঁচটি টিম কাজ করছে।

এরই মধ্যে নিহতের বড় ছেলে রুহুল আমিনের দায়ের করা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।  

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের ভোগলমান বাজারে আব্দুল কুদ্দুস সরকারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহত ৬০ বছর বয়সী আব্দুল কুদ্দুস ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং চেয়ারম্যান ছিলেন।

এ ঘটনার দুইদিন পর নিহতের বড় ছেলে রুহুল আমিন অজ্ঞাত পরিচয় ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

হত্যাকাণ্ডের পর থেকে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা কারও সঙ্গে কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকে ও সাদা পোশাকে এলাকায় অবস্থান করছে।

নিহতের বড় ছেলে রুহুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, “গত ইউপি নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্ব ছাড়া আমার বাবার আর কোনো শক্র নেই। নির্বাচনের পরই বাবাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। অথচ তাকে ‘সর্বহারা’ পরিচয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। যে চক্রটি ষড়যন্ত্র করে নির্বাচনে বাবাকে হারিয়েছে, তারাই বাবার হত্যাকাণ্ডে জড়িত।”

তবে কার সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিলো বা কারা হুমকি দিয়েছিলো সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি রহুল। 

পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন ১০ থেকে ১৫ জন অস্ত্রধারী উপজেলার ভোগলমান চারমাথা বাজারে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এরপর তারা আব্দুল কুদ্দুস সরকারের দোকানে ঢুকে খুব কাছ থেকে তাকে চারটি গুলি করে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এদিকে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল আজিজ দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।

আব্দুল আজিজ ওই সমাবেশে বলেন, আব্দুল কুদ্দুস ঘটনার আগের রাতে তার বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে ইউপি নির্বাচনের সময় পক্ষে-বিপক্ষে হওয়া মামলাগুলো মীমাংসা করার তাগিদ দেন। অথচ পরদিনই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি।

সেদিন সংসদ সদস্য আরও বলেন, গত সংসদ নির্বাচনের শুরুতে দেশীগ্রাম ও রানীরহাট এলাকায় ‘সর্বহারা পার্টির’ লোকেরা মাথাচাড়া দিলেও ওই সময় প্রশাসনের সহায়তায় তা দমন করা সম্ভব হয়েছিল। চার বছর পর আবারও তারা সক্রিয় হয়েছে কি-না বিষয়টি প্রশাসনকে খতিয়ে দেখতে হবে।

চলনবিল অধ্যুষিত তিন জেলা (সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও নাটোর) মিলনস্থল তাড়াশ উপজেলার রানীরহাট এলাকায় জনগণের নিরাপত্তায় একটি থানা স্থাপনের দাবিও করেন তিনি। 

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল শনিবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, খুনের রহস্য উদঘাটনে পুলিশের পাঁচটি টিম মাঠে কাজ করছে। পাশাপাশি র‌্যাব, পিবিআই ও সিআইডির সদস্যরাও রয়েছে।

তাড়াশ থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করে থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।  

তবে তদন্তের স্বার্থে কারও নাম-পরিচয় জানাতে রাজি হননি পুলিশের এ কর্মকর্তা।

Also Read: সিরাজগঞ্জে দোকানে ঢুকে আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা

Also Read: সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা হত্যায় মামলা হয়নি