দেবিদ্বার: এমপির বদলে বাবা অতিথি, নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ চেয়ারম্যানের

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্যের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের।

আবদুর রহমান, কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2022, 12:05 PM
Updated : 18 Dec 2022, 12:05 PM

মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে কুমিল্লার দেবিদ্বারে প্রশাসনের অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যের অনুপস্থিতিতে তার বাবাকে প্রধান অতিথি করায় সরকারি নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান।

কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। দুজনের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। উপজেলায় বিভক্ত হয়ে আছেন দুই নেতার সমর্থকরা।

বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের এ ঘটনা পুরানো সেই দ্বন্দ্বের জের বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

প্রশাসন বলছে, সংসদ সদস্যের পরিবর্তে অন্য কারো প্রধান অতিথি করার নিয়ম নেই। উপজেলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে এ ধরনের কোনো ঘটনাও ঘটেনি। তারপরও কেউ যদি এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে রয়েছেন। সে কারণেই তিনি বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে থাকতে পারেননি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলে সংসদ সদস্যই প্রধান অতিথি হবেন এবং তিনি সবার শেষে বক্তব্য দেবেন। সংসদ সদস্য উপস্থিত না থাকলে উপজেলা চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। 

কিন্তু দেবিদ্বারে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যের অনুপস্থিতিতে তার বাবা সাবেক উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এ এফ এম ফখরুল মুন্সীকে প্রধান অতিথি করা হয়েছে এবং এতে সরকারি নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ‍উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, “রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে এমপি সাহেব অনুপস্থিত থাকলে উপজেলা চেয়ারম্যানই হবেন প্রধান অতিথি। জনগণের ভোটে নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকা অবস্থায় জনগণের প্রতিনিধি নয়, এমন কাউকে প্রধান অতিথি করার সুযোগ নেই। এখানে এমপি সাহেবের বাবা কোনোভাবেই প্রধান অতিথি হতে পারেন না। এটা নিয়মবহির্ভূত।”

বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানানোর পরও সংসদ সদস্যের বাবাকে প্রধান অতিথির চেয়ারে বসিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয় বলে অভিযোগ করে উপজেলা চেয়ারম্যান আরও বলেন, “প্রশাসন এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন দায়িত্ব পালন করবে ভাবাই যায় না। নিয়মের বাইরে গিয়ে অন্যায়ভাবে এমপি সাহেবের বাবাকে প্রধান অতিথি হিসেবে ঘোষণা দেন ইউএনও। আমি বিয়ষটি নিয়ে আপত্তি জানালে ইউএনও রাষ্ট্রীয় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই উল্টো আমার সঙ্গে বিতর্ক শুরু করেন।”

“নিয়ম অনুযায়ী এমপি সাহেবের অনুপস্থিতিতে সবার শেষে আমার বক্তৃতা করার কথা থাকলেও ইউএনও এমপির বাবাকে সবশেষে বক্তৃতা করতে দিয়েছেন। আমি এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি”, যোগ করেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ।

এ বি এম গোলাম মোস্তফা স্টেডিয়ামে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডেইজি চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে সংসদ সদস্যের পরিবর্তে তার পক্ষে বাণী পাঠ করেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম ওমানী।

সংসদ সদস্যের অনুসারী হিসেবে পরিচিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, “এমপি সাহেব থাইল্যান্ডে আছেন। উনার অস্ত্রোপচার হয়েছে। উনি আমাকে বাণী পড়ার দায়িত্ব দিয়েছেন; তাই আমি ওই অনুষ্ঠানে বাণী পাঠ করেছি।”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করার বিষয়ে জানতে চাইলে ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, “যেহেতু এমপি সাহেব উপস্থিত নেই তাই প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এ এফ এম ফখরুল মুন্সীকে প্রধান অতিথি করার কথা বলা হয়। তখন উপজেলা চেয়ারম্যান এর বিরোধিতা করে নিজেই প্রধান অতিথি হওয়ার বাসনা করেন। আমরা এর প্রতিবাদ করে বলি, এটা কীভাবে সম্ভব! একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ও প্রবীন নেতা এখানে উপস্থিত থাকতে আপনি কীভাবে প্রধান অতিথি হন?”

“এরপর এটা নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। শেষে ইউএনও এমপি সাহেবের বাবাকে প্রধান অতিথি করে অনুষ্ঠান করেন।”

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিউদ্দিন সফি, দেবিদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধর উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফি সাংবাদিকদের বলেন, “বিজয় দিবসের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এমপির অনুপস্থিতিতে তার বাবাকে প্রধান অতিথি করে উপজেলা প্রশাসন নিয়মবহির্ভূত কাজ করেছে। বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের আরও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার ছিলো।“

এ ব্যাপারে জানতে ইউএনও ডেইজি চক্রবর্ত্তীর মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করে এবং মেসেজ পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

সাবেক উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা পরিষদের সদস্য এ এফ এম ফখরুল মুন্সীর মোবাইলে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, “শুক্রবার বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের সময় দেবিদ্বারের ইউএনওকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, সংসদ সদস্য মহোদয় অনুপস্থিত থাকলে সেক্ষেত্রে তার পক্ষে যেকোনো একজন বাণী পাঠ করবেন। কিন্তু অনুষ্ঠানে অন্য কেউ নয়, সংসদ সদস্যই প্রধান অতিথি থাকবেন। প্রয়োজনে প্রধান অতিথির চেয়ার খালি রেখেই অনুষ্ঠান শেষ হবে। “

“আর সংসদ সদস্যের পরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিনিয়র। সেক্ষেত্রে সংসদ সদস্য অনুপস্থিত থাকায় উপজেলা চেয়ারম্যান সবার শেষে বক্তব্য দেবেন। আমার জানা মতে, এভাবেই অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। তবে এর বাইরে কিছু হয়ে থাকলে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।“কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, “বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে শোনার পর ইউএনওর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে কাউকে প্রধান অতিথি করা হয়নি।“

“তারপরও উপজেলা চেয়ারম্যান যদি মনে করেন সেখানে তার অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে; তাহলে তিনি লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন। আমরা অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

আর পড়ুন:

Also Read: দেবিদ্বারে এমপি-চেয়ারম্যানের ‘মারামারি’: ভোট আসছে, দ্বন্দ্বও বাড়ছে

Also Read: ঢাকায় এমপি-চেয়ারম্যানের ‘মারামারি’, কুমিল্লায় তুলকালাম

Also Read: এমপি-চেয়ারম্যানের ‘মারামারি’: কুমিল্লায় মহাসড়ক অবরোধ, যানজটে ভোগান্তি

Also Read: দেবিদ্বারে এবার উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ