শনিবার বিকেলে জাতীয় সংসদের মেম্বারস ক্লাবে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভায় কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল সঙ্গে দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের ‘মারামারি’ হয় বলে সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতারা জানান।
তারা বলছেন, এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ক্ষিপ্ত হয়ে আবুল কালাম আজাদকে মারধর শুরু করেন। পরে আজাদও পাল্টা জবাব দিলে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়।
কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এ ঘটনার জন্য এমপিকে দায়ী করে বলেছেন, সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখলেই ‘সব বোঝা যাবে’।
অন্যদিকে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল বলেছেন, এখন তিনি ‘চিকিৎসাধীন’। পরে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত বলবেন।
এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করার খবর এলে শনিবার সন্ধ্যার আগে আগে দেবিদ্বারে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।
রাত পৌনে ৮টার দিকে চেয়ারম্যান সমর্থকরা দেবিদ্বার সদরে মিছিল বের করলে এমপির সমর্থকদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। সংঘর্ষের মধ্যে বেশ কয়েকটি হাতবোমা ফাটানো হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এ সময় দুই পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন বলে পুলিশের ভাষ্য।
দেবিদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমপি আর চেয়ারম্যানের সমর্থকদের উত্তেজনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।”
২৬ বছর পর আগামী ২১ জুলাই দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এ সম্মেলন সামনে রেখে শনিবার বিকালে ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের দ্বিতীয় তলায় পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির বৈঠক বসে।
কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিনসহ জেলা ও উপজেলার প্রায় দুই ডজন নেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল মতিন সরকার সভার এক পর্যায়ে এলাহাবাদ ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণার দাবি তোলেন। এ সময় উপস্থিত সদস্যরা তাতে সমর্থন দেন।
এরপর কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আক্তারুজ্জামান স্বপনের নাম ঘোষণা করেন।
সভায় উপস্থিত কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল মতিন মুন্সী বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা শেষ না করতেই এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল সাহেব বসা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বললেন, ‘আমি এ কমিটি মানি না’। তখন পাশে বসা আবুল কালাম আজাদ বললেন, ‘কমিটি সুন্দর হয়েছে’।
“এর পর এমপি সাহেব উপজেলা চেয়ারম্যাকে ঘুষি-কিল মারতে মারতে মেঝেতে ফেলে দেন। চেয়ারম্যানও পরে উঠে এমপির ওপর চড়াও হন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, “এলাহাবাদ ও গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের প্রস্তাবে স্থানীয় সংসদ সদস্য আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে অতর্কিত কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন। সিসিটিভি ফুটেজে এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। কুমিল্লা উত্তর জেলা এবং দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারাও সভায় ছিলেন।”
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলকে শনিবার রাতে বহুবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিন ফোন ধরেননি।
মারামারির ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী রোশন আলী মাস্টার বলেন, “আমরা বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় থেকে মার খেয়ে আসছি, এখনো মার খাচ্ছি। এমপি সাহেবের এ জঘন্য আচরণের বর্ণনা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। একজন সংসদ সদস্য একজন উপজেলা চেয়ারম্যানকে এভাবে লাঞ্ছিত করবেন, এটা কেউ প্রত্যাশা করেনি “