সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ৪০-৫০টি বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। এরপরই দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখা গেছে আগুন।
Published : 02 Mar 2024, 03:14 PM
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের জের ধরে টানা বিকট শব্দের পর দেখা মিলেছে আগুনের ধোঁয়ার।
কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা সীমান্তের ওপারে শনিবার সকাল ৮ টা থেকে আগুনের ধোঁয়ার দেখা মিলে।
হ্নীলা সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের এলাকাটি বলিবাজার ও নাগাকুরা পাড়া।
ওই দুই এলাকার মাঝামাঝি গ্রামে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করছেন, হ্নীলা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি তারেক মাহমুদ রনি।
তিনি জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার পর গোলাগুলির শব্দ কিছুটা কম শোনা গেছে। কিন্তু মধ্যরাতের পর থেকে গুলির শব্দের পাশাপাশি একের পর এক ভেসে আসতে থাকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দও।
শনিবার ভোরের পর তা আরও বেড়ে যায়। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত আধা ঘণ্টা সময়ে পর পর ৪০-৫০ বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে।
এরপর পরই দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখা গেছে আগুন। এই আগুন দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেখা যায়। এরপর ধোঁয়া কমেছে বলে জানান তারেক মাহমুদ।
২০১৭ সালের রোহিঙ্গা সংকটেও এভাবে সীমান্তের ওপারে দাউদাউ আগুন জ্বলতে দেখা গেছে জানিয়ে করে আরও তিনি বলেন, “বিস্ফোরণের শব্দ আর আগুনের ধোঁয়ায় আতঙ্কিত এলাকার মানুষ।”
হোয়াইক্যং ও হ্নীলা সীমান্তের পূর্বে মিয়ানমারের কুমিরহালি, নাইচদং, কোয়াংচিগং, শিলখালী, নাফপুরা গ্রামে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘর্ষ চলছে। ওই সীমান্তের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার এলাকায় নাফ নদীতে বিজিবি ও কোস্টগার্ড টহল বৃদ্ধি করেছে।
সীমান্তের লোকজন জানান, মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের মংডুর আশপাশের কয়েকটি গ্রামেও শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।
বিস্ফোরণের বিকট শব্দে এপারে কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং, হ্নীলা, পৌরশহর ও সাবরাং কেঁপে উঠছে।
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, রাখাইন রাজ্যে দুপক্ষের মধ্যে লড়াই দুই দিন ধরে তীব্রতা বেড়েছে। নাফ নদীর ওপারে বিস্ফোরিত মর্টার শেলের বিকট শব্দে এপার কেঁপে উঠছে। আতঙ্কে সীমান্ত এলাকার হাজারো মানুষ খেতখামারে যেতে পারছেন না।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান শাহ জালাল বলেন, মর্টার শেলের বিকট শব্দে তার এলাকায় কম্পন অনুভূত হচ্ছে। রাতের বেলায় ঘন ঘন কম্পনে শিশুদের ঘুম ভেঙে যাচ্ছে, অনেক শিশু ভয়ে কান্নাকাটিও করে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিপরীতে নাফ নদীর বুকে জেগে ওঠা তোতারদিয়া দুই সপ্তাহ আগে আরাকান আর্মি দখলে নেয়।
এখন মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী সেটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, রাখাইনে নতুন করে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তে গুলি এসে পড়ার খবর পাওয়া যায়নি। সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সতর্ক রয়েছে।
তবে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তের মানুষ তিন দিন ধরে কোনো গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন না।
যদিও মিয়ানমারের রাখাইন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সদস্যদের তৎপর রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফস্থ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।