কুমিল্লার হাসানপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা মালাবাহী ট্রেনকে যাত্রীবাহী ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’ এর ধাক্কা দেওয়ার ঘটনার ২৬ ঘণ্টা পরেও শেষ হয়নি উদ্ধার কাজ।
সোমবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলছিল বলে জানিয়েছেন লাকসাম রেলওয়ে থানার ওসি জসিম উদ্দিন খন্দকার।
রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের হাসানপুর রেলওয়ে স্টেশনে ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি মেইন লাইন ছেড়ে লুপ লাইনে ঢুকে পড়ে।
এ সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মালবাহী একটি ট্রেনকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে সেটির ওপরে উঠে পড়ে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস। এতে ট্রেনটির ইঞ্জিনসহ সাতটি এবং মালবাহী ট্রেনের পেছনের দুইটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্ঘটনার পর রাত ১০টায় লাকসাম রেলওয়ে জংশন এবং সোমবার ভোরে আখাউড়া থেকে দুটি উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবে রাতে উদ্ধার অভিযান শুরু করা যায়নি।
সোমবার ভোর থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়। এরই মধ্যে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ছয়টি বগি উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে।
উদ্ধার কাজ দেরিতে শুরু হওয়ার বিষয়ে রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন স্টেশনে আটকেপড়া ট্রেনগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের সিঙ্গেল লাইন দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়।
“এর ফলে রিলিফ ট্রেন আসতে একটু সময় লেগেছে। এ ছাড়া রাতে পর্যাপ্ত আলো ছিল না। তবে ভোর থেকে উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারবো।”
সরজমিনে দেখা যায়, দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া সোনার বাংলা ট্রেনের বগিগুলো রেল লাইনসহ পাশের খালি মাঠে পড়ে রয়েছে। উদ্ধারকারী দুটি রিলিফ ট্রেন বগিগুলো উদ্ধারে কাজ করছে। তবে লাইনের প্রায় ৬০০ মিটার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে চট্রগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মো. আবিদুর রহমান দুর্ঘটনার কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের বাইরে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তিনি বলেন, “দুর্ঘটনা তদন্তে চট্রগ্রাম বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা তারেক মো. ইমরানকে প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিনি দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
“এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছেন। আশা করি, সন্ধ্যার মধ্যে সকল বগি উদ্ধার এবং রেললাইন মেরামত করে দুই লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে।”
এদিকে, রেলওয়ের পাশাপাশি কুমিল্লার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোশারফ হোসেনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক।
এই কমিটিকেও আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান।
রোববারের এই দুর্ঘটনায় রেলওয়ের স্টাফ, রেলওয়ে পুলিশ ও যাত্রীসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তবে সোমবার বিকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি বলে লাকসাম রেলওয়ে থানার ওসি জসিম উদ্দিন খন্দকার জানান।