Published : 16 Apr 2023, 07:59 PM
কুমিল্লায় মালবাহী ট্রেনকে ধাক্কা দিয়ে উল্টে গেল সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের বেশ কয়েকটি বগি।
রোববার সন্ধ্যায় ইফতারের পরপরই নাঙ্গলকোটের হাসানপুর স্টেশনে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এই দুর্ঘটনায় অর্ধশতের মতো আহত হওয়ার খবর রেল কর্মকর্তা ও পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া গেছে। সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে নির্বাচন কমিশনের ১২ জন কর্মকর্তা থাকলেও তারা অক্ষত রয়েছেন।
এই দুর্ঘটনার কারণে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ঢাকা ও সিলেট থেকে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও চাঁদপুরের ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি কমিটি করেছে রেলওয়ে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
দেশের দ্রুতগামী ট্রেনের একটি সোনার বাংলা এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে আসছিল। পথে কুমিল্লা শহরের আগে নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর রেল স্টেশন।
সেই স্টেশনে রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে পূর্ব রেলের ডিভিশনাল ট্রাফিক অফিসার তারেক মো. ইমরান জানিয়েছেন।
ঘটনার পরপরই তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কুমিল্লার হাসানপুর স্টেশনে দুর্ঘটনায় সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে।
এতে অনেকে আহত হয়েছেন বলে খবর পেলেও কারও নিহত হওয়ার খবর পাননি বলে জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, ‘ভুল’ সিগন্যালের কারণে দ্রুতগতির সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি মেইন লাইন ছেড়ে লুপ লাইনে ঢুকে পড়ে। এ সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মালবাহী ট্রেনটিকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে সেটির উপরে উঠে পড়ে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস। কাত পড়ে পড়ে এর পাঁচটি বগি।
দুর্ঘটনায় আহত ট্রেনযাত্রী সফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “ইফতারের পর হঠাৎ দেখি বিকট শব্দে আমাদের ট্রেনটি মালবাহী ট্রেনটিকে ধাক্কা দিয়ে সেটির উপর উঠে পড়ে যাচ্ছে। এ সময় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ট্রেনের কয়েকটি বগি দুড়মে-মুচড়ে যায়। মনে হয়েছে মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছি।”
সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে কর্মরত রেলওয়ে পুলিশের এএসআাই তানভীর হোসেন বলেন, “ট্রেনটি হাসানপুর রেল স্টেশনে প্রবেশের আগে হঠাৎ দেখি আঁকাবাঁকা হয়ে দুলছে। এমন অবস্থায় হঠাৎ বিকট শব্দে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় আমাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছে।”
লাকসাম রেলওয়ে থানার ওসি জসিম উদ্দিন খন্দকার বলেন, হাসানপুরে মালবাহী ট্রেনটি দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী যাত্রীবাহী সোনার বাংলা ট্রেন মালবাহী ট্রেনটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনটির ইঞ্জিনসহ কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
দুর্ঘটনার পর হাসানপুর স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মাহামুদ হাসান ভুঁইয়া সোহাগসহ কাউকেই স্টেশনে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে জানান স্থানীয়রা।
পাশের নাঙ্গলকোট রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ধাক্কা দেওয়ার পর সোনার বাংলা ও মালবাহী ট্রেনের মোট সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
দুর্ঘটনায় অর্ধশতের মতো যাত্রী আহত হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আহতদের স্থানীয় বেসরকারি ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ওসি জসিম বলেন, বেশ কয়েকজন আহত হলেও কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে ছিলেন নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান মেহেবুব। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নিহতের খবর পাওয়া যায়নি। অর্ধশতের মতো যাত্রী আহত হয়েছেন।
আহতদের মধ্যে ঢালুয়ার একটি ফার্মেসিতে প্রায় ২০ জন যাত্রী প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। যাদের জখমের মাত্রা বেশি, তাদের লাকসাম এবং কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ইসি কর্মকর্তারা অক্ষত
চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচন উপলক্ষে বন্দর নগরীতে যাওয়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ১২ জন কর্মকর্তা সোনার বাংলা ট্রেনে ঢাকা ফিরছিলেন।
তারা নিরাপদে রয়েছেন জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোনার বাংলা ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার যাত্রী ছিলেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ১২ জন কর্মকর্তা। ট্রেন দুর্ঘটনাকবলিত হলেও তারা নিরাপদে রয়েছেন। তাদের নিরাপদে ঢাকায় নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
আহসান হাবিব চট্টগ্রাম গেলেও তিনি এই ট্রেনে ফেরেননি।
টেনের যাত্রী ইসি কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাগরিবের নামাজের পরপরই এ ঘটনা ঘটে। কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়। তবে আমরা নিরাপদে রয়েছি।
“চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস ও ফেনী জেলা নির্বাচন অফিস থেকে গাড়ি সরবরাহ করা হবে। তারপরই সড়ক পথে ঢাকা ফিরব আমরা।”
দুই ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
ওই স্থানে ডাবল লাইন থাকায় একটি লাইন বন্ধ থাকলেও ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন হওয়ার কথা না। তবে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেন দুটির বগি কাত হয়ে পড়ায় সেগুলো সরিয়ে পাশের লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে দুই ঘণ্টা সময় লাগে।
রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রামমুখী লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে লাকসাম রেলওয়ে থানার ওসি জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান। লাকসাম রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. ইকবাল হোসেনও একই কথা জানান।
এর আগে নাঙ্গলকোটের স্টেশন মাস্টার জামাল বলেছিলেন, খবর পেয়েই লাকসাম থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে রওনা হয়।
কার ভুলে দুর্ঘটনা, তদন্তে কমিটি
দুর্ঘটনার পর হাসানপুর স্টেশনের কোনো কর্মকর্তাকে না পাওয়ার পর নাঙ্গলকোটের স্টেশন মাস্টার জামাল হোসেন বলেন, “কার ভুলে এই ঘটনা ঘটেছে; সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। আমরা ঘটনার বিস্তারিত পরবর্তীতে জানাতে পারব।”
পরে রেলওয়ের পক্ষ থেকে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান হয়। কমিটিকে আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রেলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান ট্রাফিক কর্মকর্তা প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ভুল সঙ্কেতের কারণে এই দুর্ঘটনা কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কারণ তদন্তের পরই বলা যাবে। এখনও কোনো কিছুই নিশ্চিত নয়। তবে একটি ট্রেন অন্যটিকে ধাক্কা দিয়েছে, এটা জানতে পেরেছি।”