দুই সংসদীয় আসন পুনর্গঠনে কুমিল্লা আওয়ামী লীগে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

কুমিল্লা-১ ও ২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য যথাক্রমে সুবিদ আলী ভুঁইয়া ও সেলিমা আহমাদ মেরী।

আবদুর রহমানকুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2023, 04:27 PM
Updated : 4 June 2023, 04:27 PM

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০টি সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত গেজেটে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা গেছে কুমিল্লার দুটি আসনে।

কুমিল্লা-১ ও ২ আসনের নতুন বিন্যাস নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের মধ্যে বিবাদ ছিল। এমনকি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসি আয়োজিত শুনানিতেও হাতাহাতিতে জড়ান তারা।

গত বৃহস্পতিবার ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত গেজেট শনিবার বিজি প্রেসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

প্রকাশিত গেজেটে দেখা যায়, কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি ও মেঘনা) আসনকে ভেঙে ‘দাউদকান্দি ও তিতাস’ এবং কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) ভেঙে ‘হোমনা ও মেঘনা’ করা হয়েছে।

এতে আসন দুটির সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একটি অংশ খুশি হলেও হতাশ আরেকটি অংশ। দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলা নিয়ে কুমিল্লা-১ সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভুঁইয়া। অন্যদিকে কুমিল্লা-২ (হোমনা ও তিতাস উপজেলা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ মেরী। এরা দুজনেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত।

সেলিমা আহমাদ মেরী বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কারণ এক সময় হোমনা উপজেলা আর মেঘনা উপজেলা একসঙ্গেই ছিল। আর কুমিল্লা-১ ও কুমিল্লা-২ সংসদীয় আসনের চারটি উপজেলাই পাশাপাশি। আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান সবখানেই রয়েছে। তাই নির্বাচনের আগে আসনে ব্যাপক পরিবর্তন এলেও আমি বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।”

এখন দল আরো শক্তিশালী হবে বলেও মনে করেন এই নেতা।আনন্দ প্রকাশ করে হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মজিদ বলেন, “মনে হচ্ছে দীর্ঘদিন পরে হারানো ভাইকে ফিরে পেয়েছি। কারণ হোমনা উপজেলাকে দ্বিখণ্ডিত করে মেঘনা উপজেলা গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সে সময় আমাদেরকে বেকায়দায় ফেলতে হোমনার সঙ্গে মেঘনাকে না রেখে দাউদকান্দির সঙ্গে বিভক্ত করা হয়।”

বিষয়টি নিয়ে র্দীঘদিন মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, এখন মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে আমাদের সকল শ্রেণির মানুষ বিষয়টি নিয়ে খুশি।মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম বলেন, “২০০৮ সালে অন্যায়ভাবে মেঘনাকে কেটে দাউদকান্দির সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এতে নদীবেষ্টিত এই উপজেলাবাসী দুর্ভোগে পড়েন। এই কারণে মেঘনা সব সময় উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমাদের একটি ইউনিয়নকে নারায়ণগঞ্জ এবং বাকি ইউনিয়নগুলোকে মুন্সিগঞ্জ হয়ে চলাচল করতে হয়েছে।”

দীর্ঘদিন ধরে এই পরিবর্তনের জন্য আন্দোলনের পর অবশেষে প্রত্যাশা পূরণ হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে কুমিল্লা-১ আসনের সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভুঁইয়ার মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার টেলিফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে তার ছেলে দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সুমন বলেন, “তিতাসের মানুষের সব কর্মকাণ্ড দাউদকান্দির সঙ্গে। আমি মনে করি দীর্ঘদিন পরে হলেও নির্বাচন কমিশন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে তিতাস ও দাউদকান্দির মানুষ বেশ খুশি। কারণ তিতাস উপজেলা দাউদকান্দিরই অংশ।”

নির্বাচনের আগে আসনে পরিবর্তন আসায় এর কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, “বরং এটা বলতে পারি, দল এখন আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হবে।”তবে দাউদকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহসান হাবীব চৌধুরী বলছেন ভিন্ন কথা।

তিনি বলেন, “কুমিল্লা-১ আসনটি দীর্ঘদিন ধরে দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলা নিয়ে ছিল। দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন ছিল। এখন আসনটি দাউদকান্দি ও তিতাস উপজেলা নিয়ে পুনর্বিন্যস্ত হওয়ায় আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীরা তাদের নেতাকর্মীদের একত্র করতে হিমশিম খাবেন।”তিতাস উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন সরকারও মনে করেন নতুন আসন বিন্যাসে ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।

তিনি বলেন, “তিতাসে ভোটার দেড় লাখ আর দাউদকান্দিতে চার লাখ। নির্বাচনের আগে আসন পুনর্বিন্যাসের কারণে ভোটের ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।”